Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পানিবন্দী লাখো মানুষ জনদুর্ভোগ চরমে

ডুবভাসির শহর চট্টগ্রাম

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

নামে বন্দরনগরী। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। বাস্তবে ডুবভাসির শহর চট্টগ্রাম! আষাঢ় মাসের শেষে হলেও ‘স্বাভাবিক’ বর্ষণ শুরু হতে না হতেই গতকাল (সোমবার) হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশের ব্যাপক এলাকা। রাস্তাঘাট সড়কে বইছে নদী-খালের মতো স্রোত। খাল-ছরা ও নালা-নর্দমা উপচে গিয়ে বালিমাটি, কাদা, আবর্জনায় সয়লাব অলিগলি, বসতঘর, দোকানপাট, গুদাম, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠান, অফিস, ব্যাংক-বীমা। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরো দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়। বঙ্গোপসাগরেও জোরালো রয়েছে।

বর্ষণের সাথে নিয়মিত সামুদ্রিক জোয়ারের পানি নগরীর পশ্চিম ও দক্ষিণে হালিশহর-আগ্রাবাদ-পতেঙ্গা-কাট্টলী এলাকা দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে। নেই শহর রক্ষা বাঁধ। এতে করে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি যোগ হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে এসব এলাকা। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীতে বিশেষ করে উপকূলের কাছাকাছি ও নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দী লাখো মানুষ। তাদের কষ্ট-দুর্ভোগ সীমাহীন। প্রায় সর্বত্র ব্যবসা-বাণিজ্যে জ্বলছে লালবাতি। দমকা হাওয়াসহ মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে সকাল থেকে কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক, ব্যবসায়ী, দিনমজুরসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ভোগান্তি চরমে। রাতভর বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ি, দোকানপাট, আড়ত, গুদামের বালিমাটি, আবর্জনা অপসারণ করতে গিয়েই মানুষজনের হয়রানি ছিল অশেষ।

এদিকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে খাল-নালা উদ্ধার এবং পানিবদ্ধতা নিরসন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন ‘হবে, হচ্ছে’ করতেই চলছে স্রেফ টাইম পাস আর নানামুখী টানাপোড়েন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে পৃথকভাবে গৃহীত এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ‘কাজ শুরু হয়েছে’ বলা হলেও কবে তার অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে এবং চট্টগ্রামবাসী সুফল পাবেন তা কেউই বলতে পারছেন না। এসব সংস্থার মধ্যকার সমন্বয়ের অভাব প্রকট। বর্ষা এলেই চোখে পড়ে তোড়জোড়। মাত্র গেল সপ্তাহে তাও বর্ষার মুখেই শুরু হয় খাল উদ্ধার কার্যক্রম। ঘোর বর্ষায় তাতে কী সুফল মিলবে এ নিয়ে আছে সংশয়। সিডিএ’র এ মেগাপ্রকল্পে বরাদ্দ সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসা বর্ষার মধ্যেই সড়ক রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুড়ি অব্যাহত রেখেছে। এতে ক্ষতবিক্ষত বন্দরনগরীতে অতিবর্ষণে কাদা-মাটি, পানিতে বেহালদশা। খেসারত দিচ্ছে নগরবাসী। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নেই জবাবদিহিতার গরজ। এ নিয়ে চট্টগ্রাম নগরাসীর ক্ষোভ-হতাশা বেড়েই চলেছে।

অব্যাহত বর্ষণের সাথে দমকা হাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি পণ্যভর্তি জাহাজবহরের মালামাল লাইটারিং খালাস কাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। থমকে গেছে বন্দরের মালামাল খালাস ও ডেলিভারি পরিবহন। উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপ তীব্র থাকায় সমুদ্র উত্তাল। চট্টগ্রামসহ সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। অতি বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের সতর্কতা বজায় আছে। ইতোমধ্যে সাড়ে ৩শ’ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে অনেকেই নজর এড়িয়ে ঘুরেফিরে পাহাড়-টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুরা পাহাড় কেটে-খুঁড়ে ফেলার কারণেই পাহাড়গুলো এখন নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

ভারী বর্ষণ ও জোয়ারে নগরীর মুরাদপুর, চকবাজার, বহদ্দারহাট, শোলকবহর, কাতালগঞ্জ, প্রবর্তক, দামপাড়া, ষোলশহর, আগ্রাবাদ, হালিশহর, চান্দগাঁও, মোহরা, বাকলিয়া, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, পতেঙ্গা, কাট্টলী, বায়জিদসহ অনেক এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য পাড়াগুলোতে বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে কোটি কোটি টাকার মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। খাল-ছরা, নালা-নর্দমাগুলো ভরাট ও বেদখলে থাকায় পানি কর্ণফুলী নদী ও সাগরের দিকে নিষ্কাষিত হচ্ছে না। এতে করে অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি, জোয়ারের পানি আটকে আছে। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানিবন্দী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ