Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দেশি মদের দোকানে মাদকের রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি : সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা বাজারে সরকার অনুমোদিত দেশি মদের দোকানে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। নিয়ম-কানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি লাইসেন্সধারী মাদকসেবীদের কাছে দেশি মদ বিক্রির কথা থাকলেও সেখানে স্কুল-কলেজের উঠতি বয়সের যুবকদের কাছে তা বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
জানা গেছে, মদ ব্যবসায়ী রাজেস শ্যাম ঘোষ ও রণজিত ম-ল মাদকের রমরমা ব্যবসা করেই এখন বিলাসবহুল জীবন-যাপন শুরু করেছেন। সরকার অনুমোদিত এই মদের দোকানে নেই কোনো আইন-কানুন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে সেখানে মাদকের আড্ডা। এলাকার ভিআইপি মাদক সেবিদের জন্য ভারতীয় মদের ব্যবস্থাও আছে এই দোকানে। এলাকার উঠতি বয়সি যুব সমাজ, স্কুল-কলেজের ছাত্র, শিক্ষক, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিয়মিত যাতায়াত করে এই মদের দোকানে।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা বাজারে গড়ে ওঠে বৈধ মদের দোকান। সে সময় এই এলাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিল বিরাট আধিপত্য। এখন আর সেই অবস্থা না থাকলে মদের দোকানের রমরমা ব্যবসা কোনো রকম কমেনি। লাইসেন্সধারী কিছু লোকের সেখানে মদ খাওয়ার অনুমতি থাকলেও প্রতিদিন শত শত লোক এই মদের দোকানে যাতায়াত করে থাকেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে এই মদের দোকান। মাদক অফিস ও কিছু অসাধু আইন-শৃখংলা রক্ষাকারী সদস্যদের সাথে দফা-রফা সম্পর্ক থাকার কারণে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। মালিক-কর্মচারীসহ মোট ছয়জন সব সময় দোকানে বসে মদ বিক্রে করে থাকেন। মাদক সেবিরা সেখানে হর-হামেশা মদ্য পান করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাদক সেবি জানান, মদের সঙ্গে পানি মিশিয়ে তারা তা বিক্রি করে থাকেন। খুলনা থেকে নিয়ে আসা মদ আর এই দেশি মদের দোকানের মদ এর মান এক হয় না। অতিরিক্ত মদ্য পান করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটে এখানে অহরহ। এই মদের নেশায় আসক্তি হয়ে পড়েছে স্কুল কলেজের ছাত্র, শিক্ষক ও উঠতি বয়সের যুবসমাজ। হাত বাড়ালেই এই দোকানের আশপাশে পাওয়া যায় ভারতীয় মদ ও গাঁজা।
মাদক বিক্রেতা রাজেশ শ্যাম ঘোষ জানান, যে পরিমাণ মদ প্রয়োজন তারা সেই পরিমাণই মদ খুলনা থেকে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত মদ সেখানে বিক্রি হয়। তিনি আরো জানান, সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তার দোকান খোলা রাখা হয়। ঝাউডাঙ্গা এলাকায় তার দোকানে মোট দুই শতাধিক মাদকসেবী রয়েছে। তারা নিয়মিত তার দোকান থেকে মদ সেবন করে থাকেন। তিনি জানান, সব ধর্মের লোকেরা তার দোন থেকে মদ ক্রয় করে থাকেন। ভারতীয় মদ বিক্রি করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার দোকানের আদলে বাজার এলাকায় চোরাই পথে আসা ভারতীয় মদ বিক্রি করে এক শ্রেণির মাদক ব্যবসায়ীরা। তিনি আরো বলেন, আমরা সব প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মদ বিক্রি করে থাকি। স্থানীয় সাংবাদিক থেকে শুরু করে সবাই বিষয়টি জানে। তবে তিনি মদ কত টাকা দরে লিটার বিক্রি করে তা বলতে রাজি হননি।
সাতক্ষীরা সদর থানার এস আই হিমেল হোসেন জানান, সম্প্রতি তিনি এই ইউনিয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। এরই মধ্যে ঝাউডাঙ্গা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে একজন গাজা ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। তিনি জানান, লাইসেন্সধারীরাই শুধুমাত্র সেখান থেকে মদ ক্রয় করতে পারবে। তিনি আরো জানান, মাদকের বিরুদ্ধে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
সাতক্ষীরা জেলা মাদকদ্রব নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক জিএম নাসিরুজ্জামান জানান, মদের দোকানের সঙ্গে সরকারের রাজস্ব জড়িত। ঝাউডাঙ্গা এলাকায় দুই শতাধিক মাদকসেবী রয়েছে। তারা কি দামে মদ বিক্রি করেন এটা তার জানা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশি মদের দোকানে মাদকের রমরমা বাণিজ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ