Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীপুরে চলছে সরকারি জমি দখলের মহোৎসব

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যেই প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারী খাস জমির জবর দখলের মহোৎসব চলছে। প্রভাবশালীরা দখল করে নিচ্ছে সরকারী পুকুর, বাজার ও রেলের কোটি কোটি টাকার জমি। সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের ৩ একর ৫৮ শতাংশ সরকারী খাস পুকুরটি প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই দখল করে নিয়ে স্থায়ী ভাবে রড-সিমেন্টের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৪৩নং শ্রীপুর মৌজার সি.এস, এস.এ ও আর.এস রেকর্ড অনুযায়ী দেখা যায়, পুকুরটি সরকারী খাস। পর্চা অনুযায়ী কোর্ট অব ওয়ার্ডস এস্টেটের ৪নং খতিয়ান ভুক্ত ১৭৫৫/২২০৫ দাগে ৩ একর ৫৭ শতাংশ জমি যার মধ্যে এস.এ রেকর্ডে কিশোরী মোহন পোদ্দারের নামে ১২৮নং খতিয়ানে ৪৮ শতাংশ রেকর্ডভুক্ত হয়। বাকী ৩.০৯ একর সম্পত্তি সরকারী খাস পুকুর হিসেবে প্রতিবছরেই সরকারী ভাবে লীজ দিয়ে রাজস্ব আদায় হত। স্থানীয় একটি জালিয়াত চক্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বানোয়াট পর্চা দিয়ে ১২৮ খতিয়ান ভুক্ত ১৭৫৫/২২০৫নং দাগে ৪৮ শতাংশ জমির স্থলে টেম্পারিং করে ৩.৪৮ শতাংশ বানিয়ে ওই সরকারী খাস পুকুরটি জবর দখল শুরু করে। সম্প্রতি গ্রীন ভিউ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ঐ সরকারী খাস পুকুরের চারপাশে তড়িঘড়ি করে পাকা সীমানা দেয়াল নির্মান করেছে। ভিন্ন দাগ খতিয়ানের কথিত জমির কাগজ দেখিয়ে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সরকারী খাস পুকুরটি জবর দখল করে নিয়ে অন্য দাগ খতিয়ান উল্লেখ করে সাইনবোর্ড সেঁটে দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি চিহ্নিত দালালচক্র স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতারাতি সরকারী খাস পুকুরটি জবর দখল করে নেয়। এছাড়া উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ১২৮ শতাংশ জমির মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৭৫ ভাগ জমি সরকারী দলের প্রভাব খাটিয়ে জবর দখল করে নিয়ে গেছে। জবর দখলকারীরা জমিদার কালী নারায়ন গুপ্তের কাচারি বাড়ি তথা বর্তমান কাওরাইদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আশপাশে জবর দখল করে গড়ে তুলছে দোকানপাট, স্যানেটারী নির্মাণ কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অবৈধ স্থাপনা। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যেই রাতদিন চলছে সরকারী অফিস প্রাঙ্গনের জমি জবরদখল। এ ব্যাপারে কাওরাইদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, তিনি অনেকটাই জবর দখলকারীদের কাছে অসহায়। বাধা দিলে বা প্রতিবাদ করলে শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। শ্রীপুর পৌর শহরের পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের মূল গেইটের সামনেই প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের সরকারী খাস জমি সরকারী দলের ছত্র ছায়ায় জবর দখল করে নিয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঐ জমিতে রাতারাতি সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেন। শ্রীপুর পৌর ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আলী হোসেন জানান, ওই স্থানে খাস জমি আছে, যা পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন, আমাদের কিছু করার নেই। এদিকে ভাওয়াল গাজীপুর রেলস্টেশন থেকে কাওরাইদ পর্যন্ত ৬টি রেলস্টেশন ও রেল লাইনের দু’ধারে প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারী রেলওয়ের জমি জবর দখল হয়ে গেছে। দখলকারীরা রেলওয়ের কতিপয় ভুমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঐ সমস্ত রেলওয়ের জমিতে রাতারাতি গড়ে তুলছে স্থায়ী-অস্থায়ী বসত বাড়ী, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সরকারী জমি জবর দখল হওয়ার বিষয়ে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্থানীয় সাংবাদিকরা খাসপুকুরসহ বিভিন্ন সরকারী সম্পত্তি জবর দখল হওয়ার বিষয় উত্থাপন করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইন শৃংখলা কমিটির সভাপতি বনানী বিশ্বাস বলেন, এগুলো আইন শৃঙ্খলার বিষয় নয়, তার পরেও খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তাক্ষনিক ভাবে আশ্বাস প্রদান করেন। শ্রীপুরবাসী জবর দখল হওয়া জমি উদ্ধারে সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রীপুরে চলছে সরকারি জমি দখলের মহোৎসব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ