বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দোয়া কবুল হোক, আমরা কে না চাই। দুনিয়া বা আখেরাতের কোনো চাওয়া আমরা আল্লাহর কাছে চেয়ে থাকি। হুজুর আকরাম সা. আমাদের কিছু কৌশল শিক্ষাদান করেছেন, যে মোতাবেক পরম করুণাময় রবের কাছে ফরিয়াদ করলে তিনি ফিরিয়ে দেন না। যদি রাসূল সা.-এর সুন্নত মোতাবেক আমরা আল্লাহর কাছে কিছু চাই, বা রাসূল সা.-এর শেখানো কিছু কৌশল অবলম্বন করি এতেই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমার ফরিয়াদ শোনেন বলে রাসূল সা.-এর ঘোষণা।
দুনিয়াবি বিষয়ে তো আমরা মিলিয়েই দেখে নিতে পারব। আখেরাতের ফলাফল তো আমরা মিলিয়ে দেখতে পারব পরকালে ইনশাআল্লাহ যখন আমাদের প্রতিফল দেয়া হবে, কিছু সুন্নত এখানে আলোচনা করা হলো।
১. একজন সামান্য মানুষের কাছে ৫-৭ বার চাইলে সেও না বলতে লজ্জা পায় আর আমার মহান রব যিনি সবচেয়ে বড় দাতা তার কাছে চাইব আর তিনি ফিরিয়ে দেবেন, এটা হতে পারে না- এমন বিশ্বাস রেখে দোয়া চালিয়ে যাওয়া, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।’ (সহিহ বুখারি- ৭৪০৫, সহিহ মুসলিম- ৪৬৭৫)।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একিন) নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’ (সুনানে তিরমিজি, আলাবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে- ২৪৫ হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন)।
তাই যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করে আল্লাহ তার ওপর প্রভূত কল্যাণ ঢেলে দেন, তাকে উত্তম অনুগ্রহে ভূষিত করেন, উত্তম অনুকম্পা ও দান তার ওপর ছড়িয়ে দেন।
২. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া করা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। সুতরাং তোমরা দোয়া করো। (তিরমিজী ও আহমদ) অর্থাৎ আজান হওয়ার পড় মসজিদে সলাত আরম্ভ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
৩. রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করা : প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশেই দোয়া কবুল করা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে নিচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। (মুসলিম)।
৪. সিয়াম রেখে দোয়া করা, পিতামাতার কাছে দোয়া চাওয়া, কোথাও সফরে গেলে মুসাফির অবস্থায় দোয়া করা বা কোনো মুসাফির থেকে দোয়া চাওয়া : রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তিনটি দোয়া (আল্লাহর কাছ থেকে) ফিরিয়ে দেয়া হয় না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া।’ (বায়হাকি, তিরমিজি)।
৫. অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করা বা তাদের থেকে দোয়া চাওয়া : রাসুল সা. বলেন, কোনো মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য খাস মনে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। সেখানে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন। যখনই ওই ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, তখনই ওই ফেরেশতা ‘আমিন’, ‘আমিন’ বলেন। এবং বলেন, তোমার জন্যও অনুরূপ হোক। (মুসলিম, মিশকাত : ২২২৮, দোয়া অধ্যায়, অধ্যায়-৯)।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আপনি অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্য যা যা দোয়া করবেন; আপনাকেও আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাই তাই দেবেন ইনশাআল্লাহ কিংবা আপনার অনুপস্থিতিতে কেউ আপনার জন্য দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল করে নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।