পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একমত হয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দুই নেতা বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে আর ফেলে রাখা যাবে না।
চীন সফররত শেখ হাসিনার সঙ্গে বেইজিংয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘দিয়াওইয়ুনতাইয়ে’ গতকাল শুক্রবার বিকেলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে জিনপিং এ ঐকমত্য প্রকাশ করেন। পরে পররাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, দুই নেতা (চীনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) একমত হয়েছেন যে এটার ( রোহিঙ্গা সঙ্কট) দ্রæত সমাধান করতে হবে। এটাকে আর আর ফেলে রাখা যাবে না। দুই বছর হয়েছে চুক্তি হয়েছে। সুতরাং ওই ব্যাপারেও কোনো দ্বিমত নেই।
রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মধ্যে এর সমাধান রয়েছেÑ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সমাধান কিভাবে হবে সেটাতেও দ্বিমত নেই যে, এদের নিজেদের দেশে মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। তিনি বলেন, দুই নেতা এটাও সম্মত হয়েছেন যে, দুই দেশের প্রতিনিধিদল একসঙ্গে কাজ করবে। তারাও মিয়ানমারের ওপর তাদের ‘গুডউইল’ ব্যবহার করবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (প্রায় ১১ লাখ) রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে এনভায়রনমেন্টাল (পরিবেশগত) চ্যালেঞ্জ, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, পাচার সমস্যা আছে। দ্রæত যেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে, তার জন্য চাইনিজ সরকার এবং প্রেসিডেন্টের গুডউইল আমরা আশা করছি।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ভূমিকা রাখার বিষয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দিয়েছেন জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, চাইনিজ প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন, চায়না আগেও এ ব্যাপারে মিয়ানমার, বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিল এবং এখনো কাজ করে যাবে। তাদেরও উদ্দেশ্য যেন রোহিঙ্গারা দ্রæত তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে। সেজন্য ওনারা বলেছেন, মিয়ানমারের যে মন্ত্রী আছেন, রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে কাজ করেন, তিনি হয়তো বাংলাদেশ সফরে আসবেন। আশা করা যাচ্ছে হয়তো আরেকটা সম্ভবনা দেখা দেবে।
নির্ধারিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বাইরেও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা নৈশভোজের টেবিলেও গড়িয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
শহীদুল হক জানান, শেখ হাসিনা আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছেনÑ এই যে রোহিঙ্গারা যেতে চায় না। তাদের মনের ভেতর একটা ভীতি আছে যে, তারা ফিরে গেলে আবার হয়তো তাদের ওপর অত্যাচার হতে পারে। এ বিষয়ে যেন চীন তার গুডউইল ব্যবহার করে। সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রেসিডেন্টের জবাব তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শি জিনপিং বলেছেনÑ যেহেতু এটা একটা আন্তর্জাতিক অ্যাটেনশনের (মনোযোগ) মধ্যে হচ্ছে সুতরাং এই ধরনের রিপিটেশন (পুনরাবৃত্তি) হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তিনি বলেছেন তাদের পক্ষে যতটা সম্ভব তারা চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেছেন, চীনের কাছে মিয়ানমার-বাংলাদেশ দুই দেশই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কেউ কম, কেউ বেশি নয়। সমান বন্ধু। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন দু’জনেরই স্বার্থ দেখবে। এটা নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে চীনের সিপিসির যোগাযোগ প্রধানের সাক্ষাৎ
এর আগে বেইজিং সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সং তাও। গতকাল শুক্রবার বেইজিংয়ে রাষ্ট্রীয় একটি অতিথি ভবনে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে সং তাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, এতো দ্রæত এমন উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন বিশ্বের আর কোনো দেশে হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী চীনকে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি জানান, বাংলাদেশ ও চীনের লক্ষ্য অভিন্ন এবং সেটা হলো দারিদ্র্য দূর করা। আর সে লক্ষ্যে তিনি নিরলস কাজ করছেন বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।
বৈঠকে শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর লেখা ডায়েরি অবলম্বনে ‘নিউ চায়না’ শিরোনামে একটি বই শিগগির প্রকাশ করা হবে। সং তাও বইটি চীনা ভাষায় প্রকাশের আগ্রহের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খাঁন। এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী চীন সরকার ও সিপিসির কার্যালয় ভবন ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’ প্রাঙ্গণে চীনা বিপ্লবের বীরদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
চীনের বীরদের প্রতি শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা
এ দিকে, চীনের জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল চারটার দিকে প্রধানমন্ত্রী বেইজিংয়ের তিয়েনআন মেন স্কয়ারে পৌঁছে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শুদ্ধা নিবেদনের শুরুতেই দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। এরপরে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রমুখ।
পাঁচ দিনের সরকারি সফরে গত সোমবার চীন গেছেন শেখ হাসিনা। ডালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের বার্ষিক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বুধবার বেইজিং যান তিনি।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালে বেইজিংয়ের দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাইজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা। বেইজিং সফরে এই গেস্ট হাউজেই অবস্থান করছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেওয়া শি জিনপিংয়ের নৈশভোজেও অংশ নেন শেখ হাসিনা।
এর আগে গত বুধবার গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নয়টি চুক্তি, সমঝোতা ও লেটার অব এক্সচেঞ্জে সই করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।