প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
ডিলান হাসান : গত কিছুদিন ধরিয়া চলচ্চিত্রের একটি ঘটনা গভীর মনোযোগের সহিত পর্যবেক্ষণ করিতেছিলাম। ঘটনাটি আর কিছু নহে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির বিবাহ সংক্রান্ত। মাহি ‘নায়িকা’ হইয়া উঠিতে পারিয়াছে কিনা, তা বিশ্লেষণ সাপেক্ষ। তবে তার যে নায়িকা হইয়া উঠিবার যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রহিয়াছিল, তাতে সন্দেহের অবকাশ নাই। আমাদের চলচ্চিত্রের এখন যে প্রবণতা দাঁড়াইয়াছে, তা হলো নতুন নায়িকা হওয়ার প্রত্যাশা লইয়া কোনো তরুণীর আগমন ঘটিলে তাহার প্রতিষ্ঠা পাইবার আগেই উহাকে লইয়া নাচানাচি শুরু হইয়া যায়। নায়িকা হইবার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইবার আগেই উহাকে শীর্ষ নায়িকা আখ্যায়িত করিয়া একদল লোক এন্তার নৃত্য করিতে থাকে। এমনকি উক্ত নায়িকার কোনো সিনেমা ব্যবসা সফল এবং দর্শকের ব্যাপক গ্রহণযোগ্য পাইবার আগেই ‘সুপার স্টার’ বলিয়া সোরগোল বাধাইয়া দেয়। বলার অবকাশ নাই, যেসব নায়িকা প্রত্যাশী তরুণীর সম্ভাবনা রহিয়াছে, নিশ্চয়ই তাহারা একদিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ‘নায়িকা’ হইবেন। সত্তর-আশির দশকে যাইবার প্রয়োজন নাই। আমরা যদি, নব্বই দশকের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখিব মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমার মতো নায়িকাদের ‘নায়িকা’ হইয়া উঠিবার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করিতে হইয়াছে। তাহারা ‘নায়িকা’ হইতেই আসিয়াছিলেন। ‘নায়িকা’ তকমা লাগাইতে আসেন নাই। কিংবা নায়িকা তকমা লাগাইয়া লক্ষ্যচ্যুত হইয়া কারো সাথে প্রেমে মজিয়াও উঠেন নাই। তাহাদের লইয়া প্রেম-পরিণয়ের অনেক কথা শোনা গিয়াছিল। উহা নায়ক-নায়িকাদের চিরায়িত অলঙ্কার স্বরূপ ‘স্কেন্ডাল’ হইয়াই ছিল। হয়তো উহারা প্রেম করিয়াছিলেন, তবে তাহাদের যে লক্ষ্য ‘নায়িকা’ হওয়া, সেই অবিচল লক্ষ্য থেকে কিঞ্চিৎ মাত্র সরিয়া যান নাই। ‘নায়িকা’ হইবার আগেই সব সম্ভাবনা বিনাশ করিয়া টুক করিয়া বিবাহ করিয়া ফেলেন নাই। এসব প্রসঙ্গ এখানে অবতীর্ণ করিবার কারণ হইল, এখন যাহারা নায়িকা হইবার বাসনা নিয়া সিনেমা জগতে পা বাড়াইতে আসেন, তাহারা নায়িকা হওয়াকে একটা ‘ফ্যান্টাসি’ বা ‘ফ্যাশন’-এ রূপান্তর করিয়াছেন। সিনেমার মহরত করিয়াই মহামূল্যবান ‘নায়িকা’ বনিয়া যান। কেহ মানিল কি মানিল না, তাহা পরখ করিয়া দেখাইবার প্রয়োজন বোধ করেন না। পরীক্ষা দেওয়ার আগেই নিজেদের ‘পাস’ বলিয়া বেড়াইতে থাকেন। এমন অনেক ঘটনাই রহিয়াছে যে, সিনেমার মহরত হইয়াছে, সিনেমা আর তৈরি হয় নাই। আবার শূটিং শুরু হইলেও কিয়দংশ শেষ হইয়া থামিয়া গিয়াছে। উহার আর আলোর মুখ দেখিবার সুযোগ হয় নাই। কখনো হইবেও না। কিন্তু যে তরুণীর গায়ে নায়িকা তকমা আঁটিয়া দেওয়া হইল, উহা পরবর্তীতে আর সুযোগ না পাইলেও নিজেকে নায়িকা বলিয়া বেড়াইতে থাকে। এতে উহাদের অন্য উদ্দেশ্যর কথাও সিনেমা জগতের মানুষের অজানা নহে। আবার কারো কারো লক্ষ্য থাকে নায়িকা হইবার বাসনা লইয়া ধনকুবের জাতীয় প্রযোজককে বিবাহ করা। এরকম ঘটনা এখন অহরহ ঘটিয়া চলিয়াছে। অবস্থা দেখিয়া ভ্রম হইবার উপায় নাই যে, এইসব নায়িকা হওয়ার প্রত্যাশী তরুণীরা সিনেমা জগতটাকে যেন ‘বিবাহের কাজীর দরবার’ বানাইয়া ফেলিতেছি। তাহাদের ‘নায়িকা’ হওয়ার বিন্দুমাত্র লক্ষ্য নাই। নায়িকা তকমা লাগাইয়া অর্থ-কড়ি উপার্জনই মূল লক্ষ্য হইয়া পড়িয়াছে। এইভাবে এই শ্রেণীর কহিতব্য নায়িকারা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে শনির দশা লাগাইয়া বদনাম করিয়া ফেলিতেছে। এই বার্তা দিতেছে, সিনেমা জগতে নায়িকা প্রত্যাশী তরুণীরা বোধ হয়, এক প্রকার ব্যবসা করিতে আসিতেছে। এ প্রসঙ্গে আরও অনেক কথা বলার অবকাশ রহিয়াছে। স্বল্প পরিসরে উহা বলিয়া শেষ করা যাইবে না। পরবর্তীতে কোনো এক সময় আলোচনা করা যাইবে। এইবার মূল প্রসঙ্গে ফিরিয়া আসি। যেমন করিয়াই হোক, স্বল্প সময়ে মাহিয়া মাহি সিনেমা জগতে আলোচিত এবং সমালোচিত হইয়াছেন। দুয়েকটি সিনেমা দিয়া সম্ভাবনার স্বাক্ষরও রাখিয়াছিলেন। তবে যতটা না সিনেমা দিয়া আলোচিত হইয়াছিলেন, তাহার চাইতেও বেশি সমালোচিত হইয়াছিলেন তাহার নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকা- দিয়া। যে প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে তাহার আবির্ভাব হইয়াছিল, উহার সাথে গোল বাধাইয়া অভিমানে নাকি সিনেমা ছাড়িয়া দিতে চাহিয়াছিলেন। ভাবিয়াছিলেন অভিমানে কাজ হইবে। পরবর্তীতে দেখা গেল উহা কোনো কাজে লাগে নাই। তাই আবার চলচ্চিত্রে ফিরিয়া আসেন। টুকটাক কিছু কাজ করিতে থাকেন। উহাই ছিল তার ‘নায়িকা’ হওয়ার সঠিক পন্থা। কিন্তু ‘নায়িকা’ হইতে যে ধৈর্য প্রয়োজন ছিল, মাহি তাহা হারাইয়া অনেকটা এলোমেলো হইয়া পড়েন। শেষ পর্যন্ত সব সম্ভাবনা কর্পূরের মতো উড়াইয়া দিয়া হুট করিয়াই গত ২৫ মে বিবাহ করিয়া বসেন। তখন থেকেই পর্যবেক্ষণ করিতেছিলাম, কী হয়! কারণ অনেক আগেই গুঞ্জন ছড়াইয়াছিল, তিনি আগে বিবাহ করিয়াছেন। সিনেমার এসব গুঞ্জনের মূল্য রহিয়াছে। ‘নায়িকা’দের নিয়া প্রেম-বিবাহের গুঞ্জন ছড়াইবে, ইহাই স্বাভাবিক। যে নায়িকার এমন রোমান্টিক গুঞ্জন নাই, উহার নায়িকা হওয়ার কোনো মূল্য নাই বলিয়াই সিনেমা জগতে বিবেচনা করা হইয়া থাকে। কাজেই প্রেম-বিয়ের গুঞ্জন বা স্ক্যান্ডাল যুগে যুগে সিনেমা জগতে নায়ক-নায়িকাদের অলঙ্কার বলিয়াই গণ্য হইয়া আসিয়াছে। যাহাই হোক, মাহির হুট করিয়া বিবাহ করা তার ভক্তকুলের জন্য কিঞ্চিত আঘাত স্বরূপই বটে। নির্মাতাদের জন্য তো হতাশার অতল গহ্বরে হারাইয়া যাইবার মতো। ইতোমধ্যে অনেকে হতাশাও প্রকাশ করিয়াছেন। তবে অস্বীকার করিবার উপায় নাই, কোন নায়িকা বিবাহ করিবে কি করিবে না উহা একান্তই তাহার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে একজন যখন নায়িকা হইয়া উঠিবার সম্ভাবনা জাগাইয়া তুলিবার মাধ্য পথে থাকে, তাহার লাইনচ্যুত হইয়া পড়াতে নিরাশ হইবার যথেষ্ট কারণ লুকাইয়া থাকে। উক্ত নায়িকা তখন আর নিজের হইয়া থাকেন না, তিনি সিনেমা জগতের সম্পদ হইয়া উঠিতে থাকেন। তাহাকে লইয়া যাহারা সিনেমা বানাইবেন, তাহাদের স্বপ্নের দিগন্তও প্রসারিত হইতে থাকে। মাহি উহা উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন বলিয়া মনে হয় নাই। বিবাহ করা অন্যায় কিছু নহে। তবে সিনেমা জগতে সম্ভাবনার আলো জ্বালাইয়া দপ্ করিয়া নিভিয়া পড়া অতীব দুঃখের বিষয়। সিনেমা জগতের প্রচলিত মনস্তাত্ত্বিক রীতি হইল বিবাহিত নায়ক-নায়িকাদের সাধারণত দর্শক গ্রহণ করেন না। কারণ দর্শক তাহার পছন্দের নায়ক-নায়িকা নিয়া রোমান্টিক স্বপ্ন দেখিতে থাকে। এই স্বপ্নে নায়ক-নায়িকার স্ত্রী বা স্বামী নামক তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত হইয়া ব্যাঘাত ঘটাক তাহা তাহারা গ্রহণ করিতে প্রস্তুত থাকেন না। যাহাই হোক, মাহির বিবাহ বেশ ধুমধামের সঙ্গেই সম্পন্ন হইয়াছে। যে পর্যবেক্ষণের কথা বলিতেছিলাম, তাহা হইল এই বিবাহতে না আবার গোল বাধিয়া যায়। পর্যবেক্ষণ ভুল হয় নাই। মাহি শ্বশুরবাড়িতে থিতু হইতে না হইতেই কোথা থেকে শাওন নামক এক তরুণ দাবী করিয়া বসিল, মাহি তাহার বিবাহিত স্ত্রী। সে উহার প্রমাণ স্বরূপ ফেসবুকে মাহির সহিত কিছু অন্তরঙ্গ ছবি আপলোড করিয়া দেয়। উহাতে মাহি চরম ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে। সুখের ঘরে শনির দশা লাগাইলে, তাতে যে কেহর ক্ষিপ্ত হইয়া উঠাই স্বাভাবিক। মাহিও ক্ষিপ্ত হইয়াছেন। তিনি এই শনি দূর করিবার টোটকা হিসাবে মামলার হুমকি, অতঃপর মামলা করিয়া বসেন। শাওনকে পুলিশ গ্রেফতার করিয়া দুই দিনের রিামান্ডও নেয়। প্যাদানি খাইয়াও শাওন তাহার দাবী হইতে একচুল নড়েন নাই। বরং কোর্টে বিবাহের কাবিননামা দাখিল করিয়া দিয়াছেন। কোর্ট শাওনকে কারাগারে পাঠাইয়াছে। তাহাতে শাওন দুঃখ পাইয়াছে বলিয়া মনে হইবার কারণ দেখা যাইতেছে না। ভীরুদের মতো দুঃখ সহিবার শক্তি তাহার না থাকিলে নিশ্চয়ই মাহিকে স্ত্রী বলিয়া দাবী করিত না। প্রেমের জন্য যুগে যুগে কত প্রেমিক-প্রেমিকাই না আত্মাহুতি দিয়াছে। আর এ-তো সামান্য জেল খাটা। যাহাই হোক, শাওনের আইনজীবী কোর্টে কাবিন নামা দাখিল করিয়া বলিয়াছে এক বছর আগে ২০১৫ সালের ১৫ মে পারিবারিকভাবেই মাহির সাথে শাওনের বিবাহ হইয়াছে। আইনজীবী এই যুক্তিও তুলিয়া ধরিয়াছেন, মুসলিম আইন অনুযায়ী স্বামী বর্তমান থাকা অবস্থায় স্ত্রী দ্বিতীয় বিবাহ করিতে পারেন না। যদি স্বামী থাকা অবস্থায় স্ত্রী বিবাহ করে তাহা হইলে তাহা ফৌজদারী অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে। এখন দেখা যাইতেছে, মাহি তাহার নতুন সংসারের শনির দশা কাটাইতে গিয়া উল্টা শনির দশাকে আরও গাঢ়ো করিয়া তুলিয়াছেন। রাহুর গ্রাসকে অধিক প্রশস্ত করিয়া তুলিয়াছেন। ইহা কি ধর্মের কল বাতাসে নড়ে এমন হইয়া পড়িল কিনা, তাহা এখনই বলা যাইতেছে না। তবে যদি প্রমাণ হইয়া পড়ে, শাওনের সহিত মাহির সত্য সত্যই বিবাহ হইয়াছিল, তাহা হইলে মাহি কি করিবেন? তাহার নতুন স্বামীর কি হইবে? যুক্তির খাতিরে যদি ধরিয়া নেওয়া হয়, শাওনের সাথে বোঝাপড়া করিয়া মাহি বিচ্ছেদ ঘটাইবার উদ্যোগ লইবেন, তাহা হইলেও কি তিনি বিবেকের কাছে সিদ্ধ হইবেন? হইবেন না। এতে তিনি দুইটি অন্যায্য কাজের জন্য দায়ী হইয়া থকিবেন। এক. শাওনের সাথে বিচ্ছেদ না ঘটাইয়া আরেক জনকে বিবাহ করা। দুই. নতুন যাহাকে বিবাহ করিয়াছেন তাহার এবং তাহার পরিবারের সাথে অনৈতিক কর্ম সম্পাদন করা। অন্যদিকে, তাহার বর্তমান স্বামী যদি মাহির আগের বিবাহের কথা জানিয়া এবং মানিয়া থাকে, তাহা হইলেও উহারা অনৈতিক কর্মের সমর্থক হিসেবে গণ্য হইবেন। ইহাতে কি মাহির নতুন সংসারে শনির দশা কাটিবে? বিবাহ নিয়ে এহেন লুকোচুরি না করিয়া মাহি যদি ক্যারিয়ার নিয়া পরিকল্পনা ও উহা অনুযায়ী কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করিতেন, তাহা হইলে হয়তো তাহাকে এই শনির দশায় পড়িতে হইত না। মাহির এই ঘটনা থেকে নায়িকা হওয়ার প্রত্যাশী তরুণীরা শিক্ষা লাভ করিতে পারিবেন বলিয়া আমরা আশা কিরয়া থাকিব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।