বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকে না। -শুআবুল ঈমান : ২৩৯৫।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর এ আমল করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। আয়াতুল কুরসি আমরা অনেকেই মুখস্থ পারি। যারা পারি না, তারাও মুখস্থ করে নিতে পারি। আয়াতুল কুরসি কোরআন শরীফের তৃতীয় পারার প্রথম পৃষ্ঠার একটি আয়াত। সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতটিই হলো আয়াতুল কুরসি। এ আয়াত তেলাওয়াত করতে বেশি হলে এক মিনিট সময় লাগতে পারে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচ মিনিট। দৈনিক ২৪ ঘণ্টা সময় থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করলে এক মহাপুরস্কার লাভ করা সম্ভব হবে।
যেকোনো মুসলমান নারী বা পুরুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর এ আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করলে মৃত্যুবরণ করার সঙ্গে সঙ্গেই জান্নাত লাভ করবে। এ হাদিসের ওপর আমলকারী ব্যক্তির জান্নাত লাভে বাধা কেবল মৃত্যু। এ কথা স্পষ্ট, আল্লাহ তায়ালা যে ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর জান্নাত দেবেন, তাকে অবশ্যই মৃত্যুর সময় ঈমান নসিব করবেন।
আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াতের আরও ফায়দা রয়েছে- রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার বালা-মসিবত থেকে হেফাজত করেন। সহিহ বুখারী ও মুসলিমসহ হাদিসের অন্যান্য কিতাবে এ প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসের বর্ণনাকারী হজরত আবু হুরায়রা রা. এবং হাদিসে বর্ণিত ঘটনাটিও তার সঙ্গেই সংঘটিত হয়।
ঘটনাটি হলো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হজরত আবু হুরায়রা রা.-কে জাকাতের সম্পদ দেখাশোনা ও পাহারা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত করলেন। তিনি মুসলমানদের থেকে উসুল করা জাকাতের সম্পদ দেখাশোনা করতেন। এক রাতে লক্ষ করলেন, এক বৃদ্ধ সেখান থেকে খেজুর তুলে খাচ্ছে। হজরত আবু হুরায়রা রা. তাকে পাকড়াও করলেন। লোকটি ছোটার জন্য কাকতি-মিনতি শুরু করল।
আবু হুরায়রা রা. বললেন, তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাবো।
লোকটি বলল, আমি ক্ষুধার্ত ও অসহায়। আমার পরিবার-পরিজন আছে। দারিদ্র্যের মাঝে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।
লোকটির কথায় হজরত আবু হুরায়রা রা.-এর মন গলে গেল। তিনি লোকটিকে ছেড়ে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘটনা জানিয়ে দিয়েছিলেন। সকালে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, আবু হুরায়রা, তোমার গতকালের বন্দীর কী খবর? হজরত আবু হুরায়রা রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, লোকটি নিজের ও পরিবারের অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যের অভিযোগ করেছে। এ জন্য আমার দয়া হয়। তাই তাকে ছেড়ে দিই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবারো আসবে।
আবু হুরায়রা রা. রাসূলের কথা শুনে সে লোকটির অপেক্ষায় রইলেন। সে আবার এলো। আগের মতোই খেজুর খেতে লাগল। আবু হুরায়রা রা. পাকড়াও করলেন। সে আগের মতোই কাকতি-মিনতি করতে থাকে এবং নিজের ও পরিবারের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে। এবারো তিনি সদয় হয়ে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা, তোমার বন্দীর খবর কী?
তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, সে কাকতি-মিনতি করেছে বিধায় তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবারো বললেন, সে আবার আসবে।
তৃতীয় রাতে চোর আবার এলো। এবার আবু হুরায়রা রা. তাকে খুব ভালোভাবে পাকড়াও করলেন। বললেন, এবার তোমাকে অবশ্যই রাসূলের দরবারে হাজির করব। তোমার কথামতো তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি। তুমিও বারবার ফিরে আসছো। এবার আর ছাড়া পাবে না।
অবস্থা বেগতিক দেখে বলল, আমাকে এবার ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে একটি আমল শিক্ষা দেবো, আপনার অনেক ফায়দা হবে। আবু হুরায়রা রা. জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী?
লোকটি বলল, রাতে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমাবেন। এ আয়াত তেলাওয়াত করে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালাই হবেন আপনার হেফাজতকারী। আপনার কাছে কোনো শয়তানও আসতে পারবে না।
পরদিন সকালে নবীজী আবু হুরায়রা রা.-কে রাতের বন্দী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, গত রাতে সে আমাকে একটি আমল শিখেয়েছে তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
-কী আমল?
-সে আমাকে রাতে শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমাতে বলেছে। এতে আল্লাহ তায়ালা আমাকে সকাল পর্যন্ত হেফাজত করবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, সে তোমাকে সত্যই বলেছে, যদিও সে মহা মিথ্যাবাদী।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা, তুমি কি জানো, তিন রাত ধরে তোমার সঙ্গে কার সাক্ষাৎ হচ্ছে?
-না, তা তো জানি না!
-সে ছিল শয়তান।-সহিহ বুখারী : ২৩১১।
এ ঘটনা থেকে জানা গেল, রাতে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালা সকল বালা-মসিবত থেকে হেফাজত করবেন। চোর-ডাকাত থেকে রক্ষা করবেন। শয়তান ও দুষ্ট জিনের ক্ষতি থেকেও নিরাপদ রাখবেন। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে এ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।