বর্ষপূর্তির কবিতা
ভালোবাসো মন খুলেআ ল ম শা ম সবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে চালবর্ষার বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ঘরভাদ্রের বন্যায় ভেসে গেছে বাড়ি।তুমি শুধু একা।ভয় শংকায় হারিয়ে গেছে
আবুল কাসেম হায়দার
সাতটি মেগা প্রকল্প বাংলাদেশকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বর্তমান সরকার তার বিগত শাসন কাল থেকে একে একে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন। কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ বেশ এগিয়ে চলেছে। বিগত মন্ত্রীসভায় আরও কিছু মেগা উন্নয়ন প্রকল্প সংযোজন করা হয়েছে। এই সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্ল¬বিক পরিবর্তন আসবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে এই জাতীয় মেগা প্রকল্প ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। আগামীতে সরকার হয়তো আরো কিছু মেগা প্রকল্প উন্নয়নের স্বার্থে হাতে নেবেন। মেগা প্রকল্পসমূহের ক্ষুদ্র বিবরণ এই নিবন্ধে দেয়ার চেষ্টা করব।
প্রকল্পটগুলো হচ্ছে : (১) পদ্মা সেতু প্রকল্প (২) রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রজেক্ট (৩) পায়রা সমুদ্র বন্দর (৪) কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প (৫) রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প (৬) মেট্রো রেল (৭) এলএনজি টারমিনাল। (৮) ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে আরো একটি অতিরিক্ত পদ্মা সেতু রেল শিল্প এজেন্ট নামে আরো একটি প্রকল্পের অনুমোদন ম্ত্রীসভা গ্রহণ করেছেন। এই প্রকল্পের জন্য ৩৪ হাজার ৯ শত ৮৮ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
(৯) নবম প্রকল্প হিসেবে সরকার সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। সরকারের এই সকল উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প : ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। জাজিরা এপ্রোস রোডের কাজ প্রায় ৬৫ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে। মাওয়া এপ্রোস রোডের কাজ শেষ হয়েছে ৭৩ শতাংশ। প্রকল্পের খরচ ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশকি ৭ বিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্প শেষ করার টার্গেট করা হয়েছে ২০১৮ সাল।
মেট্রো রেল : যোগাযোগমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন জুন মাসের মধ্যে মেট্রো রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্প স্থাপনের চুক্তি ইতোমধ্যে হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে উত্তরার উত্তরখান থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সমাপ্ত হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে ডিসেম্বর ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত শেষ হবে। মেট্রো রেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রূপপুর নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ প্রকল্প : এই প্রকল্পের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। দুইটি ইউনিট ২৪০০ মেগাওয়াট প্রাথমিক প্রস্তুতি ২০১৬ সালের মধ্যে শেষ হবে। রামিয়ার সঙ্গে মে ’১৬ মাসের মধ্যে আর্থিক চুক্তি সম্পন্ন হবে। কন্সট্রাকশসন অব ঠঠঊজ ১২০০ রেকটর ২০১৭ সালে শুরু হবে। এই প্রকল্প উৎপাদনে যাওয়ার টারগেট ঠিক করা হয়েছে ২০২২ সালকে। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মহেশখালী খঘএ টার্মিনাল প্রকল্প : ইতোমধ্যে সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন মহেশখালীতে ভাসমান খঘএ টার্মিনাল প্রকল্প স্থাপনের জন্য। এই প্রকল্প দুই বছরের মধ্যে নির্মাণের টার্গেট করা হয়েছে। সরকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক ৫০০---- গ্যাস কাতার থেকে আমদানির ব্যবস্থা করছেন। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ মার্কিন ডলার।
পায়রাবন্দ গভীর সমুদ্র বন্দর : এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই রিপোর্ট ইতোমধ্যে দাখিল করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালে শুরু করার টার্গেট রয়েছে। এই প্রকল্প শেষ হবে ২০২৩ সালের মধ্যে চীন, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, ভারত এই প্রকল্পের জন্য অর্থায়নের প্রস্তাব দাখিল করেছে। এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ১৫ বিলিয়নের অধিক মার্কিন ডলার।
রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : এই প্রকল্পের অনুমোদনের পর ভারতীয় এক্সিম ব্যাঙ্ক অর্থায়ন করবে। ভারতীয় কোম্পানি বেল (ইযবষ) এই প্রকল্পের কাজ পেয়েছে। আগামি ৩০ মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ২০১৮ সালে এই প্রকল্প উৎপাদনে যাবে। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রকল্প থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : মহেশখালীতে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ৯০ শতাংশ বাউন্ডারী ওয়াল দেয়া প্রায় শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালের মধ্যে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাবে। সরকারি কয়লা কন্সট্রাকশান পাওয়ার কোম্পানি নামে এই প্রকল্পের কাজ চলেছে। এই প্রকল্প থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ : বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ধীরে হলেও এগিয়ে চলেছে। নানা বাধা জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতার সত্ত্বেও আমাদের জিডিপি অর্জনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিগত অর্থ বছরে জিডিপি অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। আগামি অর্থ বছরে জিডিপি টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ব সংস্থা বলেছে জিডিপি টার্গেট পূরণ না হলেও ৬ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পরে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১৬৩ কোটি ১০ লক্ষ ডলার। বিগত অর্থ বছরে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ ছিল ১৩৪ কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার। বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। কিন্তু কেন? বাংলাদেশে বিদেশীরা বিনিয়োগ করতে দুর্বার চিন্তা করে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু। বিগত ‘১২ মে ’১৬ ঢাকায় বাংলাদেশ ইইউ বিজনেস কাউন্সিলের বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে ইইউ রাষ্ট্রদূত উক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ না আসার মূল কারণ হচ্ছে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাজনৈতিক শান্তি না থাকার কারণে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে এখন নতুন করে যোগ হয়েছে গুম, হত্যাকা-, জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসবাদ। অন্য দিকে আসল সমস্যা গ্যাস বিদ্যুতের সংকট, সীমিত অবকাঠামো, বিনিয়োগ বোর্ডের আইন, শুল্ক আইন, বিনিয়োগে সরকারি অনুমোদনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রাতিষ্ঠানিক বাধা, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম বিনিয়োগ বৃদ্ধির মূল বাধাসমূহ।
ইইউ রাষ্ট্রদূত চমৎকারভাবে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি না হওয়ার কারণসমূহ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন। এই সকল বিষয় সকলের জন্য, বিশেষ করে সরকারের নীতি নির্ধারকদের জন্য খুবই জরুরি। রাষ্ট্রদূত জানান, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশে অনেক সম্পদ রয়েছে এমন কথা বলা হচ্ছে। এর পরেও বিদেশি বিনিয়োগ এ দেশে বড় আকারে আসছে না। যে সব বিদেশি কোম্পানি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ রয়েছে, তারা বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশার তুলনায় কমে গেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ভাল, তথ্য উদাত্ত এ সত্য প্রমাণ করছে না। ওষুধ তৈরিতে ডব্লি-উটিও নীতিমালা যথাযথ অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইইউ রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে বিনিয়োগ স্থবিরতার বিষয় তুলে ধরে বলেন, সব সময় রাজনৈতিক অনিশ্চয়ত রয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে জঙ্গিবাদ, যা এখন অনেক হামলার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। বিদেশিসহ কিছু নৃশংস হত্যাকা- হয়েছে। এগুলোর কোন ব্যাখ্যা নেই, এখনও যার শাস্তি হয়নি। এ ছাড়া রয়েছে জ্বালানি ঘাটতি ও অবকাঠামোগত সমস্যা। বিদেশিরা এই সকল কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে দুবার চিন্তা করে।
অসফলতায় কিছু খাত : আমাদের স্বাধীনতার ৪৪ বছর চলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের অর্জন অনেক অনেক। বছর হিসেবে অর্জন আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। নানা কারণে আমরা এগিয়ে যেতে পারিনি। কিন্তু বিগত ৮ বছরে বর্তমান সরকারের অর্জনকে অনেক অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলার ইঙ্গিত বহন করে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন : আমাদের বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন এসেছে। বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। দেশে বিদ্যুতের সুবিধা রয়েছে ৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুত গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে ৬ হাজার ৬১৫ মেগাওয়াট। আগামি ২০২১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। সরকার আগামি ২০২১ সাল পর্যন্ত আরও ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা অবশ্যই প্রশংসা করার মত। কিন্তু তারপরও বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এখনও প্রতিদিন লোডশেডিং দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণের ব্যবস্থা করতে হয়। এখনও এমন গ্রাম রয়েছে যেখানে মানুষ বিদ্যুতের তাপ গ্রহণ কার সুযোগ পায় নাই।
কৃষি খাতে সফলতা : ১৯৭১ সালে আমরা ছিলাম সাড়ে ৭ কোটি মানুষ। এখন আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটির অধিক। এখন আমরা মোটা চাল প্রায় শতভাগ প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ।
শিক্ষা খাতে কিছুটা আলোর ছটা : অনেক বিলম্ব হলেও আমরা এখন সংসদ কর্তৃক পাসকৃত শিক্ষা নীতি পেয়েছি। উক্ত শিক্ষানীতির আলোকে সরকার শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। শিক্ষা নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা এখনও শতভাগ শিক্ষা দানে সফলতা অর্জন করতে পারিনি। বর্তমানে দেশে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। আরও ৪০ শতাংশ মানুষ এখনও অক্ষরজ্ঞান অর্জন করতে পারেনি। শিক্ষার বৈষম্য দূর করার জন্য সরকার চেষ্টা করছেন। দেশে এখনও চার ভাগে আমাদের শিক্ষা দান চলেছে। তাই পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় শিক্ষা নীতি ভূমিকা রাখতে পারেনি।
শিক্ষা ক্ষেত্রে পাসের হার বেড়েছে। জিপিএ অর্জনের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু ক্রমাগত মান আমরা এখনও পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে গুণগত মানে আমরা পিছিয়ে আছি। উচ্চ শিক্ষা জন্য সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়ে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। তবে শিক্ষকের স্বল্পতা ও মান সম্মত শিক্ষকের অভাবে উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে তেমন অবদান রাখতে পারছে না।
আইটি ক্ষেত্রে সফলতা : বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে বিগত ৮ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে মোবাইল ও কম্পিউটার সেবাদানের লক্ষে কাজ করছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে আইটি কেন্দ্র স্থাপন করে আইটি সেবা সাধারণ মানুষের দুয়ারে পৌঁছতে সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা চালুর চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতি কলেজে কম্পিউটার অর্ন্তরভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে অইটি ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। কম্পিউটার বাণিজ্য ও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে জেলায় জেলায় কম্পিউটার সিটি বা বাজার গড়ে উঠেছে। সরকার আইটি সিটি গড়ে তোলার জন্য কাজ করছেন। স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। গাজিপুর জেলায় কালিয়া কৈ আটটি সিটি স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সফটওয়্যার রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। প্রতি বছর এই খাতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পদ্মা সেতু স্থাপনের উদ্যোগ : পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটে গিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। পথের মাঝে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করে। পরবর্তীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করে। কাজ এগিয়ে চলছে। আমাদের রাজস্ব আয় থেকে পদ্মা সেতু হতে চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছেন। এই সেতু নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত সরকারের বড় সাহসী পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে সরকার পদ্মা সেতুতে রেল স্থাপনের জন্য বাজেট অনুমোদন দিয়েছেন। রেলসহ পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু হয়ে গিয়েছে। পদ্মা সেতু এলাকায় জমির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রচুর। বেসরকারি অনেক সংস্থা পদ্মা সেতুকে টার্গেট করে নানা অর্থনৈতিক প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আবাসিক খাতসহ দেশের শিল্প স্থাপনের জন্য ও বিনিয়োগকারীগণ চিন্তা করতে শুরু করেছেন। এখানেই সরকারের বড় সফলতা।
ওভার ফ্লাই ও মেট্রো রেল চালুর উদ্যোগ : ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশ কিছু ওভার ফ্লাই স্থাপন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শনিরআকড়া থেকে মতিঝিল ওভার ফ্লাই চালুর মাধ্যমে আমাদের জীবন যাত্রা কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে। মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত ট্রেন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে সরকার নব যুগের সূচনা করবে। কাজ এগিয়ে চলেছে। পরিকল্পনা মাফিক কাজ অগ্রসর হচ্ছে। ঢাকা শহরের জ্যাম কমাতে হলে যোগাযোগের বিকল্প সৃষ্টি ছাড়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে ঢাকা চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা সেতু পর্যন্ত ৪ লাইনের রাস্তা নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এই সকল কাজ দৃশ্যমান হলে দেশে অর্থনীতিতে গতিময়তা অনেক বৃদ্ধি পাবে। ২০১৯ সালে ঢাকায় মেট্রো রেল চালুর টার্গেট ঠিক করেছেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
১০০ শিল্প অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ : সরকার সারা দেশে শিল্প কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুরো দমে সমান তালে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য একশতটি শিল্প অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোন কোন জেলায় প্রথমে শিল্প অঞ্চল স্থাপন করা প্রয়োজন সেই আলোকে স্থান ঠিক করা হচ্ছে। এই কাজটি অবশ্য বেসরকারিভাবেও চলছে। ইতোমধ্যে ১০টি শিক্ষা অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে ৪টি এবং বেসরকারিভাবে ৬টি শিল্পাঞ্চল স্থাপনের কাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু দিন পূর্বে উদ্বোধন করেছেন। এই কাজটি সফলভাবে করতে পারলে শিল্প বিপ্ল¬ব অচিরে ঘটবে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক শিল্প পল্ল¬ী, টেনারী পল্ল¬ী ও ক্ষুদ্র শিল্প পল্ল¬ী স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে।
আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে : অনেক সফলতা অর্জন দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নতি কেন যেন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। সরকারের সফলতাতে মনের দিগন্ত সুন্দরভাবে স্থাপন করতে হলে আরও কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে কোন সরকারের মৌলিক কাজ। সরকারও সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ নিরাপত্তা হীনতার কারণে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারছে না।
ইইউ বাংলাদেশ ব্যবসা পরিবেশ সংলাপে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। ইইউ রাষ্ট্রদূতসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যে যে সকল সমস্যা বিনিয়োগ প্রধান অন্তরায় তা উঠে এসেছে। আমরা প্রবন্ধের শুরুতে বিষয়সমূহ উল্লে¬খ করেছি। এই সকল সমস্যাসমূহকে চিহ্নিত করে সমাধানের পথে অগ্রসর হতে হবে। সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করলে সমস্যা আরও তীব্র হবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা : বিগত এক বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে দেশে রাজনৈতিক দলসমূহের কোন নেতিবাচক কর্মকা- নাই। রাজনৈতিক নীতি বাহ্যিক অর্থে বিরাজমান। দেশে হরতাল-অবরোধসহ কোন ধরনের কর্মকা- আমরা দেখতে পাইনি। রাজনৈতিক দলসমূহের কর্মসূচিও বেশ স্থিমিত। সভা সমাবেশ প্রভৃতি নাই বললেই চলে। তবুও দেশে কেন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আশানুরূপ দেখা যাচ্ছে না। মানুষের মনের মধ্যে শান্তি নেই। মানুষ একটা অশান্তিতে বিরাজমান। বিগত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে প্রদান বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলসমূহ অংশ গ্রহণ করেনি। তাতে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। দেশে-বিদেশে এই নির্বাচন বেশ বিতর্ক সৃষ্টি করে। ইইউ রাষ্ট্রদূত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় জাতীয় পর্যায়ে এই বিষয়টি মূখ্য বিষয়। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশি-বিদেশি অনেকে আবারও সকলের অংশগ্রহণমূলক একটি জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছেন। কিন্তু সরকার বিষয়টি আমলে নেননি। তাহলে রাজনৈতিক অশান্তি কি জাতীয় নির্বাচন! এই বিষয়টি সমাধান কি জরুরি!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে রাজনৈতিক অশান্তির বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে। বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় বিশিষ্ট কলামিষ্টগণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক এই চাঙ্গা গুমুট পরিবেশ নিয়ে বেশ লেখালেখি করছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ তাই একটি অনাস্থায় পড়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে একটা ধারণা বিরাজ করছে, ভবিষ্যতে সরকার যদি নতুন আসে তখন বিনিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন হবে। তখন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ হুমকিতে পড়তে পারে। এই অনিশ্চয়তা থেকে অনেক দেশের অনেক বিনিয়োগকারী এগিয়ে আসতে পারছে না। সমাধানের উপায় হতে পারে! যদি সমাধানের পথে যেতে চাই, তখন আলোচনা হতে পারে। আর আমরা যদি বিষয়টি কোন সমস্যা বলে ধরে নি তা হলে আলোচনার প্রয়োজন নাই। সরকার মনে করছেন আমরা নির্বাচিত সরকার। রাজনৈতিক কোন অশান্তি নেই। কোন অনির্বাচিত সরকার আমরা নই। তাই আমাদের নেতৃত্বে সকলকে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বিষয়টি আমরা দেখছি কিভাবে। আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। আমাদের বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিনিয়োগ স্থবিরতা এসেছে। তারপরও আমরা বিষয়টি আমলে নিচ্ছি না। তাই কোন উপায়তো আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
পুঁজিবাজার ব্যাপক ও আর্থিকখাতে : পুঁজি বাজার হলো বিনিয়োগের সব চেয়ে উত্তম ক্ষেত্র। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল নয়। বার বার এই বাজার হোঁচট খেয়েছে। ১৯৯৮ সাল ও ২০১০ সালে দুই দুই বার পুঁজি বাজারে ধস নামে। এখনও পুঁজি বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বর্তমান পুঁজি বাজার থেকে কমে গিয়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগ, চেষ্টা ও নীতিগত সমর্থন চালিয়ে যাওয়ার সত্ত্বেও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বেশ রয়েছে। ব্যাংকের সুদের হার পৃথিবীর সব চেয়ে বেশি। সারা বিশ্বে ব্যাংকের সুদের হার ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত। এই বিশাল ব্যাংকের সুদ দিয়ে ব্যবসা করে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীগণ বেশ কষ্টে রয়েছেন। ব্যাংকের সুদের হার ৭ শতাংশে দ্রুত নামিয়ে আনতে হবে। এশিয়া ফ্যাসিফিক দেশ সমূহেরমধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকসমূহে ঋণ খেলাপি সব চেয়ে বেশি। ঋণখেলাপি বাংলাদেশ ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর সব চেয়ে কম হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া দশমিক ৭ শতাংশ। স্বজনতোষী পুঁজিবাদের কারণে বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি সব চেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সব চেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি গ্রীসে, যা ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি আফগানিস্তানে। এর পরিমাণ হচ্ছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশে এই সংস্থার উত্তোলনের উদ্যোগ খুবই নগণ্য। সরকারকে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকসমূহ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ উদাও হয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এই সকল অর্থ উদ্ধার করার, অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার গতিও বেশ ধীর। এই সকল অবস্থা দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে।
গ্যাস সংকট : আমাদের দেশে সকল ভারী শিল্প গ্যাসভিত্তিক। দেশে গ্যাসের বর্তমান মজুদ রয়েছে ১৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের বর্তমান চাহিদা রয়েছে ৩৮০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এই বিশাল ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা বর্তমান গ্যাস ব্যবস্থাপনায় নাই। নতুন করে কূপ ক্ষেত্র আবিষ্কার বা বিদেশ থেকে পাইপ লাইনে গ্যাস আমদানি ছাড়া শিল্পখাতে গ্যাস পাওয়া যাবে না। সরকার গৃহস্থালীতে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে গৃহে গ্যাস দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। শিল্প খাতে সকলকে সরকার গ্যাস দিচ্ছেন না। কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাসের সংযোগ পেয়েছে। বিশেষ বিবেচনায় ও বিশেষ ব্যক্তিত্বের সুবাদে শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে।
বর্তমান পেট্রোবাংলা গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ নিতে অনেক দেরী হয়ে গেলো। সরকার বিদ্যুৎ উপাদনে যেমন দ্রুত কার্যক্রম চালিয়েছে, তেমনি গ্যাস সংকট সমাধানে দেখা হয়নি। আগামিতে সরকার চিন্তা করছে গ্যাসের পরিবর্তে শিল্প কারখানা বিদ্যুতের মাধ্যমে স্থাপিত হবে। কিন্তু বিদ্যুতের মূল্য অধিক। সরকার প্রতি বছর গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। তাতে শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আগামীতে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করলে আমাদের পণ্য প্রতিযোগী দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। শিল্প বাণিজ্য বিকাশের পরিবর্তে হ্রাসের ঘরে চলে যাওয়া বিচিত্র হবে না। এমনকি সরকারকে সতর্ক ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত।
ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম : বিনিয়োগ বাধার মধ্যে ঘুষ, দুর্নীতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়মই সেরা। দিনে দিনে আমরা যেন ঘুষ, দুর্নীতি সঙ্গে একাকার হয়ে পড়েছি। ঘুষ দেয়া-নেয়াটা যেন আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গি। আমরা এখন সামাজিকভাবে ঘুষ, দুর্নীতিকে মেনে নিয়েছি। ঘুষ যিনি নেন তিনি ধনী হয়ে পড়েন সহজে। সামাজিকভাবে ঘুষ গ্রহণ করা, দুর্নীতি অভ্যস্ত ব্যক্তি ধনী, সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। এই সকল ব্যক্তিদের জন্য আমরা এখন গর্ববোধ করি। কিন্তু এক সময় আমাদের সমাজে ঘুষ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের ঘৃণা করত। বিগত দিন ঘুষ গ্রহণকারীদের সঙ্গে বিবাহিক সম্পর্ক করতে পর্যন্ত অনিহা ছিল। কিন্তু আজ আর নেই। এখন ঘুষ গ্রহণকারী ব্যক্তিগণ সামাজিকভাবে গ্রহণীয়, সম্মানিত ও মর্যাদাবান।
পুরো জাতি হিসেবে আমরা ঘুষ, দুর্নীতিকে মেনে নিতে যাচ্ছি। না, এইটি হওয়া উচিত না। ঘুষ কে না বলা উচিত। দুর্নীতিকে না বলা উচিত। ঘুষ গ্রহণ প্রদানকে ঘৃণা করা উচিত। বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘুষ মুক্ত, দুনীর্তিমুক্ত একটা রাষ্ট্র প্রয়োজন। তবেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ : নতুন ইস্যু জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ। সারা বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসের এক নজীরবিহীন ঘটনা ঘটে চলেছে। আমাদের দেশে ও জঙ্গি ও ব্ল¬গার হত্যা, বিদেশি হত্যা, ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী দেশি-বিদেশি হত্যা কা- ঘটেছে। এই সকল হত্যাকা- আন্তর্জাতিক গোষ্ঠি করেছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। সরকার বলছে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দল নেই। এই সকল হত্যাকা- দেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠি গুলি করছে। ইইউ সম্মেলনে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসে। বিদেশি বিনিয়োগ কম হওয়ার পিছনে জঙ্গি, সন্ত্রাস, ঘুষ, গুপ্ত হত্যাকে চিহ্নিত করা হয়।
দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিমূল করতে হলে রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন। জাতি ঐক্যবদ্ধ না হলে জঙ্গিবাদ নির্মুল করা যাবে না। সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক ঐক্যের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। বিগত কয়েক বছরের হত্যা, ঘুম ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিচার কার্য ও তেমন দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে না। রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে সন্ত্রাসীরা মাঝে মাঝে তাজা হয়ে উঠেছে। অন্য দিকে ইসলাম ও মুসলমানদের হেয় করার জন্য জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা ইসলামের নাম ব্যবহার করছে।
আইনের শাসন : দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিচার বিভাগ আজ স্বাধীন। স্বাধীনভাবে বিচার বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি হত্যা, অভিযোগের বিচার দ্রুত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আগামীতে আইনের শাসনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের মাধ্যমে জনজীবনে শান্তিতে স্বস্তি ও নিরাপত্তা দিয়ে আসবে। নিরাপত্তাই আজকের দিনে বড় প্রয়োজন। ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিচারক নিয়োগ ও অপসারণ নিরপেক্ষভাবে হচ্ছে। ভবিষ্যতে কিভাবে এই ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা যায় সরকার তা নিয়ে গভীর কার্যক্রমে রয়েছেন। বিচারক নিয়োগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে হতে হবে। সৎ, যোগ্য, বলে নিরপেক্ষ বিচারক না হলে কখনও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না। সারা দুনিয়া বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। আমাদের বন্ধু দেশ ভারতের বিচার ব্যবস্থা থেকে আমরা অনেক ভাল ভাল বিষয়গুলো গ্রহণ করতে পারি। তাতে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। আইনের শাসন কায়েম হবে। আইনের শাসন কায়েম হলে সমাজে শান্তি থাকবে। শান্তি থাকলে বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগে শান্তি পাবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। যা আমাদের সকলের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। যা আমাদের সকলের জন্য একান্তই কাম্য।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ : বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রধানতম সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, আইন কমিশন রাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠানসমূহ। এই সকল প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ কার্যক্রম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনের উপর নির্ভর করছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির একমাত্র উপায়। অনেকে বলবেন ব্যবসা- বাণিজ্যের সঙ্গে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক কি! ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক ব্যাংক, বীমা, এনবিআরসহ কিছু সংস্থার সঙ্গে জড়িত। না, শুধু তা নয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতার উপর নির্ভর করে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি প্রকৃতি। যেমন আমাদের বৈদেশিক নীতির উপর নির্ভর করে জনশক্তি রপ্তানি। বৈদেশিক বৈদেশিক নীতিসমূহ সঠিক না হলে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি কখনও টার্গেট পূরণ করতে পারবে না। অনুরূপ আামদের উল্লি¬খিত প্রতিষ্ঠানসমূহ নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে কখনো গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। গণতন্ত্র শক্তিশালী না হলে দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা কঠিন হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে না আসলে কর্মসংস্থান বাড়বে না। কারণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে সঠিকভাবে পৌঁছাতে না পারলে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও খুব কঠিন হবে। এই জন্য সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপনে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।