বর্ষপূর্তির কবিতা
ভালোবাসো মন খুলেআ ল ম শা ম সবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে চালবর্ষার বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ঘরভাদ্রের বন্যায় ভেসে গেছে বাড়ি।তুমি শুধু একা।ভয় শংকায় হারিয়ে গেছে
রেদা গদিয়ামো
অনুবাদ : হোসেন মাহমুদ
সিক গিয়কের জন্য বিমানের টিকেট পাঠাতে ভুলো না......সিক গিয়কের পোশাক কেনার কথা মনে রেখ...।
আমার বিয়ে উপলক্ষে বাবার মুখে সিক গিয়কের নাম এ ভাবেই আবার উঠে আসে। আমি বুঝতে পারছি না তার ব্যাপারে বাবার এত চিন্তা কেন। কেন তাকে এত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে? আমি বাবা-মার একমাত্র সন্তান। আমার বিয়ে হচ্ছে। আমার চেয়ে আর কেউ কি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে! আশ্চর্য ব্যাপার, যে মা কখনোই বাবার কোনো কথা শোনেন না, তিনিও সিক গিয়কের ব্যাপারে বাবার কথায় চুপ করে থাকলেন। এমনকি আমার নানী যিনি আমার মার সকল কথা ও কাজের অন্ধ সমর্থক, তিনিও কোনো কথা বললেন না।
২.
আমার জন্মেরও আগে থেকে সিক গিয়ক আমাদের পরিবারের সাথে থাকত। আমি তাকে গিয়ক খালা বলে ডাকতাম। বাবা বলেছিলেন, সে ছিল আমার নানীর দত্তক মেয়ে। সবাই তাকে সিক গিয়ক বা বোন গিয়ক বলে ডাকত বলে আমিও তাকে তাই বলতাম। কেউ কোনোদিন এতে আমাকে বাধা দেয়নি বা বলেনি যে এটা ভুল।
বাবা বলেছিলেন, নানী ও সিক গিয়কের বাবা-মা সবাই পন্টিয়ানাকের একই এলাকার বাসিন্দা। তার ভাইবোনের সংখ্যা ছিল এগারো। তারা ছিল খুবই গরীব। সর্বশেষ সন্তান সিক গিয়কের জন্মের পর তার মা প্রায় এক বছর অসুস্থ ছিলেন। মা ও মেয়ের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তার বাবা-মা সিক গিয়ককে আমার নানীর কাছে দত্তক দেন।
আমাদের বাড়িতে সিক গিয়ক যে ঘরটিতে থাকত সেটি ছিল রান্না ঘরের পিছনে ও স্টোর রুমের পাশে। একদম সাদামাটা ও সংকীর্ণ ঘর ছিল সেটি। নানী আমাকে সে ঘরে যেতে দিতেন না। এমনকি খেলার জন্যও না। বলতেনÑঘরটি খুব ছোট, স্যাঁতস্যাঁতে। যেহেতু আমার অ্যাজমার প্রবণতা আছে তাই ও ঘরে যাওয়া উচিত নয়। এটা খুবই খারাপÑমনে মনে বলতাম আমি। কারণ, সে ঘরে যেতে ও তার সাথে খেলা করতে আমার ভালো লাগত।
সিক গিয়ক বাড়ির সব কাজে মাকে সাহায্য করতÑ রান্না, কাপড় কাচা, ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করা, পোশাক ইস্ত্রি ইত্যাদি। দুপুর বেলা কোনো সময় হাতে কাজ না থাকলে স্কুলের হোমওয়ার্কে আমাকে সাহায্য করত। তবে বেশির ভাগ সময় তার কাছে গল্প শুনতাম। পড়াশোনা যখনি ভালো লাগত নাÑবিশেষ করে অংক করাÑ তাকে অনুরোধ করতাম গল্প বলার। তখন সে তার ফেলে আসা গ্রামের গল্প বা আমার শিশু কালের কথা শোনাত। বলত, আমি নাকি সারাক্ষণ কাঁদতাম। কিšুÍ যখনি সে আমাকে কোলে নিত তখনি আমার কান্না থেমে যেত।
সে যখন গল্প বলত তখন আমার ঝিমুনি ধরত। সে আমাকে শুইয়ে দিয়ে মাথার নিচে বালিশ গুঁজে দিত। তারপর আলতো করে হাত বুলিয়ে দিত কপালে, আমি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তাম। কিন্তু বিকালের আগে, নানীর ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগেই সে আমাকে উঠিয়ে দিত। আমি নিজের ঘরে চলে যেতাম।
সিক গিয়ক আমাদের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বুঝতে পারিনি যে আমি তার কতটা ভক্ত ছিলাম। আমি তখন সিক্সথ গ্রেডে পড়ি। ফাইন্যাল পরীক্ষার সময় এসে গেছে। মনে পড়ে, কি এক ব্যাপারে আগের দিন সারাক্ষণ কেঁদেছে সে। মা ও নানী আমাকে তার ঘরে যেতে দেননি। আমি যখন মার কাছে জানতে চাইলাম যে সিক গিয়কের মন খারাপ কেন, তখন মা কোনো জবাব দিল না। পরে আমার মাথার চুল নেড়ে দিয়ে জোর করে একটু হাসার চেষ্ট করল।
পরদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি সিক গিয়কের ঘর খালি। নানী বলল, সে তার গ্রামে চলে গেছে। মা বলল, তার মার ভীষণ অসুখ। আমি সে রাত এবং তার পরেও কয়েক রাত ঘুমাতে পারলাম না। এক সপ্তাহ পর মনে হল তাকে দেখতে না পেয়ে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সেদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে আমি তার ঘরে গেলাম। তার বালিশটা জড়িয়ে ধরলাম বুকে। তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলাম।
সেদিন কেন যেন নানী দুপুরে ঘুমাননি। তিনি সিক গিয়কের ঘরে চলে এলেন, বিছানা থেকে টেনে তুললেন আমাকে। জিজ্ঞেস করলেন সিক গিয়কের জন্য কাঁদছি কেন? এটা খুব বিশ্রি ব্যাপার। সে আমার কে?
আমার চিৎকার করে নানীকে বলতে ইচ্ছে করল যে তিনি মিথ্যা কথা বলছেন। কিন্তু কিছু বললাম না। জোর খাটিয়ে নিজের কান্না বন্ধ করলাম। ভয় হল যে নানী আমার উপর রেগে যাবেন, এমনকি খারাপ ব্যবহারও করতে পারেন।
এক মাস, তিন মাস, ছয় মাস পেরিয়ে যায়। এক বছর পার হওয়ার আগেই আমি সিক গিয়কের ফিরে আসার আশা ত্যাগ করলাম। তারপর এক সময় ভুলেই গেলাম যে সিক গিয়কের একটি ঘর ছিল আর সেখানে গিয়ে আমি একসময় খেলা করতাম। এমনকি আমাদের পরিবারেরও সবার মন থেকে তার কথা মুছে গিয়েছিল একেবারে গত সপ্তাহে আমার বিয়ের প্রস্তুতি উপলক্ষে তার নাম আলোচিত না হওয়া পর্যন্ত। তাকে দাওয়াত করা হয়েছে, তার জন্য পোশাক কেনার কথাও বলা হয়েছে।
অতএব সিক গিয়ক আসছে। এ বাড়ি ছাড়ার চৌদ্দ বছর পর সে আবার আসছে। সে এলে তার আগের ঘরটাতেই থাকবে বলে মার নির্দেশে কাজের লোকেরা তা পরিষ্কার করছে। মাকে জিজ্ঞাসা করলামÑ
: সিক গিয়ক কি এখন থেকে আমাদের বাড়িতেই থাকবে?
মা বললেনÑ
: না, তোমার বিয়ের পর সে আবার তার গ্রামে ফিরে যাবে।
৩.
অবশেষে সিক গিয়ক এলো। বাবা তাকে আনার জন্য নিজেই তানজুং প্রিয়ক স্টিমার ঘাটে গেলেন। তাদের নিয়ে একটি ট্যাক্সি বাড়ির সামনে এসে থামে। ট্যাক্সির শব্দে দৌড়ে যাই আমি, জড়িয়ে ধরি তাকে। সেও জড়িয়ে ধরে আমাকে।
: তোমার বিয়ে হচ্ছে লিনÑ আমার কপালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে খুব মৃদু স্বরে বলে সিক গিয়ক। তার কথা শুনে মৃদু হাসলেও হঠাৎ করেই অনুভব করলাম আমার গলা শুকিয়ে গেছে। চোখে পড়ে, তার চেহারার অনেক পরিবর্তন হয়েছে এ ক’বছরে। সেই মিষ্টি মুখটা আর নেই। দৃষ্টিও অনেকটা ম্লান। মাথার চুল বেশির ভাগই ধূসর হয়ে গেছে। তার হাতে ছিল একটি কাপড়ের ব্যাগ। এক হাতে সে ব্যাগটি নিয়ে আরেক হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যাই। বসার ঘরে পৌঁছলে মা তাকে দেখে বড় করে শ্বাস নিয়ে সে কেমন আছে জিজ্ঞাসা করলেন।
: ভালোই আছি। বাড়ির সবাই ভালো Ñজবাব দেয় সিক গিয়ক।
নানী টেবিলে বসেছিলেন। তাকে সালাম দেয় সে। জবাবে নাক সিটকালেন তিনি। সিক গিয়ক বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে রওনা হয়। তার পিছনে এগোই আমি, অনেক বছর পর।
পরদিন ভোরে রান্না ঘরে ব্যস্ত দেখা যায় সিক গিয়ককে। নানী, বাবা, মা ও আমার জন্য নাশতা তৈরি করছিল সে। বাঁধাকপির কুচি মেশানো চালের জাউ, টুকরো মাছ ভাজা আর ডিম পোচ। আমরা খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছিলাম আর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে তা দেখছিল সে।
: এসো, আমাদের সাথে খাওÑ তার উদ্দেশ্যে বলি।
: আমি আগেই খেয়ে নিয়েছি।
তার কথা শুনে নানী তার দিকে চাইতেই সে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যেতে থাকে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াতে যাই তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য, কিন্তু নানীর মুখের ভাব দেখে আবার বসে পড়ি। তারপর শেষ করি নিজের খাবার টুকু।
বিকালে মাকে বললাম যে আমার বিয়ের পোশাকটা মাপমত করানো দরকার। সে জন্য সিক গিয়ককে নিয়ে দোকানে যেতে চাই। মা অসন্তুষ্ট হলেন আমার কথা শুনে। অনিচ্ছার সাথে তিনি সিক গিয়ককে ডেকে আমার সাথে যেতে বললেন। সে তার কথা শুনে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইল। তা লক্ষ্য করে মা বললেনÑ
: ওর বিয়ের পোশাকটা মাপমত করাতে দোকানে যাবে। তুমি সাথে গেলে ভালো হয়।
তার মুখটি হঠাৎ করেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তার ঠোঁটের কোণে হাসি দেখা যায়। তা দেখে আমি বলিÑ
: সিক গিয়কও তার জন্য সুন্দর একটা পোশাক কিনবে নিশ্চয়ই ।
সঙ্গে সঙ্গে তার মুখটি কালো হয়ে যায়। মা আমার হাতে চিমটি কাটেন। বুঝতে পারিÑ সে আহত হয়েছে।
মা তার হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসেন। আগে তিনি, পরে সে। রাস্তায় এসে দাঁড়ানোর পর একটি ট্যাক্সি পেয়ে আমরা দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে একটি কথাও হল না আমাদের মধ্যে।
দোকানে আমার বিয়ের সাদা গাউনটি বানানোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। শুধু কোমরের কাছে একটু চাপা হয়েছিল। আয়নায় চেয়ে দেখলাম। সত্যিই সুন্দর হয়েছে পোশাকটি। সিক গিয়কও দেখল, কিন্তু কিছু বলল না। এমনকি একটু হাসলও না।
ফেরার আগে পোশাক তৈরির জন্য সুনাম অর্জনকারী একটি দোকানে গেলাম আমরা। সিক গিয়কের জন্য একটি পোশাক পছন্দ করা হল যেটি মার পোশাকের মতই, শুধু রং আলাদা। খানিকটা গাঢ়।
ফেরার সময়ও সিক গিয়ক কোনো কথা বলল না।
৪.
তিন রাত আমি ঘুমাতে পারলাম না। মা বললেন, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। বিয়ের আগে মেয়েদের এ রকম হয়। সুখের চিন্তা এ উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তার কথা সত্য হতে পারে, কিন্তু আমার শরীর ক্লান্ত লাগে, চোখের পাতা ভারি মনে হয়।
কিছু পেটে দেয়ার জন্য রান্না ঘরে গেলাম। ফ্রিজ খুলে দেখে তা খাবারে ভরা। তা দেখে খিদে চলে গেল। সিক গিয়কের ঘরের দিকে চেয়ে দেখলাম এখনো আলো জ্বলছে। তার মানে জেগে আছে সে। দরজায় টোকা না দিয়েই ঢুকে পড়ি ঘরে। সে কি যেন লিখছিল। আমাকে দেখে অবাক হয়। জিজ্ঞেস করেÑ
: কি ব্যাপার! কি হয়েছে? যে খাতায় লিখছিল তা বন্ধ করে সে।
: ঘুম আসছে না।
: কেন?
: জানি না।
বলে তার বিছানায় শুয়ে পড়ি।
: কার কাছে লিখছিলে?
সিক গিয়ক বলেÑ
: বাড়িতে। আমি তো আগের মত কম বয়সের মানুষ নই। অনেকদিন হল বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকিনি। তারা চিন্তা করছে। তাই তাদের জানাতে চাই যে আমি জাকার্তা পৌঁছেছি, নিরাপদে আছি ও ভালো আছি।
মনে পড়ে, আমাদের মধ্যে সেদিন এ পর্যন্তই কথা-বার্তা হয়েছিল। কারণ, তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না। জেগে উঠেছিলাম তার ডাকেÑ
: উঠে পড়, তোমার নানী তোমাকে খুঁজছেন।
আমি লাফ দিয়ে উঠে বাথরুমে যেতে চাইলাম কিন্তু দেরী হয়ে গিয়েছিল। নানী, সিক গিয়কের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাংঘাতিক রেগে গিয়েছিলেন তিনি। দিনের বাকি সময় এমনকি সন্ধ্যায়ও আমার সাথে কোনো কথা বললেন না তিনি। মাও তার পথ অনুসরণ করলেন। মুখে হাসি ছিল না তার।
সেদিন রাতে কুকু ফুফু এলেন। বাবার বড় বোন তিনি। আর বারো দিন পর বরের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে চা-উৎসব। তাই নিয়ে বসার ঘরে বসে সবাই আলোচনা করছিলাম। এ সময় সিক গিয়ককে দেখা গেল রান্না ঘরের দরজায়, তার হাতে একটা বসার টুল। তাকে একটু নার্ভাস মনে হচ্ছিল। কুকু ফুফু তাকে আমাদের সাথে এসে বসার জন্য ডাকলেন। সঙ্গে সঙ্গে মা ও নানীর মুখ কালো হয়ে গেল। মা চেঁচিয়ে সিক গিয়ককে বললেনÑ
: না, তুমি গিয়ে তোমার কাজ কর। এখানে এসে তোমাকে বসতে হবে না।
নানী কাঁদতে শুরু করলেন। বাবা হঠাৎ করে উঠে গেলেন। এতক্ষণ তিনি নানীর পাশে বেশ সুন্দর মত বসেছিলেন। আমি দৌড়ে সিক গিয়কের ঘরে গেলাম। কিন্তু তাকে দেখতে পেলাম না। বসার ঘরে ফিরে এসে দেখি নানী তখনো কাঁদছেন আর মা তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। আমি সিক গিয়কের খোঁজে যেতে চাইলাম। কিন্তু কুকু ফুফু বাধা দিলেন। বললেন: তোমার নানীর সঙ্গে থাক।
তাকে জিজ্ঞেস করলামÑ
: আচ্ছা, ব্যাপারটা কি?
তিনি বললেনÑ
: একদিন বুঝতে পারবে। তোমার কাছে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
: একদিন! এখন নয় কেন?
তিনি জবাব না দিয়ে নানীর কাছে গিয়ে বসলেন। আমি বেকুবের মত দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে তখন যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল তা হল ঘটনাটা কি? তবে কি আমার বিয়ের ব্যাপারে কিছু? সিক গিয়ককে নিয়ে কি হয়েছে। আমার নিজেকে ভীষণ পেরেশান লাগল। শুরু হল মাথা ব্যথা নিজের ঘরে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হল। সিক গিয়কের ঘরে গিয়ে দেখলামÑতার ব্যাগটি নেই। অর্থাৎ সে চলে গেছে। মা বললেন, জরুরি কাজে সে বান্দুং চলে গেছে। তবে আমার বিয়ের আগেই ফিরে আসবে।
আমি বললামÑ
: তুমি যাই বল না কেন মা, আমি নিশ্চিত যে সিক গিয়ক আর এখানে ফিরবে না আর আমার বিয়েতেও সে থাকবে না।
৫.
আমার বিয়েটা খুব ধুমধামের সাথেই হল। সেই আনন্দময় দিনগুলোর সবে মাসখানেক পেরিয়েছে। মার ফোন এলো। বাড়িতে যেতে বললেন তিনি। বললেন, জরুরি কথা আছে। কিন্তু জরুরি বিষয়টি কি তা বললেন না।
বাড়ি পৌঁছে দেখলামÑ নানী, বাবা, মা ও কুকু ফুফু খাবার ঘরে বসে আছেন। আমার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
মা কথা বললেনÑ
: তোমাকে তোমার বাবার সাথে পন্টিয়ানাকে যেতে হবে। সিক গিয়ক ভীষণ অসুস্থ। তার স্ট্রোক করেছে।
আমি যেতে চাইলাম না। কেন যাব, সে আমার কে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার স্বামীর কথায় মন পরিবর্তিত হল। সে বললÑএমনও তো হতে পারে যে এটাই তার সাথে তোমার শেষ দেখা!
দু’দিন পর বাবার সাথে রওনা হলাম। এর মধ্যে খবর পেলাম যে সিক গিয়ককে ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হয়েছে। সারাপথ পেটের মধ্যে শিরশিরে অনুভূতিটি সাথী হয়ে রইল।
সিক গিয়ক আমাদের জন্য অপেক্ষা করেনি। আমাদের বিমানটি যখন অবতরণ করে তার এক ঘণ্টা আগেই মারা যায় সে। তার এক বোন, যার সাথে তার চেহারার ভীষণ মিল, বিমানবন্দরে আমাদের নিতে এসেছিল। সে নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করল আমাকে। তার চোখের পানিতে ভিজে উঠল আমার চুল ও মুখের এক পাশ। বাবা একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ মুছছিলেন।
চির শান্তির দেশে যাত্রার জন্য সিক গিয়ক প্রস্তুত। তাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। কান্নায় ভেঙে পড়লাম আমি। বাবা তার নিথর দেহের পাশে বসে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আর বারবার ক্ষমা চাইছিলেন। উপস্থিত আর সবাইও কাঁদছিল। আর মেয়েরা আমার কাছে আসতে চাইছিল সান্ত¦Í¦না দেয়ার জন্য। তাদের ভিড়ের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার।
সিক গিয়কের লাশ এখন গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। তার মুখটা ঢেকে দেয়া হচ্ছিল। এ সময় বাধা দেয় তার বোন। বলেÑএকটু থাম। সে এগিয়ে এসে তার কান্না ভেজা মুখে চুমু খায় আমার গালে। ফিসফিস করে বলেÑ শেষ বারের মত তার মুখ দেখে নাও। সে তোমার জন্মদাত্রী মা।
*রেদা গদিয়ামো জাকার্তার কম্পাস-গ্রামিডিয়া প্রকাশনা গ্রুপে কর্মরত। কয়েকটি মহিলা পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন সাময়িকী ‘ইন স্টাইল’-এর সম্পাদক। লেখক হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। ২০০৪ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। তার দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশের অপেক্ষায়। তিনি ইন্দোনেশিয়ারএকজন বিশিষ্ট গায়িকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।