বর্ষপূর্তির কবিতা
ভালোবাসো মন খুলেআ ল ম শা ম সবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে চালবর্ষার বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ঘরভাদ্রের বন্যায় ভেসে গেছে বাড়ি।তুমি শুধু একা।ভয় শংকায় হারিয়ে গেছে
মাহমুদ শাহ কোরেশী
এবার ইউরোপে গিয়ে অন্য অনেক কিছুর মধ্যে আমার বড় লাভ হলো টেড্ হিউজের কন্যা যে একজন কবি তার পরিবার পাওয়া। তার একটা বই আমি সংগ্রহ করলাম। তার মা সিলভিয়া প্লাথের ‘নির্বাচিত কবিতা’ও একখ- এনে ছিল আমার ছেলে শাজেল। এর আগে এই অসাধারণ প্রতিভাবান আর বিদগ্ধ মহিলার ‘দিনপঞ্জী’ও আমি জোগাড় করতে পেরেছিলাম। যেমন পেরেছি তার স্বামী টেড্ হিউজের একটি ঢালি জীবনী গ্রন্থ।
ব্রিটিশ রাজকবি টেড্ হিউজ ঢাকায় এসেছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের নিমন্ত্রণে, দ্বিতীয় এশীয় ক......জ উৎসবে যোগ দিতে। সে ১৯৮৯ সালের ঘটনা।
কয়েক দিনের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ ও আলাপচারিতা ছাড়াও পরবর্তী অধ্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সৈয়দ সাহেব তার ‘কথাবিচিত্র ঃ বিশ্বসাহিত্য’ গ্রন্থে পর পর তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন ওই ব্যতিক্রমী ব্রিটিশ কবি সম্পর্কে। (ঢাকা, শিখা প্রকাশনী, ২০০১ পৃ. ১৭৪-১৮৮)। বাংলােেদশে আরও অনেকে টেড্, বিশেষ করে তার স্ত্রী সিলভিয়াকে নিয়ে বহু রচনা লেখেছেন, কিছু অনুবাদও করেছেন। আমরা এখানে ব্রিটিশ রাজকবির শেকড়ের অনুসন্ধান করবো এবং কবিরূপে তিনি, তার স্ত্রী ও কন্যা কীভাবে আত্ম প্রতিষ্ঠা অর্জনে সক্ষম হলেন তা নির্ণয়ের প্রয়াস পাবো।
এডওয়ার্ড জেমস হিউজের জন্ম ১৭ আগস্ট ১৯৩০, ইয়র্কশায়ারের একটি গ্রামে। বাবা উইলিয়াম ও মা এডিবের তিনি তৃতীয় সন্তান। আশপাশে আরো আত্মীয়স্বজন নিয়ে তাদের মোটামুটি মধ্যবিত্ত অবস্থান। মিতব্যয়িতা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চার্চ গমনে টেড্রে ছিল অনীহা। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী পিতার পেশা দারু শিল্পে। প্রথম মহাযুদ্ধে আহত হয়েও তিনি আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। টেড্ তার ‘ডাস্ট এজ উই আর’ কবিতায় পিতার একটি প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। মা এডিথ সুন্দরী, উচ্চবংশীয় এবং গৃহকর্মে নিপুণা। টেড্ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মায়ের রান্না, জ্যামজেলি নিয়ে আনন্দ নিভোগ করতেন। বন্ধুদের কাছে টেড্ ছিলেন খুবই সমাদৃত। কেননা বালক টেড্ যেমন শান্তশিষ্ট, তেমনই সুদর্শন। তবে তার দশ বছরের বড় ভাই জেরারল্ড ছিলেন আরো সুশ্রী ও গুণী। অতি সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী ও ছবি আঁকায় পারদর্শী।
অল্প বয়স থেকে টেড্ প্রাণীজগতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। প্রথমে ছবি দেখে, পরে জীনন্ত সংগ্রহ করে ইঁদুর, ব্যাং ও বিভিন্ন পশু-পাখি পোষা তার কৈশোরের কীর্তিকলাপের অন্তর্গত হয়ে পড়ে। তাছাড়া ছিলেন বড়ভাই জেরাল্ডের সহযোগিতায় বন্দুক শিকার এমনকি একবার একটি খরগোশকে গুলি করতেও পেরেছিলেন তিনি। এভাবে পরবর্তীকালে টেড্রে কার্যসৃষ্টিতে প্রাণীজগতের প্রতি বিশেষ আকর্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট হতে থাকে।
১৯৩৭ সাল থকে পরিবারের অবস্থা বদলাতে থাকে। শাশুড়ির সম্পত্তির উত্তরাধিকার পেয়ে টেডের পিতা একটি পত্রিকা ও তামাকের দোকান কিনে ফেলেন। দক্ষিণ ইয়কশায়ারের শিল্প শহর ম্যাক্সবরোতে পরিবারটি স্থানান্তরিত হলেন তখন। একাদশ বর্ষ অতিক্রম করলেন টেড্ ম্যাক্সবরো গ্রামার স্কুলে তার বোন অলউইনসহ উন্নতস্তরের পড়াশুনায় ব্রতী হলেন। বাড়ির কাছে দুটি নদী (দ্য ডন এবং দ্য ডার্ন) ও তার পাশে কিছু গর্ত নানা বন্যপ্রাণীতে ভর্তি। তাতে যেমন বালক টেডের আগ্রহ, তেমনি কৌতূহল বাবার পত্রিকার দোকানে বসে কমিক ও অন্য মনমাতানো বই পড়ায়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। বড় ভাই জেরাল্ড রাজকীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দিলেন, মা রেসন কার্ড দিয়ে স্বল্প পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহে বিব্রত। খাওয়া-পরার যে এক দুর্দিন গিয়েছিল সবার জন্য তবে বাড়ির কাছে ছিলো টাউন লাইব্রেরী। টেড্ সেখানে পেয়ে গেলেন তার ভিন্ন রকমের আহায্য বস্তু। প্রথম দিকে রোমাঞ্চকর গদ্যগ্রন্থ তাকে আকৃষ্ট করতেও তের বছর বয়সের পর তিনি ক্রমাগত কবিতার দিকে ঝুঁকলেন। পালং, লংদেশে ব্য===ায় ছন্দ ব্যবহার তিনি অনুসরণ করলেন। সহপাঠীদের শোনালেন কিছু কমিক কবিতা। উল্লেখ্য যে, তার মা কবিতা পড়তেন এবং ওয়ার্ডসওয়ার্থের ভক্ত ছিলেন খুব। বাবা ঐরধধিঃযধ মুখস্থ আবৃত্তি করতে পারতেন। টেড্ সে সময়ে বাইবেল পাঠে, বিশেষ করে দা সংগ অব সংগস প্রভৃতিতে আসক্ত হলেন।
স্কুলে তিনি পেয়েছিলেন কিছু শিক্ষক যারা তাকে নিযুক্ত প্রেরণা ও কিছু প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিলেন। প্রাগুক্ত দুটি নদীর নামে প্রকাশিত স্কুল-জার্নালে টেডের প্রকাশের পর থেকে তিনি কবিরূপে চিহ্নিত হয়ে গেলেন। এক বছরের ছোট অ্যালিস উইলসন নামে তার এক বান্ধবী জোটে। পড়ে তার বহু জন হোলের সঙ্গে হিলসনের পরিণয় ঘটে।
এদিকে ১৯৪৮ সালে টেড্ ক্যাম্ব্রিজের পেমব্রুক কলেজের একটি উন্মুক্ত প্রদর্শনী পুরস্কার জিতে নেন কিন্তু তার ভর্তি দু’বছরের জন্য বিলম্বিত হয় কেননা। তাকে রাজকীয় বিমান বাহিনীর রেডিও মেকানিকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। এই সময়ে টেড্ ব্যাপকভাবে ইংরেজ কবিতা পাঠ করেন। বিদেশীদের জন্য জর্লন রেইনার মারিয়া রিলকে অনুপ্রাণিত করেন তাকে।
১৯৫১ সালের অক্টোবরে টেড্ ক্যাম্ব্রিজের পেমব্রুক কলেজে ইংরেজি অধ্যায়নের জন্য ভর্তি হন। সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছে তিনি তখন বিশিষ্ট ছাত্ররূপে প্রভাব বিস্তার করেন। তার একটি গ্রামোফোন ছিল যাতে প্রায় উচ্চস্বরে বিটোদেনের নবম মিস্ফান বাজত।
দ্বিতীয় বর্ষে তিনি তার পিতামাতার সঙ্গে মিলিত হন। তখন তারা পশ্চিম ইয়র্কশায়ারে বাড়ি করেছেন। বড় ছেলে জেরাল্ড বিয়ে করেছেন এবং সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ার পথে। টেডের দুই বছরের বড় বোন অলউইন প্যারিসে খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন। বেশ কিছুদিন কলেজে দুষ্টু ছেলেটির মতো থাকলেন টেড্। তার কবিতাও বাইবে না পাঠিয়ে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করতে লাগলেন। সেখানেই তার বহু সুহৃদয় ও অনুরাগী।
২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ মার্কিন কবি ও ক্যাম্ব্রিজে নিউনহাম কলেজে ফুলব্রাইট স্কলার সিলভিয়া প্লাথের সঙ্গে টেড্ হিউজের সাক্ষাৎ ঘটে। ঘটনাচক্রে সে বছরের ১৬ জুন তারা বিয়ে করেন এবং সেই গ্রীষ্মেই স্পেনের বেনিদর্মে ও প্যারিসে মধু চন্দ্রিমা যাপন করেন। এক বছর পর দুজনে মার্কিন মুলুকে গমন করেন।
১৯৬০ সালের ১ এপ্রিল লন্ডনে তাদের এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে ঃ ফ্রেইডা রেবেকা। ১৯৬২ সালের ১৭ জানুয়ারি পরে আসে এক পুত্র সন্তান ঃ নিজোলাস ফারার। ১৯৬৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিলভিয়া প্লাথ অত্যন্ত নৃশংস উপায়ে আত্মহত্যা করেন।
সিলভিয়ার পিতাও ছিলেন এক জাদরেল বুদ্ধিজীবী। ১৯৩৩ সালে তার একটি বই এবং একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটির নাম A Hand book of Soual Psychology। তার মা অরেপিয়া ছিলেন এক সংস্কৃতিরাম মহিলা, সিলভিয়া ও তার ছোট ভাই ওয়ারেনকে আরো যত্নে মানুষ করছেন তিনি।
টেড্ হিউজ ও সিলভিয়া প্লাথের লেখা বেশ কিছুটা ভিন্ন ধরনের। দু ধরনের জটিলতায় তারা আচ্ছন্ন। টেডের মতে, সিলভিয়ার মধ্যে চলছে a paocess of alchemy; Islamic banatic lovers of god- এবং ultimate intensity নিয়ে তিনি কাজ করেন।’
দৈহিক আকর্ষণের অতিরিক্ত টেডের কবি প্রতিভার প্রতিও সিলভিয়া ছিলেন খুন শ্রদ্ধাশীল। তার ‘জার্নালসে’ রয়েছে তার স্বীকৃতি।
লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক, সাবেক মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।