বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামী আইনগ্রন্থ যেমন ফতোয়ায়ে আযীযী এবং মাযমুয়া ফতোয়ায় ধূমপানকে ইসলামী শরীয়তে মাকরুহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যদিও চিকিৎসাপন্থায় বৈধ ধরে নেয়া হয়, তারপরও তার ক্ষতি তো সুস্পষ্ট।
চিকিৎসকদের মতে, ধূমপানের কারণে মানব পরিবেশে দুই ধরনের কুপ্রভাব বিস্তৃত হয়। একটি স্বল্পকালীন অপরটি দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পকালীন ক্রিয়ার স্ফীতি ও জ্বালা-যন্ত্রণা সংযোজিত হয়। ব্যথার পরিচয় নাক ও চোখের লালাযুক্ত পাতলা চমড়ার দ্বারা অনুভব করা যায়। যেমন, সাধারণ সিগারেটের ধোঁয়া চোখে প্রবেশের পর চোখে তন্দ্রাভিভ‚ত হয়। স্ফীতির অনুমান করা যায়। ধূমপানের ধোঁয়ার গ্যাসের অংশ থেকে যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়, তা থেকে অস্থিরতা অনুভ‚ত হয়। ধূমপানের কারণে পরিবেশ দূষিত হয়, বাল্যকালেই শিশুদের ব্রংকাইটিস কাশি, কফ, কান পাকা ফুসফুসের ক্রিয়াকর্মে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। পরিবেশ ধূমপানের ধোঁয়ায় দীর্ঘকাল দূষিত থাকলে তার প্রভাবে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং মানসিক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, সিগারেটের বাষ্পের কারণে ফুসফুসের ভেতরের জড় পদার্থ ঈুঢ়রধর ক্যান্সার বিলীন হয়ে যায়। যার ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। ফুসফুসের ক্যান্সারে শতকরা ৯০ জন, অন্যান্য ক্যান্সারে শতকরা ৩০ জন, গলা ক্যান্সারে শতকরা ৮০ জন, হৃদরোগে শতকরা ২০ থেকে ৩০ জনের মৃত্যু হয় সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে।
আমেরিকান দশজন চিকিৎসা কৌশলী অনেক যুক্তি-তর্কের পর ঐকমত্য প্রকাশ করেছে যে, যারা ধূমপান করে না, তাদের তুলনায় যারা ধূমপানে অভ্যস্ত তারা নিম্নলিখিত রোগে অধিক হারে আক্রান্ত হয়। যেমন- ফুসফুসের ক্যান্সার, নাক, গলা, শ্বাসনালীতে অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হওয়া, ওই স্থানগুলো ফুলে যাওয়া, কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার, পেটের ব্যাধি, হৃৎপিন্ডে চর্বি এবং অন্যান্য মারাত্মক রোগ। (তারবিয়াতুল আওলাদ : ১/২১৬)।
ডাক্তার চার্লস লিখেন, ধূমপান মৃগী ও সন্ন্যাস রোগের বড় ভিত্তি। ডাক্তার এড়ৎমধযং বলেন, ধূমপান মানবদেহের অঙ্গ ও শক্তি ক্রমবিকাশে মারাত্মক ক্ষতি করে। অন্তরে বড় ধরনের আঘাত করে শারীরিক শক্তি বিলোপ করে। হৃদয়ের সামর্থ্য অবনত করে দেয় এবং এতে মাথাব্যথা সৃষ্টি হয়; চোখ নষ্ট হয়ে যায়, পরিপাক শক্তি বিয়োগ হয়। আর শরীর পূর্ণতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
এমনকি ধূমপানের বিষয়গুলো যৌনশক্তিতেও প্রভাব ফেলে। যেমন- তুর্কি সম্রাট ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রজাদের এই মর্মে নির্দেশ দিলেন যে, ধূমপান মারাত্মক অপরাধ এবং যে ধূমপান অন্যায়ে গ্রেফতার হবে, তাকে সাজাস্বরূপ ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হবে। কারণ, তিনি আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন, যেন সমস্ত পুরুষ অকৃতকার্য হয়ে না যায়।
বাংলাদেশের সুপরিচিত চিকিৎসক প্রফেসর নূরুল ইসলামের মতে, গর্ভবতী মহিলা ধূমপানের মাধ্যমে গর্ভজাত শিশুকে বিষাক্ত পদার্থ সরবরাহ করে। যার ফলে নবজাতক শিশুর শারীরিক ওজন কমে যায়; বরং জন্মের পর কিছু দিনেই মৃত্যুবরণ করে। সুতরাং সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করা উচিত, এই মরণ আহ্বানকারী বিষাক্ত ধূমপান আমাদের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।