বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান রাব্বুল আলামীন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের ব্যাপ্তি ও পরিধিকে স্পষ্টতই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আমরা গত নিবন্ধে আলোচনা করেছিলাম। এ বিষয়ের ওপর কোরআনের আরো কিছু বক্তব্য বর্ণনা করা হলো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের নিজেদের মধ্য হতে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন। সে তার আয়াত তাদের নিকট আবৃত্তি করে পরিশোধন করে এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পরিলিপ্ত ছিল।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৬৪ )। এই আয়াতের মর্ম অনুসারে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হেদায়েতই হলো চিরন্তন হেদায়েত। তার হেদায়েত ও দিকনির্দেশনার বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারীরা সবাই বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর প্রসঙ্গটিও কোরআনে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অথবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের হিংসা করে? ইব্রাহীমের বংশধরকেও তো কিতাব ও হিকমাত প্রদান করেছিলাম, এবং তাদের বিশাল রাজ্য দান করেছিলাম। (সূরা নিসা : আয়াত ৫৪)।
অনুরূপভাবে মহান আল্লাহপাক হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রসঙ্গটিও বিবৃত করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, সে সময়ের কথা স্মরণ করো, যখন আল্লাহ বলেছিলেন, হে মরিয়ম তনয় ঈসা, তোমার প্রতি ও তোমার জননীর প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ করো, পবিত্র আত্মা দ্বারা আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম এবং তুমি দোলনায় থাকাবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলতে, তোমাকে কিতাব ও হিকমাত, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছিলাম...। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত ১১০)।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-কে রিসালাতের দায়িত্ব প্রতিপালনের দিকনির্দেশনাও প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা করো সৎভাবে; তোমার প্রতিপালক, তার পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কে সৎপথে আছে তাও তিনি সবিশেষ অবহিত। (সূরা নাহল : আয়াত ১২৫)।
আমরা গভীরভাবে লক্ষ করেছি যে, এ পর্যন্ত বর্ণিত আয়াতসমূহে আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হিকমাত শিক্ষাদানের বিষয়টি বারবার উল্লেখ করেছেন। এ পর্যায়ে মনের গহিন পর্দায় স্বভাবতই প্রশ্নের উদয় হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ হিকমাত পেলেন কোথায়? তিনি তো কল্পিত বাক্য কখনো উচ্চারণ করেননি। এই প্রশ্নের উত্তর আল্লাহপাক নিজেই প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক ওহির দ্বারা তোমাকে যে হিকমাত দান করেছেন, এগুলো তার (এই সূরার সদুপদেশের) অন্তর্ভুক্ত, তুমি আল্লাহর সাথে অপর ইলাহ স্থির করো না, করলে তুমি নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (সূরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৩৯)।
এই আয়াতের দ্বারা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়, আল কিতাব কোরআন যেমন ওহি, তেমনি হিকমাতও ওহি। কোরআন ওহিয়ে মাতলু এবং হিকমাত ওহিয়ে গায়রে মাতলু অর্থাৎ হাদিস। এই হাদিসই হলো আল কোরআনের ব্যাখ্যা। বস্তুত কোরআনুল কারিম স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে রাসূল অর্থাৎ কেবল দূত হিসেবে উপস্থাপন করেছে, এমনটি মনে করা সঠিক নয়; বরং এটি ভ্রান্ত ও কোরআনি শিক্ষার বিপরীত।
কোরআন মাজিদ সংক্ষিপ্ত ও অল্প কথায় বেশি অর্থ প্রকাশ করার নীতি অবলম্বন করায় তা ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সে হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা.) হলেন কোরআনের ব্যাখ্যাকারক এবং তার উক্তি, কর্ম ও অনুমোদনসমূহ তথা হাদিস কোরআন-হাদিসের যথার্থ ব্যাখ্যা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।