Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মজলিসের আদব ও শিষ্টাচার-১

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

মজলিসের আদব ও শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে এই যে, এর ফলে মজলিস বা অনুষ্ঠানে সভ্যতা, নিয়মানুবর্তিতা এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মজলিসে বা অনুষ্ঠানে যোগদানকারী প্রত্যেকের হক এবং অধিকার সমপর্যায়ভুক্ত হতে হবে। যাতে করে এই মজলিসে যোগদানকারীদের পারস্পরিক ভালোবাসা বর্ধিত হয়, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার পথ সুগম হয়। এ দু’টি দিকনির্দেশনাকে কায়েম রাখার জন্য রাসূলুল্লাহ সা.-এর শরীয়ত ওঠাবসা সংক্রান্ত কিছু শিষ্টাচার মানুষকে শিক্ষা দান করেছে।

মজলিসে যোগদানকারী ব্যক্তির যেখানেই সহজভাবে বসার সুযোগ ঘটবে। অর্থাৎ যে পর্যন্ত বসার স্থান নির্ধারিত সেখানে পৌঁছার পর আসন গ্রহণ করা উচিত। এটা মোটেই সমীচীন নয় যে, পূর্বে আসন গ্রহণকারী সমবেত জনমন্ডলীকে ফাঁক করে অনর্থক সামনে বসার চেষ্টা করা। কেননা, এর দ্বারা প্রথমত, আগে আগমনকারী ও আসন গ্রহণকারীদের কষ্ট হয় এবং দ্বিতীয়ত, এমন পদক্ষেপ গ্রহণকারীর মাঝে অহঙ্কার ও আত্মগরিমার ভাব পয়দা হয়। বিশেষ করে সে নিজ ব্যক্তিত্বের খেয়ালে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সা.-এর মজলিসে এই নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে যে যেখানে স্থান পেতেন সেখানে বসে পড়তেন। একইভাবে মজলিসমূহে দেরিতে আগমনকারী নামাজীদের জন্য মোটেই শোভনীয় নয় যে, তারা অন্যান্য লোকদের ঠেলে সামনের কতারে বসার চেষ্টা করা। সচরাচর জুমার নামাজের দিন এ ধরনের ঘটনার অবতারণা হয়। এ কারণে আমাদের গায়ে পদাঘাত করে অথবা গর্দান হটিয়ে আগে অগ্রসর হওয়াকে (বিশেষ করে জুমার দিন) নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মজলিসে একজনকে উঠিয়ে তার স্থানে বসা উচিত নয়। কেননা, এতে উগ্র মনোবৃত্তি ও আত্মম্ভরিতার মনোভাব প্রকাশ পায়। একই সাথে অন্যের অন্তরে ঘৃণা ও অবজ্ঞার সৃষ্টি হয়। যদি কোনো ব্যক্তি মজলিসে আসন গ্রহণ করার পর কোনো প্রয়োজনে উঠে যায়, তাহলে প্রত্যাবর্তন করার পর সেখানে বসার অধিকার তারই বেশি। অন্য কোনো লোক তার স্থানে বসতে পারবে না। কেননা সে ওই স্থানের ওপর প্রথমেই অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং বিশেষ প্রয়োজনে সেখান থেকে উঠে গেলেও তার পূর্ব দাবি অগ্রাধিকার লাভ করবে।

যদি একই মজলিসের দুই ব্যক্তি পরস্পর মিলিত হয়ে অবস্থান গ্রহণ করে থাকে, তাহলে তাদের অনুমতি ছাড়া তাদেরকে পৃথক পৃথক স্থানে বসানো যাবে না। কেননা, এ দুই ব্যক্তি পরস্পর কথাবার্তা বলার জন্য অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে একসাথে বসেছিল এবং এ দু’জনের বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার ভাবও অবিচ্ছিন্ন ছিল। এ কারণে এ দু’জনকে পৃথক করে দেয়া তাদের কাছে বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এজাতীয় আচরণ অমানবিক বলে বিবেচিত হবে।

যদি কোনো মজলিসে কতিপয় লোক বৃত্তাকারে অবস্থান গ্রহণ করে, তবে কাউকে এককভাবে সে বৃত্তের মাঝখানে আসন গ্রহণ করা উচিত নয়। এ অনুচিত কাজে আগ্রহী ব্যক্তিদের ওপর রাসূলুল্লাহ সা. অভিসম্পাত বর্ষণ করেছেন। কেননা, এমতাবস্থায় কিছু লোকের মুখ তার দিকে হবে এবং কিছু লোকের দিকে তা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে। কেননা, এটা এক শ্রেণীর বদতমিজী ছাড়া কিছুই নয়। এটাও সম্ভব যে, কোনো লোক হাস্যোচ্ছলে এভাবে আসন গ্রহণ করে এবং অন্যদের কৌতুক ছলে হাসায়। এটাও নিতান্তই গর্হিত আচরণ বলে বিবেচ্য।

মজলিসে কারো পাশে অথবা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। কেননা, এটা আজমীদের স্বভাব ছিল। চাকর-বাকর মনিবের এবং প্রজা সাধারণ বাদশাহদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকত। এটা এমন এক অতিরঞ্জিত সম্মানের পন্থা, যার ফলে শিরক ও অংশীবাদিতা প্রকাশ পাওয়া মোটেও অসম্ভব নয়।

এ সম্মান প্রদর্শনের ফলে বাদশাহ ও মনিবরা খোদায়ী আসনের অধিকারী হয়ে যেত এবং অধীনস্থরা তাদের অগ্র-পশ্চাতে নিজেদের ইজ্জত, সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে বিলীন করে দিত। এ শ্রেণীর বৈষম্যদুষ্ট আচরণ ইসলাম কখনো পছন্দ করে না। কারণ ইসলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই পৃথিবীতে আগমন করেছে, মানবতাকে পদদলিত করার জন্য নয়।



 

Show all comments
  • Mirza Anik Hasan ২৯ জুন, ২০১৯, ২:৫৫ এএম says : 0
    ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে না বসে। বরং তোমরা জায়গা বিস্তৃত করে দাও এবং ছড়িয়ে বসো। ইবনে উমার (রা)-র জন্য কোন ব্যক্তি নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তার ছেড়ে দেয়া জায়গায় বসতেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ২৯ জুন, ২০১৯, ২:৫৬ এএম says : 0
    আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রসুুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন। তিনি বলেছেন, 'তুমি কেবল দীনদার ব্যক্তির সঙ্গ গ্রহণ করবে, আর তোমার খাবার যেন খোদাভীরু লোকেই কেবল খায়।'
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafizur Rahman ২৯ জুন, ২০১৯, ২:৫৭ এএম says : 0
    জাবির ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নবী (সা)-এর খেদমতে হাযির হতাম তখন আমাদের প্রত্যেকে সেখানে বসে পড়েতো যেখানে মজলিসের লোকজনের বসা শেষ হয়েছে। ইমাম আবু দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান হাদিস বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Sahriar Kibria ২৯ জুন, ২০১৯, ২:৫৮ এএম says : 0
    হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মজলিসে বসে এবং তাতে যদি অনেক বেশি অপ্রয়োজনীয় ও বাজে কথা বলা হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে মজলিস থেকে উঠার আগে সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, প্রশংসা তোমার জন্য, আমি সাক্ষ্য দিই যে, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই এবং তোমার কাছে তওবা করি।” তাহলে ঐ মজলিসে যা কিছু হয়েছিল সব মাফ করে দেয়া হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • জাবেদ ২৯ জুন, ২০১৯, ৯:১৫ এএম says : 0
    সভা-সমাবেশ, বৈঠকে বসার ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলা যরূরী। এর মাধ্যমে ইহকালে যেমন সুফল পাওয়া যাবে, তেমনি পরকালীন জীবনে অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক দান করুন-আমীন!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Ismail ২৯ জুন, ২০১৯, ৯:২৩ এএম says : 0
    মজলিসে বা সভায় কারো দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করার জন্য বা গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য গমন করা যাবে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوْا، وَلاَ تَجَسَّسُوْا، وَلاَ تَحَاسَدُوْا، وَلاَ تَدَابَرُوْا، وَلاَ تَبَاغَضُوْا، وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا. ‘তোমরা কারো প্রতি কু-ধারণা পোষণ কর না। কেননা কু-ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ কর না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিও না এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ কর না, বরং পরস্পর আল্লাহর বান্দাও ভাই ভাই হয়ে যাও’।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ২৯ জুন, ২০১৯, ৯:২৪ এএম says : 0
    মজলিসে বা সভায় বসে হাসাহাসি ও খেল-তামাশা করা যাবে না। এতে একদিকে বৈঠকের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, অপরদিকে আলোচকের কথা শুনতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تُكْثِرُوا الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيْتُ الْقَلْبَ ‘তোমরা অধিক হাসবে না। কারণ অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়’।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Mannan ২৯ জুন, ২০১৯, ৯:২৫ এএম says : 0
    পিছনে হাত রেখে ঠেস দিয়ে বসা বা দেওয়ালে ঠেস লাগিয়ে বসা মজলিসের আদবের পরিপন্থী। তাই এভাবে না বসে সোজা হয়ে বসা উচিত। শারীদ ইবনু সুওয়াইদ (রাঃ) বলেন, مَرَّ بِىْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا جَالِسٌ هَكَذَا وَقَدْ وَضَعْتُ يَدِىَ الْيُسْرَى خَلْفَ ظَهْرِىْ وَاتَّكَأْتُ عَلَى أَلْيَةِ يَدِىْ فَقَالَ أَتَقْعُدُ قِعْدَةَ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ. ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি আমার বাম হাত পিঠে নিয়ে তার পাতার উপর বসেছিলাম। তিনি বললেন, ‘তুমি কি তাদের মতো বসছো, যারা অভিশপ্ত’?
    Total Reply(0) Reply
  • Sayem Ahmed ২৯ জুন, ২০১৯, ৯:২৬ এএম says : 0
    মজলিসে বা সভায় বসার পরে কেউ কোন প্রয়োজনে উঠে গেলে তার জায়গায় বসা উচিত নয়। আর যদি কেউ কারো আসনে বসে পড়ে তাহ’লে ঐ ব্যক্তি ফিরে আসলে তার জায়গা তাকে ছেড়ে দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا قَامَ الرَّجُلُ مِنْ مَجْلِسٍ ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ. ‘কোন ব্যক্তি যখন নিজের আসন হ’তে উঠে গিয়ে (কোথাও গিয়ে পুনরায়) ফিরে আসে তাহ’লে সেই হবে তার পূর্বোক্ত আসনের অধিক হক্বদার’।
    Total Reply(0) Reply
  • Delowar Hossain ২৯ জুন, ২০১৯, ৯:২৬ এএম says : 0
    thanks a lot for this news
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন