বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মজলিসের আদব ও শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে এই যে, এর ফলে মজলিস বা অনুষ্ঠানে সভ্যতা, নিয়মানুবর্তিতা এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মজলিসে বা অনুষ্ঠানে যোগদানকারী প্রত্যেকের হক এবং অধিকার সমপর্যায়ভুক্ত হতে হবে। যাতে করে এই মজলিসে যোগদানকারীদের পারস্পরিক ভালোবাসা বর্ধিত হয়, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার পথ সুগম হয়। এ দু’টি দিকনির্দেশনাকে কায়েম রাখার জন্য রাসূলুল্লাহ সা.-এর শরীয়ত ওঠাবসা সংক্রান্ত কিছু শিষ্টাচার মানুষকে শিক্ষা দান করেছে।
মজলিসে যোগদানকারী ব্যক্তির যেখানেই সহজভাবে বসার সুযোগ ঘটবে। অর্থাৎ যে পর্যন্ত বসার স্থান নির্ধারিত সেখানে পৌঁছার পর আসন গ্রহণ করা উচিত। এটা মোটেই সমীচীন নয় যে, পূর্বে আসন গ্রহণকারী সমবেত জনমন্ডলীকে ফাঁক করে অনর্থক সামনে বসার চেষ্টা করা। কেননা, এর দ্বারা প্রথমত, আগে আগমনকারী ও আসন গ্রহণকারীদের কষ্ট হয় এবং দ্বিতীয়ত, এমন পদক্ষেপ গ্রহণকারীর মাঝে অহঙ্কার ও আত্মগরিমার ভাব পয়দা হয়। বিশেষ করে সে নিজ ব্যক্তিত্বের খেয়ালে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সা.-এর মজলিসে এই নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে যে যেখানে স্থান পেতেন সেখানে বসে পড়তেন। একইভাবে মজলিসমূহে দেরিতে আগমনকারী নামাজীদের জন্য মোটেই শোভনীয় নয় যে, তারা অন্যান্য লোকদের ঠেলে সামনের কতারে বসার চেষ্টা করা। সচরাচর জুমার নামাজের দিন এ ধরনের ঘটনার অবতারণা হয়। এ কারণে আমাদের গায়ে পদাঘাত করে অথবা গর্দান হটিয়ে আগে অগ্রসর হওয়াকে (বিশেষ করে জুমার দিন) নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মজলিসে একজনকে উঠিয়ে তার স্থানে বসা উচিত নয়। কেননা, এতে উগ্র মনোবৃত্তি ও আত্মম্ভরিতার মনোভাব প্রকাশ পায়। একই সাথে অন্যের অন্তরে ঘৃণা ও অবজ্ঞার সৃষ্টি হয়। যদি কোনো ব্যক্তি মজলিসে আসন গ্রহণ করার পর কোনো প্রয়োজনে উঠে যায়, তাহলে প্রত্যাবর্তন করার পর সেখানে বসার অধিকার তারই বেশি। অন্য কোনো লোক তার স্থানে বসতে পারবে না। কেননা সে ওই স্থানের ওপর প্রথমেই অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং বিশেষ প্রয়োজনে সেখান থেকে উঠে গেলেও তার পূর্ব দাবি অগ্রাধিকার লাভ করবে।
যদি একই মজলিসের দুই ব্যক্তি পরস্পর মিলিত হয়ে অবস্থান গ্রহণ করে থাকে, তাহলে তাদের অনুমতি ছাড়া তাদেরকে পৃথক পৃথক স্থানে বসানো যাবে না। কেননা, এ দুই ব্যক্তি পরস্পর কথাবার্তা বলার জন্য অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে একসাথে বসেছিল এবং এ দু’জনের বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার ভাবও অবিচ্ছিন্ন ছিল। এ কারণে এ দু’জনকে পৃথক করে দেয়া তাদের কাছে বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এজাতীয় আচরণ অমানবিক বলে বিবেচিত হবে।
যদি কোনো মজলিসে কতিপয় লোক বৃত্তাকারে অবস্থান গ্রহণ করে, তবে কাউকে এককভাবে সে বৃত্তের মাঝখানে আসন গ্রহণ করা উচিত নয়। এ অনুচিত কাজে আগ্রহী ব্যক্তিদের ওপর রাসূলুল্লাহ সা. অভিসম্পাত বর্ষণ করেছেন। কেননা, এমতাবস্থায় কিছু লোকের মুখ তার দিকে হবে এবং কিছু লোকের দিকে তা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে। কেননা, এটা এক শ্রেণীর বদতমিজী ছাড়া কিছুই নয়। এটাও সম্ভব যে, কোনো লোক হাস্যোচ্ছলে এভাবে আসন গ্রহণ করে এবং অন্যদের কৌতুক ছলে হাসায়। এটাও নিতান্তই গর্হিত আচরণ বলে বিবেচ্য।
মজলিসে কারো পাশে অথবা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। কেননা, এটা আজমীদের স্বভাব ছিল। চাকর-বাকর মনিবের এবং প্রজা সাধারণ বাদশাহদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকত। এটা এমন এক অতিরঞ্জিত সম্মানের পন্থা, যার ফলে শিরক ও অংশীবাদিতা প্রকাশ পাওয়া মোটেও অসম্ভব নয়।
এ সম্মান প্রদর্শনের ফলে বাদশাহ ও মনিবরা খোদায়ী আসনের অধিকারী হয়ে যেত এবং অধীনস্থরা তাদের অগ্র-পশ্চাতে নিজেদের ইজ্জত, সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে বিলীন করে দিত। এ শ্রেণীর বৈষম্যদুষ্ট আচরণ ইসলাম কখনো পছন্দ করে না। কারণ ইসলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই পৃথিবীতে আগমন করেছে, মানবতাকে পদদলিত করার জন্য নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।