পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সামাজিক সংকটে বাড়ছে সহিংস কর্মকান্ড। নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে মানুষ। তুচ্ছ কারণে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে দলবেধে বরগুনার রিফাতকে হত্যার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র ঘৃণা ও জড়িতদের দ্রæত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে। অপরাধ ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ এক সামাজিক সংকট। সামাজিক অস্থিরতা, হতাশা এবং আস্থার সংকট সৃষ্টি হলেই মানুষ হয়ে ওঠে নৃশংস ঘাতক।
বরগুনার এই নৃশংস হত্যাকান্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিও’র নির্মম দৃশ্যগুলো মানুষকে হতবাক করে দেয়। এমন দৃশ্য মেনে নেওয়া কষ্টকর। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সবাই। এর পরপরই ফেসবুকে নিন্দার ঝড় বইতে থাকে। ক্ষোভ, ঘৃণা, প্রতিবাদ ও খুনিদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ নিজ নিজ ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দেন।
গতকাল চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বরগুনায় রিফাত নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাকে তিনি সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি বলে মনে করেন না। এই ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অপরাধীদের ধরতে কাজ শুরু করে দিয়েছে। ১০ বছর আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশের দক্ষতায় পার্থক্য আছে।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা না থাকায় সমাজের সর্বস্তরেই অপরাধ কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাপধীদের সাহস যোগাচ্ছে। সমাজে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতাই এ ধরনের নৃশংস আচরণের জন্য দায়ী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা কমে গেছে। আগে অন্যায় করলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করতো, এখন তা নেই। ছোট কিংবা বড় কোন অপরাধের পর দ্রæত জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এ ধরনের ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নূর খান আরো বলেন, ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনাচার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। যে কারণটি বিশেষভাবে দায়ী বলে মনে করি তা হলো- বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। এর সঙ্গে ভয়ের সংস্কৃতি মিলেমিশে অপরাধীদের স্বর্গারাজ্যে পরিণত হচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তর। প্রায় সর্বক্ষেত্রে আইন অমান্য করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে। গোটা সমাজকে ভয়ের পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারই প্রতিফলন স্বরূপ নানা ধরনের সামাজিক অনাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অপরাধীদের মধ্যে সাহস যোগাচ্ছে।
পুলিশের সাবেক আইজি নুরুল হুদা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে দল বেধে প্রকাশে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ব্যক্তিগত পর্যায়ের অবক্ষয়। জড়িতদের দ্রæত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এ ধরনের অপরাধ কোনভাবেই কাম্য নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, সমাজে এমন বর্বর ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিক ও পারিবারিক আন্দোলন আরো জোরালো করতে হবে। ন্যায় বিচার ও মানুষের বাকস্বাধীনতা দিতে হবে। অপরাধীকে দলীয় বা নিজের লোক বিবেচনা না করে অপরাধী হিসেবে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া হোসাইন অনিমেষ তার ওয়ালে লেখেন, খুন করা ঠেকাতে মানুষ এগিয়ে আসেনি কেনো? তার চাইতে বড় প্রশ্ন দেশে কোন কোন রাজনৈতিক শক্তি ও চিন্তা এবং আদর্শের সমন্বয়ে এমন এক অবিচার-বিচারহীনতার অবস্থা তৈরি হইছে যে, খুনিরা মুখ না ঢেকেও দিনের আলোয় প্রকাশ্যে এত সময় ধরে খুন করতে পারে। খুনিরা কারা? তাদের এই সুপার পাওয়ারের উৎস কী? কীভাবে এই সুপার পাওয়ার খুনিদের পেছনে জমা হলো? যারা খুন করা ঠেকাতে যাবে, তারা কি ওই সুপার পাওয়ারওয়ালা খুনিদের কাছে নিরাপদ?
কানাডা প্রবাসী ক্রীড়া সাংবাদিক ফরহাদ টিটোর স্ট্যাটাস, প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা তখনই হয়, যখন অপ্রকাশ্য অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে আইন আর বিচার প্রক্রিয়া।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়- গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা শহরের কলেজ রোডে স্ত্রীর সামনে রিফাতকে কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। ওই হামলার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক চড়াও হয়েছেন রিফাতের উপর। তাদের মধ্যে দুজন রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। রিফাতকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। কিন্তু, পারেননি। রিফাতের স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। হামলাকারী যুবকরা রিফাতকে রক্তাক্ত করে সবার সামনে দিয়েই চলে যায়।
পরে রিফাতকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ হামলার জন্য বরগুনা পৌরসভার ক্রোক এলাকার নয়ন বন্ড নামে এক যুবককে দায়ী করেন রিফাতের স্ত্রী। এছাড়াও রিফাত ফারাজী, রাব্বি এবং আকন নামের কয়েকজনের কথাও তিনি বলেছেন। বরগুনার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, রিফাতের স্ত্রী স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্রী। দুই মাস আগে তাদের বিয়ে হয়।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের জেলা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা মাঠে কাজ করছে। বলতে পারেন সব পুলিশ মাঠে। যে কোন মূল্যে এই হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।