Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্লট কেলেঙ্কারি তদন্তে দুদক

রাজশাহী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বনলতা আবাসিক এলাকার ৩১টি প্লট কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তদন্তে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনলতার মূল্যবান ৩১টি প্লট দুর্নীতির অভিযোগে বঞ্চিতরা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। যাচাই বাছাই শেষে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে দুদক অঞ্চল রাজশাহীর উপ-পরিচালককে অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়। জুনের প্রথম দিকে প্লট কেলেংকারির অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিযুক্ত হন দুদকের সহকারী পরিচালক মে. আল-আমিন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি ২৪ জুন আরডিএ’র চেয়ারম্যানকে তথ্য সরবরাহের জন্য চিঠি দেন।


সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বনলতা আবাসিক প্রকল্পের ১৯৩টি সরকারি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় ক্ষতিগ্রস্থসহ মোট ১৫টি ক্যাটাগরিতে। ওই সময় প্রতি কাঠার দাম ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত পরিপত্র অনুযায়ী, শতকরা ৫ ভাগ হিসাবে আরডিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ভাগে পড়ে মোট ১০টি প্লট। কিন্তু আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে মাত্র ৪ জন প্লটের জন্য আবেদন করেন। ফলে আরডিএ কোটার অবশিষ্ট ৬টি প্লট রেজ্যুলশান করে পরে অপেক্ষমান তালিকার অন্য কোটার আবেদনকারীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এদিকে ২০১৭ সালে একই প্রকল্পের অবশিষ্ট ৩১ প্লটের জন্য আবেদন নিয়ে একই হিসাবে প্লট ভাগ-বন্টন করা হয়। তবে এবারে রহস্যজনক কারণে ক্যাটাগরির সংখ্যা কমিয়ে মোট ৯টি করা হয়।
বঞ্চিতদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৩১ মে আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস ও এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামান চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে নিজেদের মধ্যে প্লট ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। সরকারি কোটা অনুয়ায়ী শতকরা ৫ ভাগ হিসাবে ৩১ প্লটের মধ্যে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারিদের ভাগে পড়ে সর্বোচ্চ ২টি প্লট। কিন্তু এই ৩১ প্লটের মধ্যে চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এস্টেট অফিসারসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন। বনলতার প্লটের বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নেন সবচেয়ে বড় আয়তনের ৭ কাঠার একটি প্লট। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ৫ কাঠা ও এষ্টেট অফিসার বদরুজ্জামান নেন ৬ কাঠার প্লট। এছাড়া চেয়ারম্যানের পিয়ন ইউনুস আলী ২টি, অথরাইজড অফিসারের পিয়ন রেজাউল করিম দুটি, আরডিএর নিম্নমান সহকারি শামসুন্নাহার নুন্নী দুটি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ীচালক শরিফুল ইসলাম ১টিসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন।


অভিযোগকারীরা বলেছেন, ৩১ প্লটে জমির পরিমাণ ৬৬ কাঠা। এর মধ্যে আরডিএ’র কর্মকর্তা কর্মচারিরাই নিয়েছেন ৩১ কাঠা। এই হিসাবে অর্ধেক প্লটই তারা নিয়েছেন। তারা আরও বলছেন, পুর্বপরিকল্পনা মোতাবেক নিজেদের মধ্যে প্লট ভাগাভাগির লক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ কোটায় কোনো প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। উপরন্ত ২০১৩ সালে যে প্লটের দাম ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিল, ৪ বছর পরও একই দামে প্লট দেয়া হয়েছে।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, প্লটের মুল্যের ওপর আরডিএ শতকরা ১৩ ভাগ হারে সুদ গ্রহণ করে থাকে। এই হিসাবে ২০১৭ সালে কাঠা প্রতি এসব প্লটের দাম পড়ে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। চার বছর আগের মুল্যে প্লট বরাদ্দের ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।
রাজশাহী সমন্বিত দুদক অঞ্চলের সহকারি পরিচালক (এডি) ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. আল-আমিন এই চিঠি দিয়েছেন। আগামি ১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র সরবরাহের জন্য সংস্থার চেয়ারম্যান বজলুর রহমানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। তথ্য হাতে পাওয়ার পর অনুসন্ধানের মূলকাজ শুরু করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ