বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মাদক কারবারিদের সোজাপথে আসার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, এখনও সময় আছে এসব ছেড়ে দিয়ে সোজা পথে আসুন। আর তা না হলে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। দেশে মাদকের ভয়াল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে মাদকমুক্ত করা হবে।
জঙ্গি দমনে আলেম-ওলামা, মসজিদের ইমাম-খতিবগণ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক এবং সন্ত্রাস নির্মূলেও জনগণকে পুলিশের পাশে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। মাদকের আগ্রাসন বন্ধ করা না হলে এ গতি থমকে যাবে। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে মাদক, জঙ্গি ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিউনিটি পুলিশিং মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
বর্ণাঢ্য এ মহাসমাবেশকে ঘিরে নগরজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। দুপুরের পর নগরীর ১৬টি থানা এলাকা থেকে কমিউনিটি পুলিশের বর্ণাঢ্য র্যালি দামপাড়া পুলিশ লাইনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে এক বিশাল র্যালি মহাসমাবেশ স্থলে এসে শেষ হয়। মহাসমাবেশকে ঘিরে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও পয়েন্টে আলোকসজ্জা এবং মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী বর্ণিল প্লে-কার্ডে সাজানো হয়।
প্রধান অতিথি আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দেশে ৮৭ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। যুবসমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধ করা না গেলে আমরা উন্নত দেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। মাদক এখন সামাজিক ব্যাধি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ কোন মাদকই দেশে তৈরি হয় না সীমান্ত হয়ে এসব মাদক দেশে আসে। মাদক প্রতিরোধে বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ সীমান্তে নিয়োজিত বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। পুলিশ দেশে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে মাদক আইন পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ সাজার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে তিনি কমিউনিটি পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং ধর্মপ্রাণ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষ পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখানে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে এদেশের মানুষ বিশেষ করে আলেম-ওলামাগণ যেভাবে জঙ্গিবাদ রুখে দাঁড়িয়েছে। এখন মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও জনগণ রুখে দাঁড়াবে। পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নৌ পুলিশ, শিল্প পুলিশ, পিবিআইসহ বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত ইউনিট অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ উন্নয়ন টেকসই করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। দেশে শান্তি থাকলে উন্নয়ন হবে, বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
মুখ্য আলোচক পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে কিঞ্চিৎ সাফল্য এসেছে। পুরোপুরি সফল হতে সামাজিক আন্দোলন এবং জনগণের সহযোগিতা দরকার। মাদক যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে পরিবার এবং সমাজ থেকে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র পুলিশি অভিযানে মাদকের ভয়াবহতা কমানো যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, শেখ হাসিনার উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। যারা প্রশাসনে আছেন এবং জনগণের প্রতিনিধি তাদেরকেও এসব অপরাধ থেকে দূরে থাকতে হবে। চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, উন্নয়ন-বিনিয়োগ ও জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, শুধু ক্রসফায়ার দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। মাদকের উৎস বন্ধ করতে হবে। সিএমপির কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী, সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন ও এম এ লতিফ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশের সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ স্বপন। মহাসমাবেশে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল কমিউনিটি পুলিশিংয়ে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কার বিতরণ করেন।
এর আগে সকালে নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ১০ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ প্রদান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন- অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরা বেগম (মরণোত্তর), এআইজি তাপতুন নাসরীন, অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শম্পা রাণী সাহা, পুলিশ সুপার মাহফুজা বেগম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাহফুজা লিজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহমিদা হক শেলী, পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসীন, এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস ও বেতার কনস্টেবল নুসরাত জাহান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।