বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বস্ত প্রমাণাদি দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, দাড়ি রাখা সমস্ত নবী-রাসূলগণের সুন্নাত ও ইসলামীরীতি। বিশ্ব সভ্যতার উজ্জ্বল প্রতীক হযরত মুহাম্মাদ সা. বলেন, দশটি বস্তু সমস্ত নবীদের সুন্নাত। এগুলোর মধ্যে গোঁফ কাটা ও দাড়ি লম্বা করা অন্যতম। (সহীহ মুসলিম : ১/১২৯)।
সাথে সাথে অনেক হাদিসে দাড়ি রাখার প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যেমন একটি হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, বহুঈশ্বর বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধাচরণ করো। দাড়িকে লম্বা করো এবং গোঁফকে ছেঁটে ফেল। (সহীহ বুখারী : ২/৩২৪)।
অন্য একটি হাদিসে আছে, রাসূল সা. বলেন, লূত আ.-এর সম্প্রদায়ের দশটি বদ অভ্যাস ছিল, যার ফলে তারা ধ্বংস ও বিনাশ হয়েছে। এগুলোর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সমকামিতা, বাদ্যযন্ত্র বাজান, মদ্যপান, দাড়ি কাটা এবং গোঁফ লম্বা করা। (দুররে মানসুর : ৪/৩২৪)।
দাড়ি একটি ইসলামী রীতি হওয়ার পাশাপাশি এর অনেক চিকিৎসা উপদেশ ও শরীরিক উপকার নিহিত রয়েছে। নিম্নে দাড়ির কয়েকটি উপকার উল্লেখ করা হলো-
ক. মানবদেহে তিনটি অঙ্গ এমন আছে, যা চিকিৎসকদের ঐক্যমতে সম্মানী অঙ্গ। যেমন আল্লামা আলাউদ্দীন কোরেশী রহ. লিখেছেন, দেহের অত্যাবশ্যকীয় শক্তির উৎস হচ্ছে ওই সব অঙ্গ, যেগুলোকে অঙ্গরাজ্য বলা হয়। প্রথমটি হচ্ছে হৃদপিন্ড, দ্বিতীয়টি হচ্ছে মস্তিষ্ক আর তৃতীয়টি হচ্ছে কলিজা। (মিজানুল কানুন-১২)।
এই তিন অঙ্গের ওপরই শরীরের অস্তিত্ব নির্ভর করে। এ জন্যই যদি এগুলোর কোনো একটি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে, তবে মানব অঙ্গের পূর্ণ শৃঙ্খলা বিপথগামী হয়ে পড়ে। এজন্য চিকিৎসকদের নিকট এগুলোর চিকিৎসা ও যত্ম অত্যাবশ্যক। এই তিন অঙ্গের মধ্যে শ্মশ্রুর একেবারে নিকটে হচ্ছে মস্তিষ্ক। যদি দাড়ি মুন্ডানো হয়, তবে মস্তিষ্ক আক্রান্ত না হয়ে পারবে না। এ কারণে বর্তমান যুগে মস্তিষ্কের শক্তি পূর্বের তুলনায় দুর্বল। যখন মস্তিষ্ক হৃদয়গ্রাহী হবে, তখন এর প্রভাব পুরো শরীরে পড়ে।
খ. হাকীম শামিম আহমদ সাহেব লিখেছেন, দাড়ির নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে চোখ। দাড়ি মুন্ডানোর ফলে চক্ষু অবশ্যই ফলোৎপাটিত হবে। এ জন্যই আমাদের যুগে সচরাচর দৃষ্টিশক্তি অকর্মন্য হয়ে পড়েছে। আরেক জন অভিজ্ঞ ডাক্তার বলেন, শ্মশ্রুর ওপর বারংবার ক্ষুর চালানোর ফলে চোখের ধমনীতে তার প্রভাব বিস্তার করে। ফলে তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে পড়ে। (দাড়ি কা উযূব-২৭)।
গ. মানবদেহে কিছু বাষ্পীয় পদার্থ থাকে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা দাড়ি ও অন্যান্য পশমকে ভেতর থেকে শূন্যমার্গ ও প্রণালী স্বরূপ সৃষ্টি করেছেন, যেন তার বিষগুলো এসবের মাধ্যমে বের হয়ে যায় এবং দেহে এগুলো শোষিত না হয়। এখন যদি দাড়িকে মুন্ডানো হয়, তবে তার যেসব প্রণালী দিয়ে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের হয়, সেগুলো একবারেই চামড়ার কাছে চলে যায়। আর এতেই বিষাক্ত পদার্থগুলো ভেতর থেকে বের হয়ে চামড়ায় বিস্তৃত হয়ে পড়ে, যার ফলে চামড়া অবশ্যই স্পর্শকাতর হয়।
এ জন্যই যারা সবসময় দাড়ি মুন্ডায় তাদের মুখে নানা ধরনের খোশ-পাঁচড়া দেখা দেয়। এখানে এই সন্দেহ না হওয়া চাই যে, মাথার চুল কাটাও ক্ষতিকর হবে। কারণ উভয় চুলের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। কেননা দাড়ির মুখ নিচের দিকে আর মাথার চুলের মুখ ওপরের দিকে। তাই একটার সাথে অন্যটাকে তুলনা করা বৈধ হবে না।
এরকম হাজারো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে দাড়ি রাখার পক্ষে। নিবন্ধ বড় হয়ে যাবে বিধায় সবগুলো বর্ণনা করা গেল না। মোট কথা, দাড়ি রাখা শুধুমাত্র শরীয়তের বিধান নয়; বরং সুস্থ অভিসন্ধি ও তী²বুদ্ধিরও পরিচায়ক। দাড়ির মধ্যে অনেক জ্ঞানগত স্বাস্থ্যগত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সুতরাং বিপরীতমুখী রাস্তা অবলম্বন করা শুধু শরীয়ত থেকেই মুখ ফেরানো নয়; বরং মানব প্রকৃতি ও সুষ্ঠু জ্ঞানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার নামান্তর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।