বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
রাসূলুল্লাহ সা.-এর নবুয়ত লাভের পূর্বে ইয়াহুদী মতবাদ এবং খ্রিষ্টান মতবাদের যুগ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল, সারাবিশ্ব তখন এমন একটি ধর্মমতের অপেক্ষা করছিল, যা এই উভয়বিধ মতবাদের পরিপূর্ণতা এনে দেবে। ইসলাম দুনিয়ার এই পরিপূর্ণতা সাধনের জন্য আগমন করে। একই সাথে সিলসিলায়ে নবুয়তের বিচ্ছিন্ন হওয়া এই কড়া দু’টিকে পরস্পর মিলিয়ে দেয়। ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফ এমন একটি বস্তু, যা দুনিয়ার নিয়ম-শৃঙ্খলাকে কায়েম রেখেছে। তার সাথে ইহসান, দয়া, বন্ধুত্ব, পারস্পরিক সহমর্মিতার সংমিশ্রণ তাকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলেছে। যার অবশ্যম্ভাবী ফলশ্রুতিস্বরূপ তখনও পর্যন্ত দুনিয়ার আইন ও নিজাম অসম্পূর্ণ ছিল।
হযরত মূসা আ.-এর শরীয়ত ছিল ইনসাফ ও আদল প্রতিষ্ঠার মূর্ত প্রতিচ্ছবি। এর মাঝে ইহসান ও ক্ষমার নৈতিক আকর্ষণ অনেক কম রাখা হয়েছিল। অনুরূপভাবে হযরত ঈসা আ. আগমন করেন রহমতের প্রতিচ্ছবি হয়ে। তার শরীয়তে আদল ও ইনসাফ কায়েম করার প্রাণশক্তি খুবই কম পাওয়া যায়।
হযরত মূসা আ.-এর শরীয়ত দুনিয়ার জন্য আদল ও ইনসাফের যে নীতি ও বিধান কায়েম করেছিল এর বিপরীতে হযরত ঈসা আ. স্বীয় নৈতিক শিক্ষার ঘোষণা এসব শব্দে তুলে ধরেছিলেন, ‘তোমরা এ কথা শুনে থাকবে যে, চোখের বদলে চোখ এবং দাঁতের বদলে দাঁত; কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমরা মন্দকে মন্দের সাথে মোকাবেলা করো না; বরং যে ব্যক্তি তোমাদের ডান গালে চড় মারবে, তার সামনে বাম গালটিও পেশ করে দাও। যে ব্যক্তি যুদ্ধ ও ঝগড়ার লক্ষ্যে তোমাদের কাপড় টেনে ধরবে তাকে স্বীয় চাদরটিও দিয়ে দাও।
যে ব্যক্তি এক মাইল পর্যন্ত তোমাকে বোঝা বহনকারী হতে বাধ্য করে, তার সাথে দু’মাইল পর্যন্ত চলে যাও। যে তোমার কাছে কিছু চায়, তাকে দান করো। যে তোমার নিকট ঋণ চায়, তাকে ফিরিয়ে দিও না। তোমরা এ কথাও শুনে থাকবে যে, নিজের বন্ধুদের সাথে ভালোবাসা এবং শত্রুর সাথে শত্রুতা রাখ। কিন্তু আমি তোমাদের বলছি যে, তোমরা শত্রুদের সাথে ভালোবাসা রাখ।
হযরত ঈসা আ.-এর পূর্বে দুনিয়াবাসীকে যা কিছু বলা হয়েছিল অথবা শোনানো হয়েছিল, তা হযরত মূসা আ.-এর কানুন ছিল, যা ছিল সামগ্রিকভাবে আদল ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু পরবর্তীতে যা কিছু দুনিয়াবাসী হযরত ঈসা আ.-এর জবান হতে শুনেছিল, তা ছিল পুরোপুরি আখলাক, রহমত ও ইহসানের বাণী। কিন্তু ইসলাম আদল ও ইহসানের মাঝে সংমিশ্রণ করে দুনিয়ার শাসন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে তুলেছে।
পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আদল ইহসান প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিচ্ছেন। এই নির্দেশ ছিল মূলত সাংবিধানিক শিক্ষা, যে শিক্ষা হযরত মূসা আ. ও হযরত ঈসা আ.-এর শরীয়তের সেই পৃথক বৈশিষ্ট্যগুলোকে এক স্থানে একত্রিত ও সুসংহত করে দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।