Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৃত্যুর জন্য ভিড় জমায় মানুষ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

তিনি আমাকে নোনতা স্বাদের নিমকি খাওয়ার জন্য বেশ জোরাজুরি করছিলেন। যখন তাকে আমার কোনো ক্ষুধা নেই বলে জানালাম, তিনি বেশ মনোক্ষুন্ন হলেন। অনেকটা দাবির সুরেই বললেন, যদি তুমি কিছু না খাও তাহলে আমি তোমাকে কিছুতেই যেতে দেবো না। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা স্বরসতি আগারওয়াল এভাবেই প্রথম দেখায় আমাকে অল্প সময়ের মধ্যেই আপন করে নিয়েছিলেন প্রতিবেদককে। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে এ নারী তেমন কিছুই বলেননি। আমি যে হোটেলে উঠেছি সে হোটেলেই থাকেন স্বরসতি। ওই হোটেলের ম্যানেজার মানিশ কুমার পান্ডের কাছে স্বরসতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বরসতির কোনো সন্তান নেই। তার বাড়ি বারানসির কাছাকাছি কোথাও হবে। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি গত চার বছর ধরে এই হোটেলেই থাকেন। রাজস্থান থেকে আসা গায়ত্রী দেবীও গত পাঁচ বছর ধরে এখানেই থাকেন। তার এক সন্তান ও দুই কন্যা অন্য জায়গায় নিজেদের মত করে থাকেন। তারা কালেভদ্রে নিজের মাকে দেখে যান। কাঠের একটি বেঞ্চে বসে গায়ত্রী দেবী অনেকটা আক্ষেপের হাসি হেসে বলেন, যখন আপনার সন্তানরা বিয়ে করবে দেখবেন তখন সবকিছুই বদলে গেছে। বঞ্চের অপরপ্রান্তে বসে থাকা সাথি দেবীও নীরবে মাথা নাড়িয়ে গায়ত্রী দেবীর কথায় সম্মতি দিলেন। তিনিও গত পাঁচ বছর ধরে এ বারানসিতে একাকী বসবাস করছেন।

আমাদের আলাপচারিতায় তিনি কোনো কথা বললেন না। গায়ত্রী দেবী বলে চলেন-অবহেলা সত্তে¡ সন্তানদের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি এখনো আশা করি, যখন আমি মারা যাবো সন্তানরা আমার শবদাহ করার জন্য এখানে ঠিক ছুটে আসবে। স্বরসতি, গায়ত্রী ও সাথি দেবীদের সাথে পাশের আরেকটি হোটেলে থাকেন ভিমলা দেবী। হায়দ্রবাদ থেকে এসে তিনি গত ৪০ বছর ধরে এ হোটেলে জীবন অতিবাহিত করছেন। তাদের এ হোটেলে থাকার কারণ মৃত্যু! তারা সবাই এ হোটেলে থেকেই অপেক্ষা করছেন কখন তাদের মৃত্যু হবে। তাদের বিশ্বাস পবিত্রভূমি বারানসিতে তাদের মৃত্যু হলে তারা স্বর্গে যাবে। একইসঙ্গে জন্মচক্র থেকে নিজেদের পরিত্রাণ ঘটবে। সনাতনধর্মালম্বীদের কাছে বিশ্বের অন্যতম পবিত্র শহর উত্তর প্রদেশের এই বারানসি। যেটা বেনারস বা কাশি নামেও পরিচিত। ভারতের পৌরাণিক কাহিনী মহাভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্র পঞ্চপান্ডব তাদের চাচাতো ভাইদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভের পর নিজেদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে এখানেই হাজির হয়েছিলেন। সেই ধারণা থেকেই শত শত বছরে ধরে মানুষ এখানে ভিড় জমান। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ