Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শনাক্তকরণ নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে উত্তেজনা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৪ জুন, ২০১৯

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) সময় ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের প্রতি কাঠামোগত বৈষম্যের অবসান ঘটাতে সেদেশের সরকারের কাছে আবারও আবেদন জানিয়েছে বড় রাজনৈতিক দল ও নাগরিক অধিকার আদায়ের সংগঠনগুলো। আসামে ৩২ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৪০ লাখ মানুষ সংশোধিত ভারতীয় নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন কার্যক্রম হালনাগাদকরণের অংশ হিসেবে নাগরিকত্বের তথ্যগুলো পরীক্ষা করছে আসাম ও এনআরসি কর্তৃপক্ষ। যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তাদের বেশিরভাগই বাঙালি মুসলিম ও হিন্দু। ‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ রেখেছে আসাম কর্তৃপক্ষ। এদের অনেকেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাস করছে। এনআরসি বা নাগরিক নিবন্ধন তালিকাকে কেন্দ্র করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন আসামের তিন বাঙালি অধ্যুষিত জেলা কাচার, করিমগঞ্জ ও হালিয়াকান্দিতে উত্তেজনা ঘনীভূত হচ্ছে। তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বেশিরভাগই এসব এলাকার মানুষ। শুরু থেকেই এ তিন জেলায় বিক্ষোভের ঝড় চলছে। অনেক জনকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় তা নিয়ে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছে। যাদেরকে ‘অনাগরিক’ কিংবা ‘সন্দেহজনক নাগরিক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন ধর্মীয় কিংবা ভাষাগত জায়গা থেকে তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। অনেকে আবার অভিযোগ করেছেন, নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তারা এনআরসি কর্মকর্তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক যে নথিপত্র জমা দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কারও কারও অভিযোগ, দরিদ্র ও কম শিক্ষিত মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন। তবে এসব অভিযোগ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এনআরসি।

আসামে ভারতীয় নাগরিকদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩১ জুলাই। তীব্র জন বিক্ষোভের মুখে এনআরসি প্রকাশের নতুন সময়সীমা ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তালিকা হালনাগাদকরণের আদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কতিপয় স্থানীয় কর্মকর্তার কাছে উপেক্ষিত হওয়া নাগরিকত্বের বিশুদ্ধ প্রমাণ ও অভিযোগগুলো আমলে নিতে থাকে আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি যদি তালিকা থেকে তার বাদ পড়াকে চ্যালেঞ্জ করেন তবে তিনি তার দাবির পক্ষে অতিরিক্ত নথি জমা দিতে পারবেন। আদালতের এ আদেশ ভুক্তভোগীদের মধ্যে খানিক স্বস্তি নিয়ে আসে। সময়সীমা এগিয়ে আসায় আসামের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ও আতঙ্ক ভর করেছে। তাদের এ আতঙ্ক অমূলক নয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ‘বিদেশি’ হিসেবে শনাক্ত হওয়া এমন কয়েক লাখ মানুষকে কখনও ফেরত পাঠানো হবে কিনা তা নিশ্চিত করার মতো কোনও পদ্ধতি নির্ধারিত হয়নি। প্রভাবশালী রাজনীতি বিশ্লেষক সুবির ভৌমিক মনে করেন, যথাযথভাবে পরিস্থিতি সামলানো না হলে তা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে তিক্ত করবে। দ্য কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাক্সিস্ট) আসাম ইউনিট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে, যেন বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া মানুষদের পরিণাম কী হবে তা স্পষ্ট করা হয়। এ ধরনের স্পর্শকাতর ইস্যু ঝুলিয়ে না রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল ঘোষণা করেছেন, কোনও বিশুদ্ধ নাগরিককে কোনোভাবে হয়রানি করা হবে না। তবে বাঙালি হিন্দু কিংবা মুসলিমদের কেউই এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কারগিল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তা ‘নাগরিকত্ব না থাকা’র অভিযোগে কিছুদিন আগে গ্রেফতার হন এবং তার জেল হয়। কারণ তার কিছু কাগজপত্র ঠিক ছিল না। তার বাবাও আসামের স্থায়ী বাসিন্দা। এ মামলাটি বেশ শোরগোল তুলেছিলো। ধরে ধীরে জানা গেলো, যে কর্মকর্তা এ মামলার দায়িত্বে ছিলেন তিনি বেশ কয়েকটি বড় ভুল করেছেন। আসামের আরেকটি ঘটনায় দেখা গেছে, দুই/তিন বছর আগে উত্তর বিহার থেকে আসা হিন্দি ভাষাভাষী এক ব্যক্তি এনআরসি’র কর্মকর্তাদের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছেন। সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ