Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নৌ-পারাপারে ঝুঁকি

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৯, ৬:৪৮ এএম

ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে নৌকা পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হলেও উপেক্ষা করছে স্থানীয়রা। ঘাটে নৌকায় যে যার মতো যাত্রী ওঠায়, লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যাচ্ছে ছোট-বড় নৌকা। নৌকা পারাপারে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এরপরও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বিআইডবিøউটিএ’র। লঞ্চের ধাক্কায় প্রায়ই ঘটছে নৌকাডুবি, প্রাণ হারাচ্ছে নদী পারাপারের চেষ্টায় থাকা বাসিন্দারা। গত বৃহস্পতিবার নদী পারাপারের সময় লঞ্চের ঢেউয়ের ধাক্কায় ডুবে যায় ছোট আকারের একটি নৌকা। প্রাণ হারায় দুই শিশু।

গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে এমভি রিয়াদ নামের একটি লঞ্চের তলা ফেটে অর্ধেক পানিতে ডুবে যায়। লঞ্চের তলা ফেটে পানি উঠতে শুরু করলে অন্য ট্রলার গিয়ে লঞ্চযাত্রীদের উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে যায়। প্রাণে বেঁচে যান ২০০ যাত্রী।

এদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয় গতবছর নৌপথে ১৫০টি দুঘর্টনায় ১২৬ জন নিহত ও ২৩৪ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৩৮৭ জন।

সদরঘাট দিয়ে ঢাকা ছাড়েন এবং ঢাকায় আসেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের একটি বড় অংশ। আশপাশে কেবল নৌকা চলাচলের জন্য রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘাট। এসব ঘাট থেকে নৌকার মাধ্যমে নদী পারাপার হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। এর মধ্যে নৌবন্দরের বুক চিড়ে যেসব নৌকা অপর পারে যায়, ঝুঁকিতে বেশি তারাই।

সদরঘাট বাবুবাজার মিটফোর্ড ঘাট গড়ে উঠেছিল অনেক আগেই। এ ঘাটে বর্তমানে যারা নৌকা চালান তাদের কেউই এ ঘাটের গোড়াপত্তন দেখেননি। তবে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বাবু বাজার থেকে জিনজিরা পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে একটি সেতু, নাম বাবুবাজার ব্রিজ। তবু বন্ধ হয়নি নৌকা পারাপার। স্থানীয়রা জানান, সেতু দিয়ে নদী পার হতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগে। তাই সেতু ব্যবহার না করে তারা নৌকা দিয়েই পার হন। মো. সুমন নামে এক বাসিন্দা কে বলেন, ব্রিজ দিয়া সময় লাগে। নৌকায় তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়।

আবার সড়ক পথের তুলনায় নদী পথে যাতায়াত খরচ কম উল্লেখ করে বলেন, বাবু বাজার থেকে কেরানীগঞ্জ বোটে গেলে ভাড়া ১০ টাকা। ব্রিজ পার হইয়া গাড়িতে গেলে ভাড়া লাগে ৫০ টাকা। রায়হান হোসেন নামে এক যুবক বলেন, ব্রিজে ওঠা-নামা ঝামেলা। টাইম লাগে। নৌকায় ঝামেলা নাই। পাঁচ টাকা দিয়া পাড় হই। স্থানীয়দের এমন গোড়ামির কারণে সেতু থাকার পড়েও শত শত নৌকা প্রতিদিন কাজ করছে এ অঞ্চলের মানুষদের পারপার করতে। জিনজিরা, কেরানীগঞ্জ থেকে নৌকায় করেই রোগীও আনা-নেয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। বুড়িগঙ্গা নদীর কুড়া ঘাট, নলগলা মসজিদ ঘাট, রাজার ঘাট, ইমানগঞ্জ ঘাট, পান ঘাট, ছোট কাটারা ঘাট, চাম্পা তলি ঘাট, মাছ ঘাট, সোয়ারি ঘাট, বালু ঘাটসহ প্রায় সকল ঘাটেই অবাধে নৌকা চলাচল দেখা গেছে। নদীতে নৌকা চালানো মাঝিদের মতে, সদরঘাটের মূল অংশের বাহিরে নৌকা চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

জাকির হোসেন নামের একজন মাঝি জানান, তিনি সাত বছর ধরে এখানে নৌকা চালান। কখনো দুর্ঘটনার শিকার হননি। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের এই বাসিন্দা ঢাকা বলেন, সিপের লগে, লঞ্চের লগে ধাক্কা লাগব ক্যান, আমরা দেইখা চালাই না?’ নদীর এ অংশকে নিরাপদ দাবি করে জাকির বলেন, একসিডিন (দুর্ঘটনা) হয় সদরঘাটের দিকে। ওইহানে কামাই বেশি, রিস্কও বেশি। আমরা দিনে কামাই তিনশো টাকা, ওরা কামায় হাজার-বারোশো। নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়েও তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দা শিরিন আক্তার বলেন, কই একসিডিন? আমি তো প্রতিদিন যাই আসি। কিছুই তো হয় না।

কামরাঙ্গীরচর কুড়াঘাট এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক হোসেন জানান, নদীতে নৌকা পারাপার ঝুঁকিমুক্ত এ তথ্য ভুল। প্রতিদিনই এখানে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। তিনি বলেন, নৌকায় ইচ্ছা মতো যাত্রী উঠায়, ডুইবা যায়। সিপে ধাক্কা দেয়, টলারের ঢেউ লাইগা নৌকা থিকা পইড়া যায়। এগুলা তো প্রতিদিনই দেখি। কে কয় একসিডেন্ট নাই? অর্থ বাঁচাতে এ অঞ্চলের মানুষ নিয়মিত জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে বলে মনে করেন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। বলেন, এইদিকে অনেক অল্প আয়ের মানুষ আছে। গাড়িতে গেলে খরচ বেশি, তাই তারা নৌকায়, ট্রলারে যায়। সদরঘাট নৌ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি আছে।

তিনি বলেন, নদীতে নিরাপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি। নদীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নৌকা চলাচল নিরাপদ করতেও আমরা চেষ্টা করছি।’ ওয়াইজঘাটের নৌকার ঘাটটি অনিরাপদ। তিনি আরো বলেন, এর আগে আমরা বন্ধের চেষ্টা করেছিলাম। তখন গার্মেন্টসের লোকজন দিয়ে এসে তারা আন্দোলন শুরু করেছিল। এই ঘাটটা বন্ধ করলে সদরঘাট এলাকায় দুর্ঘটনা কমে যাবে।

গতকাল শনিবার দুপুরে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে এমভি রিয়াদ নামের একটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। বেলা আড়াইটার দিকে লঞ্চটি চায়না চ্যানেল অতিক্রম করার সময় বালুবোঝাই একটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে লঞ্চের তলা ফেটে যায়। মূহূর্তেই পানি উঠে ডুবে যেতে থাকে লঞ্চ। অবস্থা বেগতিক দেখে আশপাশে থাকা ট্রলার গিয়ে লঞ্চযাত্রীদের উদ্ধার করে। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটিতে প্রায় ২০০ যাত্রী ছিলেন।

লঞ্চের মালিক ইমাম খান সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তারা নিরাপদে যে যার গন্তব্যে যাচ্ছেন। সবাই নিরাপদে আছেন।

বিআইডবিøউটিএর কাঁঠালবাড়ী লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তলা ফেটে লঞ্চটিতে পানি উঠে অর্ধেক ডুবে যায়। লঞ্চের সব যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে লঞ্চটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, সদর ঘাটে যে যার মতো যাত্রী উঠায় এবং নামায়, লঞ্চের ধাক্কায় যাত্রীরা পানিতে মারা যাচ্ছে কেউ দেখছে না। প্রতিদিনই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। তিনি বলেন, গতবছর নৌপথে ১৫০টি দুঘর্টনায় ১২৬ জন নিহত ও ২৩৪ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৩৮৭ জন। এ দুঘর্টনা কমাতে হলে আগে ঘাটের অবৈধ ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নৌ-পারাপার

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->