মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আমেরিকান ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করায় ইরানে সামরিক হামলার অনুমতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে হামলা চালানো হবে এমন প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল (শুক্রবার) ভোরে প্রাথমিকভাবে ইরানের রাডার ও মিসাইল ব্যাটারি লক্ষ্য করে সামরিক হামলার অনুমতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, হামলার জন্য যুদ্ধবিমান ও জাহাজ প্রস্তুত ছিল। তবে হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় হামলা চালানো হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরান খুব বড় ভুল করেছে, দেশটিতে হামলার আবশ্যকতা থাকলেও নিজের যুদ্ধবিরোধী মনোভাব থেকে তিনি আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান চাইছেন। ওমানের মাধ্যমে তেহরানকে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। ইরানি কর্মকর্তারা এই বার্তা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে আলোচনার সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি সর্বোচ্চ নেতার ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন তারা। ইরানের ওপর হামলা চালানো হলে বদলা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছে তেহরান।
পেন্টাগন ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশের অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, আন্তর্জাতিক সীমার মধ্যে অবৈধভাবে ইরান তাদের ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ড্রোনটি ছিল আন্তর্জাতিক পানিসীমার ওপরে, ইরানের আকাশসীমায় নয়।
ড্রোনটি এমন এক সময় ভূপাতিত করা হলো, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। এই ঘটনায় তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান অনেক বড় ভুল করেছে বলে মন্তব্য করলেও ট্রাম্প মনে করেন, মনুষ্য ত্রুটির কারণে এই ঘটনা (ড্রোন ভূপাতিত) ঘটে থাকতে পারে। ট্রাম্প বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে তার মনে হয় না।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেন, তার দেশের ভৌগোলিক সীমা যুক্তরাষ্ট্র লঙ্ঘন করছে মর্মে জাতিসংঘে অভিযোগ করবে তেহরান। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখত রাভানচি বলেছেন, মার্কিন ড্রোনটি স্পষ্টতই গুপ্তচরবৃত্তির কাজে যুক্ত ছিল। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘ মহাসচিব ও নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা এক চিঠিতে মাজিদ তাখত রাভানচি বলেছেন, ইরান যুদ্ধ চায় না। কিন্তু তারা শত্রুপক্ষের তৎপরতার বিরুদ্ধে নিজেদের ভূখন্ড রক্ষার অধিকার রাখে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে এবং ওমান উপসাগরে সাম্প্রতিক সময়ে পরপর দুটি জাহাজে হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে টানাপোড়েন বেড়েছে। ওই হামলাগুলোর জন্য তেহরানকে দায়ী করছে ওয়াশিংটন। যদিও তেহরান অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এর মধ্যে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করল ইরান।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার পর ইরানের রেভুল্যুশনারি গার্ডস কর্পস’র (আইআরজিসি) কমান্ডার বলেন, ইরান যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। জেনারেল হোসেইন সালামি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে বলেন, মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি পরিষ্কার বার্তা। তিনি আরো বলেন, ‘কোন দেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে ইরানের ইচ্ছা নেই, কিন্তু আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।’
ইরান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের যে ড্রোন বিমানটি তারা গুলি করে ভ‚পাতিত করেছে সেটি তাদের আকাশসীমা যে লঙ্ঘন করেছে তার ‘অকাট্য’ প্রমাণ রয়েছে। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি সুইস রাষ্ট্রদূত মারকাস লেইটনারকে এসব কথা বলেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এসব তথ্য বলা হয়েছে।
আরাকচি সুইস রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ভূপাতিত ড্রোনের কিছু অংশ তারা তাদের পানিসীমা থেকে উদ্ধার করেছে। এছাড়া তিনি পুনরায় বলেন, ইরান কোন যুদ্ধে যেতে চায় না। তবে তিনি বলেন, ইরানে কেউ আগ্রাসন চালালে ইরান তার জবাব দিতে দ্বিধা বোধ করবে না।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, মার্কিন চাপ ও অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের মুখে ইরান তার আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তন করবে না। প্রেস টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তারা যুদ্ধ চান না, তবে আক্রান্ত হলে তার সমুচিত জবাব দেবেন।
ওয়াশিংটন-তেহরান ধারাবাহিক উত্তেজনা চলমান থাকা অবস্থায়, ক’দিন আগে মধ্যপ্রাচ্যে আরো ১ হাজার মার্কিন সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের হরমোজগান রাজ্যের কুহমোবারক এলাকায় ‘আরকিউ-৪ গ্লোবাল হক’ নামে একটি ড্রোনকে ভূপাতিত করেছে ইরানের সেনাবাহিনী। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়েও তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
সা¤প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে প্রেস টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, তেহরান কারও সঙ্গে যুদ্ধ চায় না। তবে আক্রান্ত হলে নিজের পানি, স্থল ও আকাশসীমা রক্ষা করবে তারা। জারিফ বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির মুখে ইরান কখনো তার আঞ্চলিক নীতিতে পরিবর্তন আনবে না।
ইরানকে চাপ দিতে সউদী আরবের সমর্থন চায় যুক্তরাষ্ট্র
ইরানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে আবারও সউদী আরবের সমর্থন চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল সউদী উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে আলাপকালে এই সমর্থন চান ইরানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ব্রায়ান হুক। এক টুইটে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রিন্স খালিদ।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে পরমাণু নিয়ন্ত্রণবিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু গত বছর ইউরোপীয় মিত্রদের বাধা সত্তে¡ও ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ইরানের ওপর তেল রফতানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলার মধ্যেই মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনা ঘটে।
গতকাল শুক্রবার বৈঠকে তারা এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আরব উপসাগরে দুটি ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও সউদী আরব ইরানকে দায়ী করছে। আর সেই অভিযোগ অস্বীকার করছে ইরান। এক টুইটবার্তায় প্রিন্স খালিদ জানান, ইরানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে সউদী আরবের সমর্থন চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, রেডিও তেহরান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।