বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুসলিম শরীফসহ অপরাপর হাদীস গ্রন্থসমূহে দেখা যায় যে, দাড়ি রাখা কেবল রাসূলুল্লাহ সা.-এর সুন্নাত নয়; বরং আল্লাহর প্রেরিত সকল নবী রাসূলগণের তরীকা ও সুন্নাত ছিল। হযরত হারুন আ. এর দাড়ির কথা কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। প্রসিদ্ধ আরবী অভিধান আল মুনজিদে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম আ. এবং গির্জাসমূহে হযরত ঈসা আ. এর দাড়ি সম্বলিত ছবি এখনো বিদ্যমান আছে। সকল সাহবী, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী ও ইমাম-আলেম তথা মুসলিম উম্মাহর ধর্মপরায়ণ ও আদর্শবান ব্যক্তিবর্গের তরীকাও দাড়ি রাখা। এটা মুসলিম জাতির এক বিশেষ ইউনিফরম এবং ইসলামের অন্যতম নিদর্শন।
চিকিৎসাশাস্ত্রে দাড়ির উপকারিতা স্বীকৃত। অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ দাড়ির গুণাগুণ সম্পর্কে অনেক লিখেছেন। সে কারণে পূর্ব যুগের হাকীম ও দার্শনিক ও মনীষীগণের দাড়ি সম্বলিত চেহারা বই পুস্তকে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুসলমান ভিন্ন জাতির বিশেষতঃ খ্রিস্টান ও পাশ্চাত্য দেশীয় লোকদের অনুকরণ ও তাদের মানসিক দাসত্বের শিকার হয়ে শুধু যে দাড়ি মুন্ডন করছে তাই না; বরং দাড়িধারী লোকদের প্রতি বিদ্রুপ ও পরিহারসমূলক উক্তিও করে থাকে।
হাদীস শরীফে আছে রাসূলুল্লাহ সা. সত্য বলেছেন, ‘অবশ্যই তোমরা (পরবর্তী যুগে) বিঘতে-বিঘত ও হাতে-হাত মিলিয়ে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতি অবলম্বন করবে। এমনকি তারা যদি সাপের গুহায় ঢুকে, তোমরা তাও অনুসরণ করবে। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা. যাদের রীতিনীতি আমরা অনুসরণ করব, তারা কি ইয়াহুদী-খ্রিস্টান? তিনি বলেন, ইহুদি-খ্রিস্টান ছাড়া আর কে হতে পারে? (মিশকাত শরীফ)।
দাড়ির ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা.-এর অনেক হাদীস রয়েছে। তন্মধ্য হতে কিছু হাদীস পাঠকের জন্য উপস্থাপন করা হলো। ১. হযরত ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি বাড়াও এবং গোঁফ ছোট। (সহীহ বুখারী: ৫৮৯২)। ২. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, গোঁফ ছোট এবং দাড়ি ঝুলাও এবং অগ্নিপুজারিদের বিরোধিতা কর। (সহীহ মুসলিম : ৬২৬)। ৩. একদা এক অগ্নিপুজারি রাসূল সা.-এর কাছে আসে। তার দাড়ি ছিল মুন্ডন করা এবং গোঁফ ছিল লম্বা। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তোমার এ অবস্থা কেন? সে জবাব দেয় এটা আমাদের ধর্ম। রাসূল সা. বলেন, কিন্তু আমাদের ধর্ম হলো গোঁফ ছাটা ও দাড়ি লম্বা করা। (মুসান্নাফে আবি শায়বা)। ৪. হযরত আয়শা রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, দশটি বিষয় সৎ স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। (অধিকাংশ আলেম এগুলোকে নবীগণের সুন্নাত বলেছেন) গোঁফ ছাটা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, পানি দ্বারা নাক পরিষ্কার করা, নখ কাটা, উরু সন্ধিস্থল ধোয়া, বগলের কেশ পরিষ্কার করা, নাভীর নিচের কেশ পরিষ্কার করা, প্রস্রাব-পায়খানার পর পানি ব্যবহার করা। এই হাদীসটি বর্ণনা করি বলেন দশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছি। সম্ভবত কুলি করা হবে। (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।