Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খনিতে আশার আলো

সম্পদ লুটের আশঙ্কায় সচেতন মহল

মাহফুজুল হক আনার/মোস্তাফিজুর রহমান মিলন | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নবআবিষ্কৃত দেশের একমাত্র লোহার আকরিকের খনি আবিষ্কারের খবরে উচ্ছ¡সিত হাকিমপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ। খনি আবিষ্কারে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় জনগণ। বাংলাদেশ ভূ-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তরের(জিএসবি) ৩০ কর্মী দীর্ঘ দু’মাস কূপ খনন শেষে গত মঙ্গলবার মাত্র ১৭৫০ ফুট গভীরে ৪শ’ ফুট পূরুত্বের লোহার আকরিকের স্তর পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকালই দৈনিক ইনকিলাব দেশ ও জাতির উন্নয়ন পথযাত্রার মাইল ফলক হিসাবে খবরটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশ করেছে। অন্যান্য গণমাধ্যমও খবরটি প্রকাশ করে। মাটির নীচে শুধু লোহা নয়, এর পাশাপাশি স্বর্ণ, কোপারসহ বহু মূল্যবান খনিজ পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

কানাডা, চীন, ব্রাজিল, সুইডেন ও অষ্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশে থাকা লৌহ খনির চেয়েও উন্নত হাকিমপুরের ইসবপুর গ্রামে আবিষ্কৃত লৌহ(আকরিক) খনিটি। নিঃসন্দেহে লোহার খনি আবিষ্কারের খবর দেখে ও শুনে শুধু হাকিমপুর নয়, পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, ফুলবাড়ী পার্বতীপুর, পাঁচবিবি ও জয়পুরহাটের সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। একইসাথে অজানা এক শঙ্কা সচেতন মহলের মধ্যে উঁকি দিতে শুরু করেছে। কেননা ইতঃপূর্বে নবাবগঞ্জ উপজেলার দীঘিপাড়া ও ফুলবাড়ীতে আবিষ্কৃত হয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ কয়লা খনি। কিন্তু তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। আলোর দেখা পায়নি জয়পুরহাটের চুণাপাথরের খনি। এই অঞ্চলেরই পঞ্চগড়ে শালবাহান তেল খনি তেল উত্তোলন শুরুর আগেই ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল খনি’র মুখ। তবে স্থানীয় মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা আশা করছেন, এবার তেমনটা হবে না।

হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, আমদানী ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা চেম্বারের সভাপতি হারুন অর রশিদ ইনকিলাবকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে আবিষ্কৃত এই লোহার খনি আলোর মুখ দেখবে। উন্নয়ন হবে হাকিমপুর ও আশপাশ এলাকার। কল-কারখানা গড়ে উঠবে। দেশ আর বিদেশ থেকে লোহা আমদানী করবে না, সম্ভব হলে রফতানি করবে। তিনি বলেন, হাকিমপুরে লোহার খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য হাকিমপুরবাসী সকল ত্যাগ স্বীকার করবে। কেননা এই খনি থেকে লোহা উঠলে শুধু হাকিমপুর নয় পুরো দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। তার আশা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মত লোহার খনিটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সকল রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করবেন।

পূর্ব-পশ্চিম অঞ্চলের পুরোটাই খনিজ সম্পদের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও আশপাশের জয়পুরহাট এবং তেঁতুলিয়া একই অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, পুরো এলাকাই হচ্ছে সীমান্তঘেঁষা। তাই আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার হওয়ার বিষয়টিকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইতঃপূর্বে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তেলের খনি আবিষ্কৃত হলেও ব্রিটিশ কোম্পানী শেল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন অকার্যকর ঘোষণা করে খনি এলাকা ত্যাগ করে। কিন্তু ঐ একই কোম্পানি ভারতের শালবাহান অংশ থেকে ঠিকই তেল উত্তোলন করে চলেছে।

বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি আলোর মুখ দেখলেও এখান থেকে মাত্র ২০ শতাংশ কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে। পুরো ফুলবাড়ী এলাকা উন্নতমানের কয়লার ওপর অবস্থান করলেও পদ্ধতিগত জটিলতায় আলোর মুখ দেখতে পারছে না। নবাবগঞ্জের দীঘিপাড়া কয়লা খনি ও জয়পুরহাটের চুনাপাথর প্রকল্প অধরা রয়ে গেছে।

হাকিমপুরে লোহা (আকরিক) খনি আবিষ্কারের মাধ্যমে একটি বিষয় স্পস্ট হয়ে গেছে, এই অঞ্চলটি খনিজ পদার্থের উপর ভাসছে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের মাটির নীচে মহামূল্যবান খনিজ পদার্থের দিকে আন্তর্জাতিক মহলও তাকিয়ে আছে। খনি যেহেতু এক-দুই বর্গকিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাই ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ভারতও চুপ-চাপ বসে থাকবে না। তারাও তাদের অংশে জরিপ চালাবে বা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের চলার গতির ওপরই নির্ভর করবে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে মাটির নীচে থাকা মূল্যবান খনিজ পদার্থসমূহ কারা ভোগ করবে।

উল্লেখ্য, হাকিমপুর উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইসবপুর গ্রামে আবিষ্কৃত লৌহ(আকরিক)-এর খনি’র অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে ভূ-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদফতর। ২০১৩ সালে এই গ্রামের তিন কিলোমিটার পূর্বে মুশিদপুর এলাকায় কূপ খনন করে লৌহ খনিজ পদার্থের সন্ধান পান ভূ-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদফতর। সেখানে ১৫শ’ থেকে দুই হাজার ফুট গভীরতায় মূল্যবান ম্যাগনেটিক মিনারেল, হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট ও লিমোনাইট পাওয়া যায়। আর ১২শ’ ফুট গভীরতায় পাওয়া যায় চুনা পাথর। যা অন্যান্য জায়গার চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক কম গভীর।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমের কাছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্তিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি)র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম বলেন, এই অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল। আর এ কারণে এখানে আগ্নেয় শিলার অবস্থান থাকায় লৌহ খনিজ পদার্থের খনি রয়েছে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি এখানে উন্নত মানের লৌহ খনি রয়েছে।

একইভাবে বাংলাদেশ ভূ-তাত্তিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি)র ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপ-পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, গত ২১ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে খনিজ সম্পদের মজুদ, বিস্তৃতি ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য জিএসবি ড্রিলিং কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ১৭৬০ ফিট ড্রিলিং করা হয়েছে। এর মধ্যে ম্যাগনেটিক মিনারেল, হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট ও লিমোনাইট উপাদান পাওয়া গেছে। এতে আরো ভাল কিছু পাওয়ার আশা করছি।



 

Show all comments
  • মেহেদী হাসান পলাশ ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    মহান আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ তিনি এই দেশে লোহার খনিজ দিয়েছেন। সরকার কেও ধন্যবাদ এজন্য যে, তারা এই লোহার খনি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কথা হচ্ছে, পাথর ও কয়লার মত চোরের খনি এই লোহা যেন গায়েব করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই লোহার উপকার যেন জনগণ ভোগ করতে পারে। বিশেষ করে দেশীয় উৎস থেকে আকরিক সংগ্রহের কলে লোহা জাতীয় পণ্যের দাম কমে আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • MA Mannan ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    আরো একটা কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। এই লোহা উত্তোলন খরচ যেনো বালিশ উত্তোলনের খরচের মতো না হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Tareq Alam ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    আলহামদুলাল্লাহ। কিন্তু লাভ কি ভোল্টর স্বর্ণ আর কয়লার মত নাই হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সালাউদ্দীন আইয়ূবী ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা হেফাজত ও বরকত দান করুক আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Borhan Uddin ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    কোরআান মাজিদে আছে, কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবী তাহার ভূগর্ভ হতে সকল পদার্থ উদগীরণ করবে,সকল দামী পদার্থ বের করে দিবে। এটা তাহারই আলামত। তবুও বলতে পারি, কেয়ামত ত নিশ্চিত, বাংলাদেশ যদি লাভবান হয় তাহলে সেটাই আমাদের পরম প্রাপ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • GM Mohibbulla Islam ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    যেখানে ব্যাংক থেকে রিজার্ভ স্বর্ন চুরি হয়,কয়লা গায়েব হয়ে যায় সেখানে লোহা থাকবে তো!!!বাংলাদেশে যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যেত,দুর্নীতিমুক্ত করা যেত তবে এদেশটা সোনার দেশ হতে বেশি সময় লাগত না।।
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Abdullah ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    অনেক সুন্দর,তাহলে তো অতি শিঘ্রই লোহা উঠানো প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • Manzurul Islam ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    দেশে লোহার খনি পাওয়া গেছে ভাল খবর, কিন্তু খনি থেকে লোহা উত্তোলনের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ কি আমাদের দেশে আছে? লোহা উত্তোলনের জন্য বিশেষজ্ঞ আবার বিদেশ থেকে আনতে হবে, মানে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাবে। দেশের যত টাকা রাজনৈতিক চাটুকার বা দালালদের পিছনে ব্যয় হয় তার অর্ধেকও যদি গবেষকদের দেয়া হত, হয়তো দেশের বিশেষজ্ঞরাই লোহা উত্তোলনে সক্ষম হত।
    Total Reply(0) Reply
  • আকতার হোসেন সন্দ্বীপি ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহ আপনি দুর্নীতি থেকে আমাদের এই সম্পদকে হেফাজত রাখুন! আমিন!!
    Total Reply(0) Reply
  • Quddus Mollick ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    লোহা থাকলে স্বর্ণ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেটাই যেন হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Tahmid Ahmed ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    A great find! Alhamdulillah.
    Total Reply(0) Reply
  • Nabi Newaz ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ । আল্লাহ পাক এই জাতির উপর রহমত ও বরকত দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Soumen Biswas ২০ জুন, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    খুবই ভাল সংবাদ।। এই খনি খনন ও উত্তোলনের কোন কাজ শুধু কোন বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া না হয়।। প্রয়োজনে জয়েণ্ট ভেঞ্চর করা হয়।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খনি

১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ