বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত নিবন্ধে আমরা হাদীস শরীফের আলোকে নফল রোজা, তার ফজিলত ও আদবের আলোচনা শুরু করেছিলাম।
গত আলোচনায় আমরা শাওয়াল মাসের নফল রোজার ফজিলত সম্পর্কে কথা বলেছি। আজ আরও বেশ কয়েকটি নফল রোজার পরিচিতি, ফজিলত ও আদব সম্পর্কে আলোচনা করতে চেষ্টা করব। যিলহজে¦র নয় দিনের রোজা, বিশেষত ইয়াওমে আরাফা বা নয় তারিখের রোজা : যিলহজে¦র নয় দিনের রোজার বিষয়ে হাদীস শরীফে এসেছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজে¦র নয় দিন রোজা রাখতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৭)।
আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) বিগত বছরের এবং তার পরের বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৯)। সহীহ মুসলিমে হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসেও এই ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২)
মুহাররম ও আশুরার রোজা : হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- রমযানের পর উত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরয নামাযের পর উত্তম নামায হচ্ছে রাতের নামায। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩)। হযরত আবু কাতাদা আনসারী রা. থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন- এই রোজা বিগত বছরের কাফফারা হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২)।
আশুরার রোজার বিষয়ে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন- কোরাইশের লোকেরা জাহেলী যুগেও আশুরার রোজা রাখত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও রাখতেন। এরপর যখন হিজরত করে মদীনায় এলেন, তখন নিজেও এই রোজা রাখলেন অন্যদেরও রাখার আদেশ দিলেন। এরপর যখন রমযানের রোজা ফরয হল তখন বললেন- যার ইচ্ছে সে তা (আশুরার রোজা) রাখতে পারে, যার ইচ্ছে না-ও রাখতে পারে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫২; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০২)।
শা‘বান মাসে নফল রোজা : উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন- আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অবিরাম) রোজা রাখতেন, যার কারণে আমরা বলতাম, আর বাদ দিবেন না। আবার (অবিরাম) রোজাহীনও থাকতেন, যার কারণে আমরা বলতাম, আর রাখবেন না। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি। তেমনি দেখিনি শাবানের চেয়ে বেশি অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫৬
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা : উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেছেন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখার ইহতিমাম করতেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৫)। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলসমূহ পেশ করা হয়। তো আমার পছন্দ, আমার আমল যেন পেশ করা হয় আমি রোজাদার অবস্থায়। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৭)।
মাসে তিন রোজা : হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সবরের মাস (রমযান) ও প্রতি মাসে তিন দিন সারা বছর রোজার সমতুল্য। (সুনানে নাসায়ী ৪/২১৮, হাদীস ২৪০৮; মুসনাদে আহমাদ ২/২৬৩, হাদীস ৭৫৭৭)। হযরত আবু যর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তুমি যদি মাসে তিন দিন রোজা রাখ তাহলে তের তারিখ, চৌদ্দ তারিখ ও পনের তারিখ রোজা রেখো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৪৩৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪২৪)। ইবনে মাজাহর বর্ণনায় আছে- আল্লাহর কিতাবে এর সমর্থন রয়েছে, যে নেক কাজ করবে সে তার দশ গুণ পাবে। তো এক দিন সমান সমান দশ দিন। (দ্র. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭০৮)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।