Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারে ব্যর্থতার দায় স্বীকার জাতিসংঘের

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ১৯ জুন, ২০১৯

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযানে সৃষ্ট সংকটে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি জানিয়েছে তারা, এই সংকট মোকাবিলায় ‘পদ্ধতিগতভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে। সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তাদের ঐক্যবদ্ধ কোনও কৌশল ছিলো না। এছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের পর্যাপ্ত সমর্থনেরও অভাব ছিলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিগত নিধনের ভয়াবহ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও জাতিসংঘের হিসাবে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এখনও সেখানে থেকে গেছে। দ্য গার্ডিয়ানের হিসাব অনুযায়ী, রাখাইনে থাকা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য স্থাপন করা হয় আইডিপি ক্যাম্প। তখন থেকেই এই ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা ও কামান জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার সদস্য এসব ক্যাম্পে বসবাস করে। তবে তাদের চলাফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী নতুন অভিযান জোরালো করার পাশাপাশি এসব ক্যাম্প বন্ধ শুরুর অঙ্গীকার করে মিয়ানমার সরকার। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উল্টো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও অবনতির দিকে গেছে। জাতিসংঘ এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে আখ্যা দেয়।

জাতিসংঘের দূত গার্ড রোজেনথাল এক বিবৃতিতে বলেন, নিঃসন্দেহে অনেক জাতিসংঘের পদ্ধতিগত অনেক কারণে অনেক ভুল হয়েছে এবং সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ৩৪ পৃষ্ঠার ওই অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে তিনি বলেন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা না নিয়ে বিচ্ছিন্ন কৌশল অবলম্বন করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

চলতি বছর মিয়ানমারে ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের কর্মকান্ড খতিয়ে দেখতে গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ড রোজেনথালকে নিয়োগ দেন মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস। মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকান্ড নিয়ে রোজেনথাল বলেন, এটা সমষ্টিগত দায়িত্ব ছিলো। একে সত্যিকার অর্থে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মিয়ানমারে বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন নাকি কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবেন তা নিয়েই একমত হতে পারছিলেন না। আর তৃণমূল থেকে জাতিসংঘের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ প্রতিবেদন।

রোজেনথাল বলেন, জাতিসংঘ তখন মিয়ানমারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী করতে এবং একই সাথে উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছিলো। তিনি বলেন, মিয়ামারকে মানবাধিকর লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করতে যোগ্য ভূমিকা রাখেনি জাতিসংঘ। তবে তাদের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রশংসার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলো তারা।
জাতিসংঘের দূত বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিত্বে জাতিষংঘের সামষ্টিক সদস্যরাই এরজন্য দায়ী। যখন যেই সমর্থন প্রয়োজন ছিলো তারা সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।



 

Show all comments
  • Alaudin Alo ১৯ জুন, ২০১৯, ১০:০৩ এএম says : 0
    ব্যর্থতার দায় ঘোচানোর জন্য মিয়ানমারের উপর বিশ্ব অবরোধ জারি করে একঘরে করা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ