বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামে ইবাদতের গুরুত্ব অনেক। ঈমানের পরই ইবাদতের স্থান। ইসলাম যেহেতু আসমানি দ্বীন, মানবজাতির জন্য আসমানি নির্দেশনা, এ কারণে তার অনেক বৈশিষ্ট্যের একটি হচ্ছে পূর্ণাঙ্গতা। ইসলাম যেমন মানুষের হক সম্পর্কে নির্দেশনা দান করেছে তেমনি দান করেছে আল্লাহর হক সম্পর্কে। শুধু নির্দেশনাই নয়, মানুষের হক ও আল্লাহর হকের বিস্তারিত বর্ণনাও দান করেছে। শুধু বর্ণনাই নয় সেই হক আদায়ের পন্থা ও পদ্ধতিও নির্দেশ করেছে। বস্তুর মোহে আক্রান্ত মানবজাতিকে আল্লাহর হক সম্পর্কে এবং সেই হক আদায়ের সঠিক পন্থা সম্পর্কে ইসলামই সচেতন করে, যা পূরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হয়।
এক অর্থে ইসলামের সকল বিধান পালন করা আল্লাহর হক। আল্লাহর আদেশ পালন বান্দার অপরিহার্য কর্তব্য। সেই সকল আদেশের মধ্যে যেমন রয়েছে ঈমান ও ইবাদত তেমনি রয়েছে মানুষের পারস্পরিক হক সংক্রান্ত বিধিবিধান। এই উভয় প্রকারের বিধান পালন বান্দার ওপর আল্লাহর হক হলেও বিশেষ তাৎপর্যের কারণে ঈমান, তাওহীদ, ইবাদত-বন্দেগীকে আল্লাহর হক শিরোনামে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়।
ইসলামে ইবাদতের স্থান অতি উচ্চে। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত হাদিসে ইসলামের যে পাঁচটি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে ঈমান আর পরের চারটি হচ্ছে চার ফরজ ইবাদত- সালাত, জাকাত, সওম ও হজ। কাজেই ইবাদত-বন্দেগীর বিষয়ে যত্মবান হওয়া দ্বীনের অন্যতম মৌলিক চাহিদা।
ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যেও দু’টি প্রকার রয়েছে : এক. যা অবশ্য পালনীয় আর দুই. যা ঐচ্ছিক। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অবশ্য পালনীয় ইবাদতসমূহের গুরুত্ব ঐচ্ছিক ইবাদতসমূহের চেয়ে বেশি। হাদিস শরীফে পরিষ্কার বর্ণিত হয়েছে, ‘বান্দা আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বেশি নৈকট্য অর্জন করে ফরজ ইবাদতের মাধ্যমে’।
তবে নফল ও ঐচ্ছিক ইবাদতের ফজিলতও এত বেশি যে, তা মুমিনকে উদ্দীপ্ত ও আগ্রহী করে তোলে। বর্তমান নিবন্ধে আমরা শুধু একটি ইবাদত- নফল রোজা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব।
হাদিস শরীফে নফল রোজার অনেক প্রকার ও অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও নফল রোজা রেখেছেন, উম্মতকেও এর ফজিলত শুনিয়েছেন। এখানে কিছু নফল রোজার বৃত্তান্ত তুলে ধরছি, যাতে যার পক্ষে যেটি সহজ হয়, আমল করতে পারেন।
শাওয়ালের ছয় রোজা : হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে মাহে রমজানের রোজা রাখল এরপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখল এটি তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ১১৬৪)।
সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নববী রাহ. এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমাদের মনীষীদের মতে, উত্তম হচ্ছে ঈদুল ফিতরের পরের ছয় দিন পরপর রোজাগুলো রাখা। তবে যদি বিরতি দিয়ে দিয়ে রাখে বা মাসের শেষে রাখে তাহলেও ‘রমাজানের পরে’ রোজা রাখার ফজিলত পাওয়া যাবে। কারণ সব ছুরতেই বলা যায়, ‘রমজানের পরে শাওয়ালের ছয় রোজা রেখেছে।’ (শরহু সহীহ মুসলিম, নববী)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।