হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মুনশী আবদুল মাননান : নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘বিশ্ব প্রতিবেদন-২০১৬’ প্রকাশ করেছে গত বুধবার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত বছর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর প্রচ- আঘাত এসেছে। ওই বছর স্যেকুলার ব্লগার ও বিদেশীদের নিশানা বানিয়েছে কট্টরপন্থীরা। আর গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর পাশাপাশি সরকার আদালত অবমাননার অভিযোগ বা অস্পষ্ট আইনের আওতায় তাদের বিচারের মুখোমুখি করেছে।
বিরোধীদলের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্রমেই বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে। বিরোধীদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতার করছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার বিরুদ্ধে প্রায়ই জোরালো অভিযোগ উঠছে। তবে গুম, খুন, নির্যাতনসহ গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিচার করা হচ্ছে না।
সংগঠনের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রান্ড অ্যাডমস বলেছেন : প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নেয়ায় জাতীয় সংসদে কোনো কার্যকর বিরোধীদল নেই। শেখ হাসিনার সরকার দৃশ্যত এখন সব ভিন্ন কণ্ঠস্বরই দমন করতে চাইছে, এমন কি সংসদের বাইরেও।
নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম এখন রুঢ় পরিস্থিতির শিকার। যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ নিয়ে একজন সাংবাদিকের সুষ্ঠু সমালোচনা প্রকাশের অধিকারের প্রতি সমর্থন দেয়ায় ৪৩ জনকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের সমালোচনাকারী গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতার এবং অভিযোগের সম্মুখীন করা হচ্ছে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের। সরকারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখায় বিচার করা হয়েছে দু’জনের।
ব্র্যান্ড অ্যাডামসের মূল্যায়ন : যে সব সমস্যা আমরা গত বছর দেখেছি সেগুলোর অনেকগুলো এ বছরও রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে তা আরও খারাপ হয়েছে।
ব্র্যান্ড অ্যাডামসের এই অভিমতে কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। দেশের অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিরোধী দল-মতের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের প্রক্রিয়া-প্রবণতা দেখে দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, দেশে গণতন্ত্রের বালাই নেই, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি প্রকট এবং বিচার বা প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ-সম্ভাবনা অনিশ্চিত। সরকার দেশকে কর্তৃত্ববাদী শাসনের নিগঢ়ে বাধার জন্য এহেন পদক্ষেপ নেই যা নিচ্ছে না। কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি বড় চারিত্রলক্ষণ হলো, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন-পীড়নের মাধ্যম এমনভাবে উৎসাদন করা যাতে বিরোধীদল বলে কিছু না থাকে। একদলীয় শাসন কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। কর্তৃত্ববাদী শাসনে বিরোধী রাজনৈতিক দল বলে যেমন কিছু থাকে না, তেমনি মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাও স্বীকার করা হয় না। জুলুম-পীড়নের মাধ্যমে ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্মূল করে ফেলা হয়। যেখানে গণতন্ত্র নাস্তি, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও থাকে না। কর্তৃত্ববাদী শাসকরা কখনই গণমাধ্যমকে ভালো চোখে দেখে না। তারা দেশকে স্বাধীন গণমাধ্যমহীন করতে চায় এবং এ জন্য বিরোধী গণমাধ্যম বন্ধ করে দিতে এতটুকু দ্বিধা করে না। এ ধরনের শাসনে জননিরাপত্তা উপেক্ষিত হয় এবং মানবাধিকার লংঘন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়। জনগণের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের অধিকার অস্বীকৃত হয়। সরকার সম্পূর্ণভাবে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। তাদের যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে। দেশের কয়েক বছর শাসন-প্রকৃতি থেকে এই বৈশিষ্ট্যগুলো সহজেই শনাক্ত করা যায়।
বাস্তবে আমরা যা দেখেছি, যে অনাকাক্সিক্ষত অভিজ্ঞতা পদে পদে অর্জন করছি, এইচআরডব্লিউ-এর প্রতিবেদনে, বলা যায়, তার অতি সামান্যই উঠে এসেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। বিনা ভোটে শক্তিপ্রয়োগে ক্ষমতায় আসার কারণে তাদের নৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। এই দুর্বলতা চাপা দিতে ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি মারাত্মক প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে। দেশের মধ্যে এখন যে নানামুখী সমস্যা ও সংকট শাখা-প্রশাখা বিস্তার করছে তার মূলে রয়েছে গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের আচার-সংস্কৃতি বেতোয়াক্কা করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভীপ্সা। যখন কোনো সরকার নিজের নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব নিয়ে অতিমাত্রায় শংকিত হয়ে পড়ে তখন সবকিছুর ওপর দখল প্রতিষ্ঠার প্রবণতা তাকে পেয়ে বসে। আমাদের দেশে আমরা এখন এটাই প্রত্যক্ষ করছি।
গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জননিরাপত্তা, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চেয়ে যে দাবি, মতামত ও আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠতে চাচ্ছে তা দমন ও প্রতিরোধের জন্য সরকার এহেনু পন্থা নেই যার অনুসরণ করছে না। একটা নতুন তত্ত্বও জনপ্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা হলো, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা সুশাসন ও ন্যায়বিচারকে উন্নয়নের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অবিরাম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে, আমাদের দেশে এই চেষ্টা আইয়ুব খান ও তার পরিষদবর্গও করেছিলেন। গণতন্ত্র ও জনগণের অন্যান্য অধিকার খর্ব করে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেয়ার পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তখন উন্নয়নের একটি চেহারাও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল, যাকে ভিত্তি করে আইয়ুবশাহী ঘটা করে ‘উন্নয়ন দশক’ পালন করেছিল। কিন্তু গণতন্ত্রহীন, মতামত প্রকাশের সুযোগহীন দমন-পীড়নমূলক শাসন এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। প্রবল গণবিস্ফোরণের মুখে আইয়ুবশাহীর পতন হয়েছিল। এই নজির থেকেই বুঝা যায়, উন্নয়নই সবকিছু নয়। উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মুক্ত গণমাধ্যম, মতামত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা এবং জনগণের সরকার নির্বাচনের ক্ষমতা নিশ্চিত করাও জরুরি। একটি অন্যটির বিকল্প নয়। উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নয়নের যেমন বিকল্প নেই, তেমনি বিকল্প নেই গণতন্ত্রেরও। গণতন্ত্র বরং উন্নয়নের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাথী। গণতন্ত্রে উন্নয়ন দ্রুতায়িত ও অধিক ফলপ্রসূ হয়। গণতন্ত্র জবাবদিহিমূলক শাসন। গণতন্ত্র থাকলে শাসকদের জবাবদিহি করতে হয় জনগণের কাছে। এ কারণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকদের কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ থাকে না। অনিয়ম-দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও লুটপাট একটা স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধের আওতার মধ্যে থাকে। বর্তমান সরকার আইয়ুব খানের জুতা পায়ে দিয়ে সামনে হাঁটার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। দেশের মানুষ, বলাই বাহুল্য, উন্নয়নের শ্লোগানে সন্তুষ্ট নয়, কতৃজ্ঞ নয়। তারা উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের সর্বপ্রকার অধিকারেরও নিশ্চয়তা চায়। জনগণের এই আশা, অভিপ্রায় ও দাবি যদি ক্ষমতাসীনরা বুঝতে অক্ষম হন, তাহলে তাদের পরিণতি সময় বা কালই নির্ধারণ করে দেবে।
আমরা বহুবার একই কথা বলে আসছি, দেশের চলমান যাবতীয় সংকট-সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনৈতিক সংকট। এই সংকটের সূত্র-উৎস কোথায় তাও কারো অজানা নেই। ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি যদি দলনিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে হতো, সবদলের অংশগ্রহণভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য হতো তাহলে দেশ-জাতিকে এখনকার সংকট-সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। উন্নয়নের জোয়ার দিয়ে এসব সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সংকটের সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সরকার রাজনৈতিক সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। নতুন একটি নির্বাচন রাজনৈতিক সংকটের সহজ সমাধান এনে দিতে পারে যদি সে নির্বাচন দলনিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন হয়। সরকার এ পথে হাঁটতে চাইছে না। উল্টো রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন-উৎসাদনের নীতিই অনুসরণ করে যাচ্ছে। যেখানে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর জুলুম-পীড়নের পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা খুবই জরুরি সেখানে তা না করে বরং উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপার্সন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশেষ রাষ্ট্রদোহ মামলা দায়ের করার কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা হয়রানিমূলক বলে মনে করে তার দল। ইতিহাসে সাক্ষ্যের অভাব নেই, এ ধরনের মামলা কিংবা গ্রেফতার ও জলুমের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায় না, ক্ষমতাও নিরাপদ করা যায় না। ক্ষমতা ও শক্তিবলে কোনো দল বা মতকে দাবিয়ে রাখা যায় না।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি ইত্যাদি নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে বিচলন, উদ্বেগ ক্রমবর্ধমান। আন্তর্জাতিকমহলও এ সব গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে। আন্তর্জাতিকমহল চাইছে যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ উত্তোরণ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের নবনিযুক্ত হাইকমিশনান অ্যালসন ব্লেইক সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, যুক্তরাজ্য এদেশে টেকসই গণতন্ত্র দেখতে চায়। তার এই বক্তব্যে এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা টেকসই বলে মনে করে না যুক্তরাজ্য। ভঙ্গুর গণতন্ত্রের বিপদ সম্পর্কে যুক্তরাজ্যেরই সবচেয়ে বেশি জানার কথা। গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলে পরিচিত এই দেশটি বহু চড়াই-উৎরায় অতিক্রম করে টেকসই গণতন্ত্রের ধারা প্রতিষ্ঠা করেছে। অ্যালসান ব্লেইক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও তার দেশের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন আইন-শৃংখলা বাহিনীর মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি। খোলাখুলিভাবেই তিনি বলেছেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের যে সব অভিযোগ আছে, তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। তিনি এও জানিয়েছেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আছে তার প্রতিটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিৎ।
যুক্তরাজ্যের মতো যুক্তরাষ্ট্রও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রও টেকসই গণতন্ত্র দেখতে চায়। দেখতে চায় মানবাধিকার লংঘনের অবসান এবং রাজনৈতিক দল-মহলের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা। গত সোমবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিমতের প্রতিফলন রয়েছে। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার দেশটির উন্নয়নে একটি প্রয়োজনীয় ভূমিকা রেখেছে। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়া দরকার।
জানা গেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা সংসদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের সরকার গঠন থেকে সর্বশেষ পৌর নির্বাচন ও বিরোধীদলের ওপর চালানো দমন-নির্যাতনের তথ্য ও ঘটনাপ্রবাহ জানানো হয়। বেগম খালেদা জিয়া তাকে জানান, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি বলে এই সরকারের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অনুপস্থিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তাকে আরো জানানো হয়, গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন টিকসই হতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা যত উন্নয়নের কথাই বলুন না কেন, গণতন্ত্রহীনতার কারণে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দুর্বিষহ এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজনৈতিক সংকটও কাটিয়ে উঠতে হবে।
রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট তার বিবৃতিতে যা বলেছেন, তার সারকথা হলো, বাংলাদেশের উন্নয়নে গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রেখেছে। কাজেই গণতন্ত্রহীন উন্নয়ন নয়, গণতন্ত্রকে সাথী করেই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবাধে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিতে হবে। তাদের মতামত প্রকাশের অধিকার নির্বাধ করতে হবে। গণতন্ত্রের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের কথা কারো অজানা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের যে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এখন দৃশ্যমান, তার পেছনে গণতন্ত্রের ভূমিকা ও অবদানের কথাও সুবিদিত। এই অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিকোণ থেকেই রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলার চেষ্টা করেছেন, গণতন্ত্রই বাংলাদেশের শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো আন্তরিকভাবেই কামনা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সকল রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান এবং কর্মসূচি পালনের অধিকার নিশ্চিত হোক। এ সব দেশ একই সঙ্গে প্রত্যাশা করে অবিলম্বে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে, গণতন্ত্র সম্মত ও গ্রহণযোগ্য হয়নি সে কথা তারা শুরু থেকেই বলে আসছে। এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত আছে।
দ্রুতই রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান ও গণতন্ত্রের পুনঃ প্রতিষ্ঠা কাম্য। এটা দেশের ত্বরিত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে কিংবা বাইরে রেখে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। এই সত্যটি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। নিতে হবে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ। এর মধ্যেই রয়েছে সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গল। সঙ্গতকারণেই দেশী-বিদেশী সকলমহল চায় একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সরকার দমন-নিপীড়ন-উৎসাদন নীতি পরিহার করে ওই রকম একটি নির্বাচন আয়োজনে মনোযোগ দেবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।