বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুমিনের নৈতিক গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রাসূল সা. বলেছেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম হচ্ছে ওই ব্যক্তি যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী। অপর এক হাদীসে আছে শেষ বিচারের দিনে দাঁড়ি-পাল্লায় উত্তম চরিত্র থেকে ভারী আর কোনো বস্তু হবে না। কেননা উত্তম চরিত্রবান ব্যক্তি স্বীয় চরিত্রের দ্বারা সর্বদা রোজা পালনকারী এবং সর্বদা নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা হাছিল করতে পারে। এটি তিরমিজী শরীফের বর্ণনা।
কিন্তু হাদীসের অন্যান্য কিতাব হাকেম, ইবনে হাম্বল ও আবু দাউদে সংক্ষিপ্তাকারে কেবল হাদীসটির প্রথম অংশ উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলো, উত্তম চরিত্র থেকে ভারী কোনো বস্তু কিয়ামতের দিন দাঁড়ি-পাল্লায় হবে না। এতে একথায় প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের দাঁড়ি-পাল্লায় উত্তম চরিত্র থেকে ভারী কোনো বস্তু হবে না।
অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, বান্দা আল্লাহর নিকট থেকে যা কিছু লাভ করেছে তার মাঝে উত্তম চরিত্রের উপহারটিই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই হাদীসটি বিভিন্ন শব্দ সহযোগে হাকেম, নাসাঈ, ইবনে হাম্বল, তাবরানী এবং ইবনে আবি শামেরায়ও আছে। এ সুসংবাদ উত্তম চরিত্রের নিয়ামতকে মানুষের অন্যান্য সব নিয়ামত থেকে সুন্দরতর করে তুলেছে।
অন্য এক হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহর বান্দাদের মাঝে তার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বান্দা ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সর্বোত্তম। এতে বোঝা যায় যে, উত্তম চরিত্র আল্লাহকে ভালোবাসার উপকরণ। প্রকৃতপক্ষে রাসূল সা. কে ভালোবাসার উপকরণও উত্তম চরিত্র। রাসূল সা. বলেছেন, তোমাদের মাঝে আমার নিকট অধিক প্রিয় এবং আখেরাতে আমার অধিক নিকটে অবস্থানকারী হবে ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র উত্তম এবং আমার অধিক না-পছন্দ এবং কিয়ামতের দিন আমার থেকে অধিক দূরে অবস্থানকারী হবে ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র খারাপ।
রাসূল সা.-এর জামানায় দু’জন মহিলা সাহাবী ছিলেন। একজন রাতভর নামাজ পড়তেন, সারাদিন রোজা রাখতেন এবং দান-খয়রাত করতেন কিন্তু নিজের কথাবার্তা দ্বারা প্রতিবেশীদের প্রাণ অতীষ্ঠ করে রেখেছিলেন। দ্বিতীয়জন শুধু নামাজ পড়তেন, গরিবদের মাঝে সামান্য বস্ত্র বিতরণ করতেন কিন্তু কাউকে কোনোরূপ কষ্ট দিতেন না। রাসূল সা.-এর খেদমতে উভয়ের পরিণতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো।
তিনি প্রথমজন সম্বন্ধে বললেন, তার মাঝে কোনোই পুণ্য নেই। সে তার খারাপ চরিত্রের শাস্তি ভোগ করবে। আর দ্বিতীয়জন সম্বন্ধে বললেন, সে বেহেশতী হবে, যে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। এ দু’জন সাহাবীর ভিন্নতর পরিণতির কথা রাসূল সা.-এর জবান থেকে প্রকাশ পেয়েছে এর দ্বারা ইসলামের নৈতিক বৈশিষ্ট কতখানি সমুন্নত তা বিকশিত হয়ে উঠেছে।
হযরত বারা ইবনে আযেব রা. বলেন, এক বেদুঈন রাসূল সা. এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা., আমাকে ওই কাজ শিখিয়ে দিন যা আমাকে বেহেশতে পৌঁছে দেবে। ইরশাদ হল, মানুষকে গোলামী থেকে মুক্ত কর, ঋণের ভারী বোঝা মানুষের স্কন্ধ থেকে অপসরিত কর, অত্যাচারী প্রতিবেশীর হাত থামিয়ে দাও।
যদি তুমি এতটুকু করতে সক্ষম না হও তাহলে ক্ষুধার্থকে অন্ন দান কর, পিপাসার্তকে পানি পান করাও, পুণ্য পথের সন্ধান দাও, পাপের কাজ প্রতিরোধ কর। যদি একাজ তোমার দ্বারা সম্ভব না হয় তাহলে রসনাকে অমঙ্গলকর কথা ও বাক্যালাপ থেকে বিরত রাখ। এবার চিন্তা করে দেখুন, এ হাদীস উত্তম চরিত্র ও নৈতিক মর্যাদাকে কতখানি সমুন্নত করে তুলেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।