পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশাকে সামনে রেখে দিন বদলের সনদ রূপকল্প-২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটা দেশের ৪৮তম এবং আওয়ামী লীগের ২১তম বাজেট। অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বাজেটে খরচের হিসাব ধরা হয়েছে মোট জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশের সমান। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি। বিগত অর্থ বছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ঈর্ষণীয় সক্ষমতার ধারাবাহিকতায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন সামনে রেখে এই বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই বাজেট ঋণ নির্ভর। বড় ধরণের সংষ্কার ছাড়া রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অসম্ভব। একই সঙ্গে সামগ্রিকভাবে বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়নি। উচ্চাকাক্সক্ষা করা হয়েছে। যা পরিপূরণের জন্য যে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প-প্রস্তাবনা থাকে, বিশেষ করে নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে, তা থেকে গেছে অসম্পূর্ণ।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই প্রস্তাবিত বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট পেশ উপলক্ষে সংসদের অধিবেশন কক্ষ ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। সংসদ গ্যালারি থেকে ভিআইপি লাউঞ্জ সর্বত্রই ছিল উপচে পড়া ভীড়। বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের জীবনের প্রথম বাজেট প্রস্তাবনা পড়া শুরু করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। এই বাজেটের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাজেট বক্তব্য উপস্থাপন ঠিকমত করতে পারছিলেন না অর্থমন্ত্রী। পাশ থেকে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী তাঁকে সহযোগিতা করেন। হাউজে উপস্থিত কয়েকজন চিকিৎসক এমপি এসে তাঁর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী নিজেই বাকি বাজেট বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন। এতে অধিবেশনের চিত্রই পাল্টে যায়। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাকি বাজেট উপস্থাপনের প্রস্তাবকে সমর্থন জানান। প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের বাকি অংশটুকু উপস্থাপনের জন্য স্পিকারের অনুমতি প্রার্থনা করেন। স্পিকার অনুমতি দিয়ে বলেন, ’আপনি দাঁড়িয়ে বা বসে বাজেট উপস্থাপন করতে পারেন।’ জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনে এটা নতুন দৃশ্য।
অর্থমন্ত্রীর পক্ষ্যে বাজেট উপস্থাপনের জন্য ফ্লোর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’আমাদের অর্থমন্ত্রী খুবই অসুস্থ্য। তাঁর চোখে অপরারেশন হয়েছে, ১৫ মিনিট পর পর তাঁর চোখে ড্রপ দিতে হয়। আমারও চোখে অপারেশন হয়েছে, ঠান্ডা লেগে কথা বলতে গেলে কাশি আসে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। তারপরও আপনি (স্পিকার) অনুমতি দিলে তার (অর্থমন্ত্রী) হয়ে বাজেটের বাকিটা আমি উপস্থাপন করবো।’ এরপর স্পিকারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন শুরু করলে সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
অবশ্য বাজেট বক্তৃতার বইয়ের অনেকাংশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে কিছু বক্তব্যে ছিল। সেটি পাঠ করার সময় প্রধানমন্ত্রী হেসে স্পিকারকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ’মাননীয় স্পিকার, এটি আমার বক্তব্যে নয়, এটি হচ্ছে অর্থমন্ত্রীর’। বাজেট বক্তৃতায় যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে সেটি আমি পড়বো কি না? জবাবে স্পিকার বাজেট বক্তৃতায় যেভাবে রয়েছে সেভাবেই উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন শেষ করলে স্পিকার বলেন, বাজেটের অপঠিত অংশগুলো পঠিত বলে গণ্য করা হলো। বাজেট বক্তব্যে শেষে প্রধানমন্ত্রী ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে নিজের চোখে নিজেই ড্রপ দেন।
এদিকে বাজেট বক্তৃতার আগেই সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রী সভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি বছর বাজেট উত্থাপনের আগে রেওয়াজ অনুযায়ি এই বৈঠকটি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ।
উৎসবমুখর সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুনতে সংসদে হাজির হন প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ। সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন তিনি। এর আগে প্রেসিডেন্টকে সংসদ ভবনে স্বাগত জানান সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুত জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, সিনিয়র সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, ঢাকায় কর্মরত বিদেশী ক‚টনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন আমাদের দ্বার প্রান্তে, যা জাতীয় জীবনে একটি ঐতিহাসিক দুর্লভ মূহুর্ত। প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সুখী, সমৃদ্ধ, কল্যাণমুখী ভবিষৎ বিনির্মাণে দিন বদলের সনদ রূপকল্প ২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়ন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত ২০৩০ এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালে মাঝে জাতির জনকের আজীবন লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা জাতির কাছে আমাদের অঙ্গীকার।
এবার সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।
এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।
আ হ ম মুস্তফা কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতবারের মত এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশের মত। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে এক লাখ চার হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে এক লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রফতানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে দুই হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে চার হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে কাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল দিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে তিন লাখ ১৬ হাজার ৬১২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সংশোধনে তা চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির পাঁচ শতাংশের সমান। অর্থনীতিবিদরা বাজেট ঘাটতির এই পরিমাণকে গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যেই ধরেন। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।
এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।
নতুন অর্থবছরে আট দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যাতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ ও বৈদেশিক সাহায্য বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করে প্রবৃদ্ধির এই লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল সাত দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আট মাসের (জুলাই-ফেব্রæয়ারি) তথ্য হিসাব করে বলছে, অর্থবছর শেষে এবার আট দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। এছাড়া গড় মূল্যস্ফীতি পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশে রাখার রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মার্চ মাস শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
অন্যদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় এক হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নিত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছর যা ছিল মাত্র ৫৪৩ কোটি টাকা। তবে নতুন অর্থবছরে এই আয় বেড়ে দুই হাজার ১৭৩ ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর হরিস বি শেনারি ১৯৭৩ সালে বলেছিলেন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৯০০ ডলারে পৌঁছাতে ১২৫ বছর সময় লাগবে। কিন্ত তার সেই বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত করে মাত্র ৪০ বছরের মাথায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৯২৮ ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা আমাদের দেশের জন্য একটি বড় অর্জন। আগের অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৯০৫ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১৭৫১ ডলার।
এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। এতে সুবিধা পাবেন প্রায় ৮৯ লাখ গরিব মানুষ। এজন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া সাধারণত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অবকাঠামোর সংস্কার কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সরকার। এ খাতে নতুন অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার ১৮৪ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে করের আওতা বাড়ানো ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে নতুন করে ৮০ লাখ করদাতা বাড়ানোর কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বর্তমানে কর দিচ্ছেন দেশে এমন লোকের সংখ্যা ২০ লাখ। করের আওতায় এক কোটি লোককে আনা হবে। করের আওতা বাড়াতে সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় নয় লাখ হাট-বাজারের করযোগ্য ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে এর আওতা বাড়ানো হবে। এছাড়া, করযোগ্য হলেও যারা কর দিচ্ছেন না, দেশব্যাপী তাদের শনাক্ত করে করের আওতায় আনা হবে।
এছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে। মীরসরাই, সোনাগাজী ও সীতাকুন্ড উপজেলার ৩০ হাজার একর জমিতে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর” কে দেশের সর্ববৃহৎ পরিকল্পিত ও আধুনিক শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে এ পর্যন্ত ১৫ কোটি ১০ লাখ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এছাড়া পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপে জিটুজি প্রকল্প বাস্তবায়নসহ ব্যবসার সহজীকরণ সূচকের উন্নয়নে কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা দ্রæত এবং সহজলভ্য করতে ওয়ার স্টপ সার্ভিস চালুসহ বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষিত তরুণদের জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্থাপিত বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে আরও জানোনো হয়, পল্লী এলাকায় উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো স্থাপন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ তৈরি, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি এবং কম্পিউটার ও দ্রæতগতির ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানসহ প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি প্রদান এবং নাগরিক জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগে নেওয়া হবে।
এর আগে বাজেট বক্তৃতা শেষে রেওয়াজ অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী দাঁড়িয়ে অর্থ বিল-২০১৯ সংসদে উত্থাপন করেন। সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলী কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করা হয়। সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির সিন্ধান্ত অনুযায়ী বিলটি আগামী ৩০ জুন পাস হবে। এরআগে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্য ৪৫ ঘন্টা আলোচনা করবেন। ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।