Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

মা, ঘুমিয়ে গেছে তোর সন্তান

প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মা, ঘুমিয়ে গেছে তোর সন্তান। তুই কোথায়, মা? ডাক দে মা, তোর সন্তানকে জাগিয়ে দে। তোকে না বলেই ও ঘুমিয়ে গেছে। অনেক কথা বলার আছে ওর। মা তুই ফিরে আয়। এক বার কান পেতে শোন- ও প্রশ্ন করছে, এই সাগরে ভেসে আছি আমি, কেন মা? তুই কোথায় মা? আমাকে নিবি না কোলে? কেন মা? আমার অপরাধ কী? এই পৃথিবী কি আমার নয়? তবে কেন ভেসে গেলাম সাগরের লোনা পানিতে? ভূমধ্যসাগরের বিশাল জলরাশি। ইতালি উপকূলে পুতুলের মতো ভেসে আছি আমি। আমার মতো আরো অনেকে ভেসে আছে। অনেকে গেছে ডুবে। সেদিনও তো ৯০০ ডুবেছে। ভেসে যাচ্ছে, ডুবে যাচ্ছে তোর সন্তানরা। আর তুই কি না চেয়ে চেয়ে দেখছিস? তোর মায়ার সাগরে, ছায়ার চাদরে আমারে জায়গা দিবি না? তবে কেন জন্ম দিলি, কেন আমাকে আনলি এই পৃথিবীতে, স্বার্থপরদের গারদে? জবাব দে মা।
মায়ের ওপর সব শিশুর অধিকার আছে। এ অধিকার দিতেই হবে। কিন্তু তুই কি দিলি, মা? একখানা ভাঙা কাঠের নৌকা? এই নৌকা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল অথৈ সাগরে। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম। তুই কি শুনিসনি আমার ডাক? আমি কেঁদেছিলাম। আমি সাহায্য চেয়েছিলাম। তোর কানে কি আমার কান্না পৌঁছায়নি, মা? তোর আরো কত সন্তান কাঁদছে। তারা আহাজারি করছে। বাঁচতে চাইছে। তোর দেওয়া অমূল্য সম্পদ প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তুই কি দেখিস না, মা? সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, লিবিয়া, সুদানে তোর কত সন্তান আর্তনাদ করছে। পোকামাকড়ের মতো বেঁচে আছে। শিয়াল-কুকুরের সঙ্গে উচ্ছিষ্ট খাচ্ছে। হাড়হাড্ডির দেহ নিয়ে কাতরাচ্ছে। জীবন যায় যায়- এই যায়, সেই যায়! তবু তুই চুপ কেন, মা? মাগো, দয়া দেখিয়ে গত শুক্রবার ভূমধ্যসাগর থেকে আমার লাশ তুলেছে এক জার্মান। তিনি না কি সি-ওয়াচের লোক। আমার মতো যারা সাগরে ভেসে যায়, তাদের বাঁচাতে কাজ করে তারা। মাগো, আমি জানি না, এসব কি লোক দেখানো, না কি বিবেকের আহ্বান। সাগর বুক থেকে পুতুলের মতো আমাকে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। আমাকে কোলে নিয়ে তার না কি চোখ ভিজে আসছিল। এ কি সত্যি, না কি প্রহসন? জবাব দে, মা। জবাব দে। ও মা, এরা করা? এরা কোথা এল? যারা আমাদের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে? যারা আমাদের খাবার কেড়ে নিয়েছে? এরা কি মানুষ? যারা আমার মাকে ধর্ষণ করে মাথা কেটে নিয়েছে? এরা কারা? যার মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকায় হিংসার আগুন লাগিয়ে দিয়েছে? এরা কোন পৈশাচিক শক্তি? যারা সিরিয়ার ৪ লাখ মানুষের প্রাণ নিয়েছে। যাদের অস্ত্রে মরছে আমার ভাইবোন। উত্তর দে, মা? দুই বছরে কতজন মরল, কতজন ভেসে গেল, হারিয়ে গেল কত শত, সহস্র। এরা কি তোর সন্তান নয়? তবে এরা নেই কেন? জবাব দে, মা। তোর সন্তানরা কেন বোমায় মরছে, গোলায় মরছে? কেন তোর সন্তানরা আমার মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছে? ও মা, তোর কি বিবেক নেই? না কি জুলুমবাজরা তোর বুক চিরে তোর বিবেক লুটে নিয়ে গেছে? ওদের তান্ত্রিক সাধনার খাঁচায় বন্দি করে রেখেছে তোকে? তোর বুকে পারমাণবিক বোমা চেপে ধরে আছে। হয়তো এ কারণে তুই চুপসে গেছিস, তাই না, মা? তবে তুই কেন বলছিস না, শোন, শোন হে আমার সন্তানরা, পারমাণবিক বোমার চেয়ে প্রাণ বড়। তন্ত্রমন্ত্রের চেয়ে জীবন বড়। বোমা কেনার চেয়ে ক্ষুধার জ্বালা মেটানো জরুরি।
আমি বুঝে গেছি, মা। তুই এখন বন্দি। তোর কিছু করার নেই। তাই আমাকে ভাসতে হলো ভূমধ্যসাগরে। আমার মতো আইলানও ভেসে উঠেছিল। এ নিয়ে কত কি টালবাহানা হলো, তুই দেখেছিস মা? আইলানের মতো আমার লাশের ছবি নিয়ে চলছে। ছিঃ! ঘৃণা হয় মুখস্ত মানবতার গান শুনে। আমার মাথার ওপর গণতান্ত্রিক বিমান উড়তে দেখে ঘৃণা হয়! জঙ্গি নামের বর্বর ছানাগুলোকে খাইয়ে-দাইয়ে মোটাতাজাকরণ করতে দেখে বমি আসে। ওদের খাওয়া
দেখে ভুলে যায় ক্ষুধার জ্বালা। রয়টার্স ও বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ