বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হাদিস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণকারী ও হাদিস অস্বীকারকারীদের শ্রেণিসংখ্যা এতই অধিক যে, তাদের হিসাবের আওতায় আনা কঠিন ব্যাপার। তারা মনে করে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কেবল একজন ‘দূত’ ছিলেন। আল কোরআনে তাকে দূত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের এই মনে করাটা কোরআনুল কারিমের মূল শিক্ষার খেলাপ ও বিপরীত। কেননা, মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কোরআন মাজীদের বর্ণনা বিন্যাসে সংক্ষিপ্ত ও অল্পকথায় বেশি অর্থ প্রকাশ করার নীতি অবলম্বন করেছেন।
এ জন্য কোরআনুল কারীমের ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ও জরুরি অনুষঙ্গ। সে হিসেবে নবী (সা.) হলেন কোরআনুল কারীমের ব্যাখ্যাকারক, বিশ্লেষক। তার বাণীসমূহ কোরআন মাজীদের সুস্পষ্ট তাফসির ও ব্যাখ্যা। এ ব্যাখ্যা ও তাফসির ছাড়া আল কোরআনের অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করা মোটেই সম্ভব নয়। আর সম্ভব নয় বলেই হাদিস অস্বীকারকারীদের প্রকৃতপক্ষে মুসলমান মনে করা ঠিক হবে না।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ক. ‘(হে নবী) আমি তোমার নিকট কোরআন অবতীর্ণ করেছি। যাতে মানুষের নিকট প্রেরিত বিষয়সমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দাও।’ (সূরা আন নাহল : আয়াত ৪৪)। এতে বোঝা যায়, প্রেরিত বিষয়সমূহকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা ও ব্যাখ্যা করার অধিকার মহান রাব্বুল আলামিন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রদান করে দিলেন। খ. আল্লাহপাকের কিতাবে যে বিষয়কে অস্পষ্ট ও সংক্ষিপ্তভাবে বয়ান করা হয়েছে, তা সুস্পষ্ট ও ব্যাখ্যা করে দিয়েছে সুন্নত তথা হাদিস। (জামেউল বয়ানিল ইলম : খন্ড ২, পৃ. ৩৬৬)।
কোরআন মাজীদের অগণিত আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ অবশ্যকর্তব্য বলে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহপাকের আনুগত্যের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ (সা.) আনুগত্য অবশ্য কর্তব্য বলে স্থিরীকৃত হয়েছে। কাজেই হাদিসকে বাদ দিয়ে শুধু কোরআনুল কারীমের ওপর আমল করা আদৌ সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাকের ঘোষণা, ক. ‘তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহপাকের ও রাসূল (সা.)-এর। যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রেখো, আল্লাহপাক খোদাদ্রোহীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩২)। খ. ইরশাদ হয়েছে, হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূলের ও তোমাদের মধ্যে যাদের নির্দেশ দানের ক্ষমতা রয়েছে তাদের। (সূরা নিসা : আয়াত ৫৯)।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) রাহমাতুল্লিল আলামিন। তার হাদিস তথা সুন্নত ভান্ডার সাহাবাদের জন্য যেমন হুজ্জত ছিল, পৃথিবী লয় হওয়ার আগ পর্যন্ত সব মুসলমানের জন্য তা হুজ্জতই থাকবে। সুতরাং হাদিস শুধু সাহাবাদের জন্য হুজ্জত ছিল, আমাদের জন্য নয়- এমন মন্তব্য ও মনোভাব যারা পোষণ করে, তাদের মুসলমানদের কাতারে যেমন দাঁড় করানো যায় না, তেমনি তাদের এই মন্তব্য সরাসরি বাতিল, ভ্রান্ত ও মিথ্যা। তাদের উক্তরূপ মন্তব্যের ফলাফল তো দাঁড়ায়, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত ও নবুওয়াত শুধু সাহাবায়ে কেরামের যুগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল।
পরবর্তী যুগের মানুষের জন্য নয়। (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ এ ব্যাপারে কোরআনুল কারীমের সুস্পষ্ট ঘোষণা খুবই প্রাণিধানযোগ্য। যেমন- ক. ‘হে লোকসকল, অবশ্যই আমি তোমাদের (মানবজাতির) সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল।’ (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ১৫৮)। খ. ‘হে নবী, আমি তোমাকে সকল মানুষের জন্য শুভ সংবাদ দানকারী ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা সাবা : আয়াত ২৮)। গ. রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। যারা তাদের বিরোধিতায় বা অপমানিত করায় আত্মনিয়োগ করবে, তারা তাদের কোনো ক্ষতি সাধন (ধ্বংস সাধন) করতে পারবে না। এ অবস্থার ওপরই আল্লাহর চরম নির্দেশ তথা কিয়ামত এসে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম : খন্ড ২, পৃ. ১৪৩)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।