বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুমিনের নৈতিক গুণাবলি আলোচনা করতে গিয়ে গত নিবন্ধে আমরা বলেছিলাম প্রকৃত মুমিন তারাই, যারা কোনো ভুল কাজ করে ফেললে তার পুনরাবৃত্তি করে না এবং নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। কোনো অশ্লীল কাজ ও সীমালঙ্ঘন করে ফেললে আল্লাহর জিকির করে। এই জিকিরের বদৌলতে তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা বলে স্বীকৃতি লাভ করে ধন্য হয়। উত্তম নৈতিক গুণাবলির অধিকারী মুমিনদের জন্য অফুরন্ত পারিশ্রমিক রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, “এদের দু’বার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে। কারণ, এরা ধৈর্যশীল এবং এরা ভালোর দ্বারা মন্দের মোকাবেলা করে এবং তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। তারা যখন অসার ও বেহুদা বাক্য শ্রবণ করে তখন তারা তা উপেক্ষা করে চলে এবং বলে, আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্য, তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্য। তোমাদের প্রতি সালাম ও নিরাপত্তা, আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাই না।’ (আল কোরআন)।
এখানে মুমিনদের যে বিশেষ গুণের কথা তুলে ধরা হয়েছে তা এই যে, তারা অসার বাক্য শ্রবণ করতে আগ্রহী নয় এবং মন্দের প্রতিফল মন্দের দ্বারা দেয় না; বরং ভালো দ্বারা দেয়। এদের অন্য গুণাবলি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা কর্তব্য পালন করে।’ এবং অন্য গুণাবলি সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, তারা কর্তব্য পালন করে এবং সেদিনের ভয় করে, যেদিনের পরিব্যাপ্তিও হবে ব্যাপক।
আহার্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্তে¡ও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীকে আহার দান করে এবং বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার্য দান করি। আমরা তোমাদের নিকট থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। এই আয়াতসমূহে এবং অনুরূপ অন্যান্য আয়াতসমূহের যে বিশ্লেষণ রাসূল সা. বর্ণনা করেছেন, তা হাদিসের বিভিন্ন গ্রন্থে সংরক্ষিত আছে। এই হাদিসগুলোকে নৈতিক চরিত্রের বিভিন্ন গুণের সাথে পরিবেশন করা হলে বোঝা যাবে, রাসূল সা.-এর শিক্ষাক্রমে নৈতিক শিক্ষা বলতে কী বোঝায় এবং নৈতিকতার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য কতটুকু?
ইসলামে নৈতিক চরিত্রের গুরুত্ব কতখানি তা রাসূল সা.-এর এই দোয়া থেকেই আঁচ করা যায়। যা তিনি নামাজ শেষে পাঠ করতেন, ‘হে আল্লাহ আপনি আমাকে উত্তম থেকে উত্তম নৈতিকতার পথ প্রদর্শন করুন। আপনি ছাড়া আমাকে উত্তম চরিত্রের পথ দেখানোর কেউ নেই এবং মন্দ চরিত্রকে আমা থেকে দূরীভ‚ত করুন। আপনি ছাড়া মন্দ চরিত্র দূরীভ‚ত করার কেউ নেই।’
হাদিসে বর্ণিত এই শব্দাবলির প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যায়, আল্লাহর রাসূল সা. স্বীয় নৈকট্য ও প্রার্থনা কবুলের উত্তমলগ্নে আল্লাহপাকের দরবারে যে বস্তুটি কামনা করেছেন, তা হলো হুসনে আখলাক বা উত্তম চরিত্র। ইসলামে ঈমানের চেয়ে বড় জিনিস আর আছে কি? কিন্তু ঈমানের পরিপূর্ণতা উত্তম চরিত্রের দ্বারাই সম্ভব।
রাসূল সা. বলেছেন, মুমিনদের মাঝে পরিপূর্ণ ঈমান ওই ব্যক্তিরই আছে, যার চরিত্র সর্বোত্তম। এ হাদিসটি তিরমিজী, ইবনে হাম্বল, আবু দাউদ ও হাকেমে বর্ণিত আছে। এতে বোঝা যায়, ইসলামে ঈমানের পরিপূর্ণতা যে মানদন্ডের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা হলো উত্তম চরিত্র। এটি এমন একটি ফল যদ্বারা ঈমানরূপ বৃক্ষের পরিচয় পাওয়া যায়।
বস্তুত ইসলামে নামাজ এবং রোজার যে গুরুত্ব রয়েছে তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কিন্তু উত্তম চরিত্র কখনো কখনো এর স্থলাভিষিক্ত বলে ধরা হয়। রাসূলে আকরাম সা. বলেছেন, ‘মানুষ উত্তম চরিত্রের দ্বারা এই মরতবা লাভ করতে পারে, যা দিনভর রোজা রাখলে, রাতভর ইবাদত করলে অর্জন করা যায়। এ হাদিসটি কয়েকটি সমার্থবোধ পরিবর্তনসহ আবু দাউদ, ইবনে হাম্বলসহ বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে।
এতে বোঝা যায়, নফল নামাজে রাতভর জাগ্রত থাকা এবং নফল রোজায় দিনভর ক্ষুৎপিপাসায় কাতর থাকার ফলে যে দরজা হাসিল করা যায়, ঠিক সেই মরতবা উত্তম চরিত্রের দ্বারাও অর্জন করা যায়। উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ইবাদত ও আনুগত্যের আধিক্য আরো বাড়িয়ে তোলে।
ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষই সমান, কিন্তু ইসলামে উত্তম চরিত্র এমন একটি মানদন্ড, যার দ্বারা পরস্পর মানুষের দরজা ও মরতবা পৃথক হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।