মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তারপর জানা গেল যে, ওবামা প্রশাসন গোপনে ইরানের সাথে আলোচনা চালাচ্ছে। শাহজাদা মোহাম্মদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্টিফেন হ্যাডলি বলেন, তারা শুধু নিজেদের উপেক্ষিতই ভাবেনি, তারা উপলব্ধি করে যে, ওবামা প্রশাসন তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং আমি মনে করি যে, শাহজাদা মোহাম্মদ বিশেষভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে তা উপলব্ধি করেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক থাকা একজন আমিরাতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবদুল খালেক আবদুল্লাহ বলেন, দেশের গণঅভ্যুত্থানের পর শাহজাদা মোহাম্মদ দেখতে পান যে, ২২টি আরব দেশের মধ্যে একমাত্র ইউ.এ.ই-ই একটি স্থিতিশীল সরকার, কার্যকরী অর্থনীতি, সক্ষম সামরিক বাহিনী ও মাঝারি মতাদর্শ নিয়ে এখনো নিজের পায়ে খাড়া রয়েছে।
তিনি বলেন, ইউ.এ.ই অত্যন্ত বিপজ্জনক এই অঞ্চলের অংশ যা এখন অধিক বিপজ্জনক হয়ে উঠছে এবং গোলযোগ, যুদ্ধ ও উগ্রপন্থীপূর্ণ। তাই এখন কথা হচ্ছে, আমরা যদি খারাপ লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেই , তারা আমাদের ব্যবস্থা করবে।
দেশে শাহজাদা মোহাম্মদ কলম্বিয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশের ভাড়াটে সৈন্যদের সমন্বয়ে একটি বাহিনী গঠনের জন্য আগে বø্যাকওয়াটার নামে পরিচিত বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এরিক প্রিন্সের সাথে সম্পর্কিত একটি কোম্পানিকে নিয়োগ করেন, তিনি যে কোনো ধরনের ভিন্ন মতের প্রকাশ দমন করেন, গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য একটি আবেদন তৈরির সাথে জড়িত ৫ জন অ্যাক্টিভিস্টকে (মোট স্বাক্ষর প্রদানকারী ছিলেন ১৩২ জন) গ্রেফতার এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সহানুভ‚তিশীল সন্দেহে ডজন ডজন লোককে আটক করেন।
ইউ.এ.ই ওয়াশিংটনে তাদের প্রভাব যন্ত্রকে জোরদার করে। তারা ওয়াশিংটনে তদ্বিরকারী ও পরামর্শক পোষণকারী বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বৃহত্তম ব্যয়কারী হয়ে ওঠে। সেন্টার ফর রেসপন্সিভ পলিটিক্স-এর এক টালি অনুযায়ী ইউ.এ.ই এ বাবদ ২০১৭ সালে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয় করে। তারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে লাখ লাখ ডলার দান করে সুনাম অর্জন করে এবং প্রধান থিংকট্যাংকদের লাখ লাখ ডলার প্রদানের মাধ্যমে প্রকাশ্য বিতর্ক সৃষ্টির ব্যবস্থা করে।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট সম্প্রতি ২ কোটি ডলার পেয়েছে। ইউ.এ.ই প্রতিরক্ষা চুক্তির সাথে জড়িত থাকা সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা ক্লার্ক এর চেয়ারম্যান। ২০০৩ সালে সরকারী চাকুরি ছাড়ার পর তিনি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খোলেন যার প্রধান গ্রাহক ইউ.এ.ই।
যুক্তরাষ্ট্রে আমিরাতি রাষ্ট্রদূত ইউসুফ ওতায়বা হোয়াইট হাউস ও ক্যাপিটল হিলে নিজের জন্য বহু চুক্তি লাভ করেন। তিনি যুক্তি দেখান যে, ওবামা এ অঞ্চলকে ইরান ও উগ্রপন্থীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। শাহজাদা নিজে সর্বোচ্চ মহলে এ বিষয় তুলে ধরেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট গেটস বলেন, তিনি আমাকেও এটা বলেছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে কথার চেয়ে বেশি কিছু করেছেন শাহজাদা মোহাম্মদ। ২০১৩ সালে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণকে তিনি সমর্থন করেন। আফ্রিকার শৃঙ্গে প্রথমে নৌ দস্যুতা রোধে তিনি প্রথমে সোমালিয়ায় একটি বাহিনী, তারপর উগ্রপন্থীদের সাথে লড়াইয়ের জন্য সৈন্য পাঠান। তিনি এডেন উপসাগরে চারদিকে বাণিজ্য বন্দর বা নৌঘাঁটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।
লিবিয়াতে তিনি মিলিশিয়া নেতা ও ভবিষ্যত শক্ত মানব খলিফা হিফতারের বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করে আমেরিকার আবেদন ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেন। আমিরাতি পাইলটরা ত্রিপোলিতে বিমান হামলা চালায় এবং শেষপর্যন্ত সেখানে একটি বিমান ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে। সাবেক মহিলা মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সেল ওয়াহবা বলেন, অতীতে শাহজাদা মার্কিন সবুজ সঙ্কেতের আশা করছিলেন। এখন তিনি হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দিতে পারেন, কিন্তু তিনি আর অনুমতি চাইছেন না।
পাশের দরজার বড় শক্তি সউদী আরব সীমান্ত নিয়ে ইউ.এ.ইর সাথে ঝগড়া করেছে এবং আঞ্চলিক বড় শক্তি হিসেবে পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে দেশটিকে চাপের মধ্যে রেখেছে। কিন্তু ২০১৪ সালের শেষে যে সউদী যুবরাজের অবস্থান পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে চিহ্নিত হয় তিনি ছিলেন আমিরাতি শাহজাদার পরিচিত শত্রু।
আমিরাতি শাহজাদা সউদী উত্তরাধিকারের অভ্যন্তরীণ বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। তিনি স্বল্প পরিচিত এক বিকল্প উত্তরাধিকারী বাদশাহ সালমানের প্রিয় পুত্র ২৯ বছর বয়স্ক শাহজাদা মোহাম্মদ বিন সালমানের (এম.বি.এস) পক্ষে ওয়াশিংটনে সর্বাত্মক লবিয়িং প্রচারণা শুরু করেন। ওয়াশিংটনের প্রতি এম.বি.জেড-এর বার্তা ছিল এ রকম : যদি আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন ও পছন্দ করেন, তাহলে এই ব্যক্তিকে পছন্দ করবেন কারণ সেও একই সমস্যার মধ্যে আছে।
২০১৫ সালের মার্চে দু শাহজাদা ইয়েমেনে ইরান অনুগতদের ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে একত্রে সেখানে আগ্রাসন চালান। ২০১৭ সালে সউদী শাহজাদা তার ক্ষমতা সংহত করার পাশাপাশি দু শাহজাদা কাতারের সাথে সকল বাণিজ্যিক ও ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন বন্ধ করার জন্য কাতারের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
ইয়েমেন ও কাতার বিরোধ উভয়কেই নিয়মিতভাবে সউদী নেতৃত্বে সংঘটিত বলে বলা হলেও বিষয়টি প্রথম আমিরাতি শাহজাদাই ওয়াশিংটনের কাছে গছাতে চেয়েছিলেন বলে জানান বেন রোডস ও অন্যান্য সাবেক কর্মকর্তা। আমেরিকান ক‚টনীতিকরা বলেন, ২০১৫ সালে শাহজাদা মোহাম্মদ আরো বলেন যে, নতুন কোনো শান্তিচুক্তিতে ফিলিস্তিনকে আনতে আমিরাতি ও সউদী একটি নয়া নেতৃত্ব জরুরি। কিন্তু সে জন্য শাহজাদা মোহাম্মদ এক নয়া প্রশাসনের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানান।
হোয়াইট হাউসের ৪ সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, তীব্র মতপার্থক্য সত্তে¡ও শাহজাদা মোহাম্মদ ও প্রেসিডেন্ট ওবামার মধ্যে একটি আন্তরিক সম্পর্ক বজায় ছিল। প্রেসিডেন্ট মনে করতেন যে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা রয়েছে। সে কারণে শাহজাদা যখন তার সাথে শেষ বৈঠকের অনুরোধ জানালেন তখন বন্ধু হিসেবে ওবামা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে হোয়াইট হাউসে তার সাথে দুপুরের খাবার খেতে সম্মত হন।
কিন্তু যথেষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই শাহজাদা মোহাম্মদ এ কর্মসূচি থেকে সরে আসেন। পরিবর্তে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের জামাতা জেরার্ড কুশনার ও তার অন্যান্য উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাত করতে নিউইয়র্কে চলে যান। এ বৈঠক আয়োজনে শাহজাদা মোহাম্মদ যার সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি হলেন ফ্যালকন এজ ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড গারসন। তিনি বহু বছর ধরে শাহজাদার সাথে কাজ করেছিলেন এবং তিনি কুশনারেরও বন্ধু ছিলেন।
মার্কিন নির্বাচনের পর গারসন শাহজাদাকে এক ব্যক্তিগত বার্তায় লেখেন, আমি সর্বদাই এখানে আপনার বিশ্বাসী পরিবার সমর্থিত চ্যানেল হিসেবে আছি। যে কোনো সময় চাইলে আমাকে কিছু বলতে পারেন। তিনি শাহাজাদার কাছে আরেক বার্তায় নিজেকে ‘আপনার অনুগত সৈনিক’ বলে উল্লেখ করেন।
শাজাদার এ সফরটি গোপনীয় ছিল বলে মনে করা হয়, কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তা জেনে যায়। ওবামার উপদেষ্টারা বিস্মিত হন। কিন্তু বৈঠকের সাথে সংশ্লিষ্ট দু’ব্যক্তি জানান, ততক্ষণে মোহাম্মদ ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের সাথে ইরানের বিপদ ও ফিলিস্তিন শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে প্রশাসনের নীতি পরিবর্তন করতে কাজ করছিলেন। এ বৈঠকের পর গারসন শাহজাদাকে লেখেন, তারা আপনার কথায় ভীষণ মুগ্ধ হয়েছেন এবং বিশ্বাস করেন যে, আপনি তাদের প্রকৃত বন্ধু ও ঘনিষ্ঠতম মিত্র।
শাহাজাদা মোহাম্মদ রাশিয়ার সাথে মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। বিশেষ কৌঁসুলির রিপোর্ট মতে, শাহাজাদার ছোট ভাইদের একজন এক রুশ ব্যবসায়ীর সাথে গারসনের পরিচয় করিয়ে দেন যিনি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও উপসাগরের শাসকদের মধ্যে লিয়াঁজো হিসেবে কাজ করেন। ক্রিল দিমিত্রিয়েভ নামের ঐ রুশ ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে একটি ‘সমঝোতা পরিকল্পনা’ নিয়ে গারসনের সাথে আলোচনা করেন। ট্রাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সামান্য আগে গারসন কুশনারের কাছে দু’পৃষ্ঠার একটি সংক্ষিপ্তসার পরিকল্পনা দেন।
এ নিবন্ধের ব্যাপারে কিছু বলতে গারসন অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পরবর্তী মাস জানুয়ারিতে শাহজাদা মোহাম্মদ সিসিলিসে আমিরাতের একটি অবসর বিনোদন কেন্দ্রে ট্রাম্পের প্রতিনিধি বলে মনে করা এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের জন্য দিমিত্রিয়েভকে আমন্ত্রণ করেন। এরিক প্রিন্স নামের এই ব্যক্তি ছিলেন বø্যাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা যিনি ইউ.এ.ইর জন্য ভাড়াটে সৈন্য সংগ্রহ করতেন। (আগামীকাল শেষ পর্ব)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।