বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পুরো রমজান মাসেই শবে কদরের তালাশে থাকা উচিত। রমজানের প্রত্যেকটি রাত যদি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো যায়, তবে শবে কদর অবশ্যই ভাগ্যে মিলবে বলে আশা করা যায়। আর তা সম্ভব না হলে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে জাগ্রত থেকে জিকির-আজকার, নফল নামাজ ও কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে যদি কাটানো যায়, তবে শবে কদর মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এটা সম্ভব না হলে, অন্তত এই রাতগুলোতে যেন এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা হয়। এতে আশা করা যায়, শবে কদরের ফজিলত থেকে মাহরুম হতে হবে না। কারণ, হাদিস মতে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় সম্পূর্ণ রাত ইবাদত করার সমতুল্য। আর যদি বেজোড় রাতগুলো পূর্ণভাবে ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করার সুযোগ না হয়, তবে অন্তত ২৭ তারিখের রাতের গুরুত্ব দেয়া এবং পুরো রাত ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা দরকার।
শবে কদরের প্রধান ফজিলত কোরআনের সূরা কদরেই উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য দিকে বুখারী শরীফে একটি হাদিসে এসেছে, ‘রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে, ইসলামী বিধান মনে করে এবং তা সওয়াবের প্রত্যাশায়, তবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ অপর হাদিসে আছে, ‘হযরত জিব্রাইল আ. কদরের রাতে একদল ফেরেশতা নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং নামাজে বা অন্য কোনো ইবাদতে নিয়োজিত বান্দাদের জন্য দোয়া করেন।’
অন্য আরেক হাদিসে আছে, রাসূল সা. বলেন, এই মহান বরকতময় রাত তোমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের বরকত থেকে বঞ্চিত, সে সকল মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হলো। (ইবনে মাজাহ)। অর্থাৎ এ রাতে যার ইবাদতে কোনো অংশ নেই, তার মতো হতভাগ্যও আর কেউ নেই। শবে কদরের মহত্ত¡ এ একটি বিষয় হতেও পরিষ্কার হয় যে, এ রাতেই কোরআন নাজিল হয়। তাই এ রাতের মর্যাদা অপরিসীম।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. একদা রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করেন, শবে কদর যদি কখনো আমি পাই, তবে কোন দোয়াটি আমি আল্লাহর নিকট করব? তিনি বলেন, তুমি এই দোয়াটি পাঠ করবে। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ অর্থ, হে আল্লাহ আপনি অসীম ক্ষমাশীল, ক্ষমা আপনার পছন্দ। অতএব, আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। (তিরমিজী, ইবনে মাজাহ)।
মুফতিয়ে আজম আল্লামা মুফতি মুহাম্মাদ শফী রহ. বলেন, এ পবিত্র রজনীকে শুধু জুলুস এবং ওয়াজ মাহফিলে কাটিয়ে শুয়ে পড়া বড়ই অকল্যাণকর। ওয়াজ মাহফিল তো প্রত্যেক রাতে হতে পারে। ইবাদতের এই মূল্য ফিরে আসে না। হ্যাঁ, যেসব ব্যক্তি সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগি করার হিম্মত করে, তারা রাতের প্রথম ভাগে কিছু ওয়াজ-নসিহত শ্রবণ করে নফল ইবাদত ও তাওবা-ইস্তেগফারে লিপ্ত হতে পারে।
শবে কদর অথবা শবে বরাতের অতিরিক্ত খানাপিনার আয়োজন করা কোনো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আর এ প্রচলন আমাদের সালফে সালেহিনের মধ্যেও ছিল না। যদি কেউ শবে কদরের আলামত পেয়ে থাকে, তবে সে যেন তা গোপন রাখে এবং ইখলাসের সাথে ভালো করে দোয়া করে।
শবে কদর উপলক্ষে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত কিংবা নামাজ কোনো নির্ধারিত রাকাতের উল্লেখ নেই। যতটুকু সম্ভব সারা রাত জাগ্রত থেকে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া দুরুদ ও তাওবা-ইস্তেগফারে লিপ্ত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।