সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন-'
বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে।' রিজভী বলেন,
বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে না, বরং সরকার বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করছে।
ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি অসুস্থ ছিলেন, আপনাকেও বিদেশে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী ও চুয়াত্তর বছর বয়স্ক একজন নারী, তিনি গুরুতর অসুস্থ, বিশেষায়িত হাসপাতালে আমরা তাঁর সুচিকিৎসা দাবি করেছি।
শুক্রবার (৩১ মে) বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারকে অমানবিক উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা এতটা অমানবিক যে তাঁর চিকিৎসা নিয়েও কটাক্ষ করছেন, এমনকি আইনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে জামিনেও বাধা দিচ্ছেন। দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিশ্বাস করে সরকার প্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বেগম খালেদা জিয়া। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত এমনকি ছাত্র, শিক্ষক, সাধারণ মানুষ সবাই বিশ্বাস করে আদালতকে সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণ করে বেগম জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে এবং তিনি যাতে জামিন না পেতে পারেন সেজন্য সরকারই পদে পদে বাধার সৃষ্টি করছে। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই বেগম জিয়াকে বন্দি করে রেখেছেন। সুতরাং দেশনেত্রীকে বন্দি করে রাখা এবং বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই সূত্রে গাঁথা। বেগম জিয়ার বন্দীত্ব মানেই গণতন্ত্রকেই বন্দী করে রাখা। তবে কোন ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত আছে। তিনি ঈদের আগেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা গল্প ছাপানো হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে কিছু কিছু গণমাধ্যম সরকারের ইন্ধনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এমনকি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়েও নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে। দলের নেতৃত্ব নিয়েও নানা রকম সংবাদ প্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা বানোয়াট ও সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রেখেছে সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার চেয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রেখে বিএনপিকে নিঃশেষ করতে, ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু সরকারের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে, গ্রেফতার করে, নির্যাতন করে, গুম করে, খুন করেও বিএনপি নেতা-কর্মীদের দমানো যায়নি। বিএনপিকে ভাঙার সরকারের কোন অপচেষ্টাই সফল হয়নি।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে সরকার গঠন করেও তাদের স্বস্তি নেই। দেশ-বিদেশে বির্তর্কিত সেই নির্বাচন বৈধতা পায়নি। তাই বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে সরকার বিএনপি নেতা-কর্মিদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর অপচেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। কারাবন্দী থাকলেও সারাদেশব্যাপী বিএনপি’র লাখ লাখ নেতাকর্মী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি অনুভব করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন তিনি, বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, খোঁজ খবর রাখছেন, সাংগঠনিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। দলকে গতিশীল রাখতে ও সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিম ইতিমধ্যে প্রায় সকল জেলা সফর করে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেছেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকগণ সংশ্লিষ্ট জেলার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করছেন এবং সেই অনুযায়ী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের পরবর্তী কার্যক্রমের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন। দলের কমিটি গঠন, বিভিন্ন কর্মসুচি প্রনয়ণ সবই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে বাস্তবায়ন করছেন। সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা নানা কূটকৌশল করে বিএনপির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে না পেরে এখন কিছু গণমাধ্যমকে দিয়ে মনগড়া কল্পকাহিনী রচনা করছেন। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, গত দু দিন আগে ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন যা চাচ্ছি তা লিখতে পারছিনা। অনেক ইস্যুতে লেখা উচিত, যেমন ধরেন, গত নির্বাচন, এছাড়াও আরো ছোট নির্বাচনগুলো নিয়ে লেখা উচিত, যা লেখা ও বলা উচিত তা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লিখতে ও বলতে পারছি না। এ হলো বর্তমানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ! কিভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে যে, মাহফুজ আনামের মতো দেশের বরেণ্য সাংবাদিকরাও কলম চালাতে সাহস পান না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংস্থাগুলো কার্যত: গণমাধ্যমের ‘সুপার এডিটর’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমের কোন খবর ছাপানো যাবে, কোনটি ছাপানো যাবে না এসব কিছু তাদের খেয়ালখুশির ওপর নির্ভর করছে। আর সে কারণেই বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো গল্প বানিয়ে দিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা, আর সেগুলোই কিছু মিডিয়া হেডলাইন করে করে ছাপাচ্ছে।
এরআগে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে সকাল ১০টায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। মিছিলে নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপার্সন ও এদেশের জনপ্রিয় নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও ঈদের আগেই নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে সোচ্চার কন্ঠে শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করেন।
মিছিলে অংশগ্রহণ করেন-বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য টিএস আইয়ুব, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপত আলমগীর হোসেন সোহান, সহ-সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম মিঠু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইফতে খায়রুজ্জামান শিমুল, ছাত্রদল নেতা জিসান, সুমন হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী।