প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কান্ডজ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা গতকাল বলেছেন-‘খুনী, অর্থপাচারকারী এবং সুদখোর’রা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে, জোট বেঁধে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে’। তিনি আরও বলেছেন-ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিবে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কান্ডজ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছেন। তিনি তাঁর সামনে, পেছনে, ডানে-বায়ে যারা তাঁকে ঘিরে আছে তাদের দিকে তাকান না, শুধু তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের কুৎসা রটাতেই ব্যস্ত থাকছেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে কিম্ভুতকিমাকার একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্যই তিনি বেহুঁস হয়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সন্ত্রাসের বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে রাখতেই স্বৈরাচার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বজোড়া নামডাক হয়েছে। তাঁর মুখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার হাস্যকর। মঙ্গলবার ২৫ ( সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিকট জাতি জানতে চায়-বিগত দশ বছরে ব্যাংক, বীমা লুটের টাকা গেল কোথায় ? শেয়ার বাজার লুটের টাকা গেল কোথায় ? ব্যাংকে আমানতকৃত টাকা চেক দিয়ে মানুষ না পেয়ে ফেরত আসে কেন ? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছে কে ? এখনও কেন রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি ? আর্থিক খাত ধ্বংস করলো কে ? কানাডাতে বেগম পল্লী ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরী করেছে কারা ? গত দশ বছরে বিদেশে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে কারা ? প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ জন নিরীহ মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে কার নির্দেশে ?
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সাইফূল ইসলাম হিরু, সুমন ও জাকিরসহ বিএনপি’র অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে কে ? কালো কাঁচঢাকা মাইক্রোবাসগুলো কাদের ? উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবুকে প্রকাশ্য দিবালোকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে তো আপনি ( প্রধানমন্ত্রী) নিশ্চয়ই চেনেন, কার নির্দেশে তাদের বিচার হলো না ? মাফ পেয়ে গেলো ? যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি নাজমুলকে ক্রসফায়ারে হত্যাসহ বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে কে ? সর্বোপরি দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে বিতাড়ণের নির্দেশ দিয়েছে কে ? বর্তমানে দেশজুড়ে গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও লুটপাটের যে মহৌৎসব চলছে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর অসত্য ভাষণে তা ধামাচাপা দিতে পারবেন না-জনগণ এটিকে নিরেট চাপাবাজী বলেই গণ্য করে।
আসল জারিজুরি ফাঁস হওয়ার ভয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ছেন না মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, দম্ভবলে সকলের মুখ বন্ধ রাখতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জাতীয় সংসদে পাশ করেছেন-যেটিকে জনগণ সন্ত্রাসী-আইনী বলেই মনে করে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ফ্যাসিষ্ট সরকারেরই ভাষা। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু স্বাধীন সাংবাদিকতার পথই রুদ্ধ করেনি, জীবন-জীবিকার নিরাপত্তহীনতায় পড়েছে সাংবাদিক সমাজ। দেশব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা ও মানুষের মনে ভীতি ক্রমবর্ধমান।
বেগম খালেদা জিয়া চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাঁকে যখন অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তখন পূর্বের চিকিৎসাধীন নিয়ন্ত্রণে থাকা রোগগুলি ছাড়া অসুস্থ ছিলেন না। তাহলে এই পরিস্থিতি হলো কেন ? কর্তৃপক্ষের অবহেলা, হয়রানী, অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেতে বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে তাঁকে দিনযাপন করতে হচ্ছে, যা একটি চরম নির্যাতন। এই নির্যাতন সহ্য করতে যেয়ে তাঁর পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রুপ ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ তাঁকে সুচিকিৎসা হতে বঞ্চিত করেছে। তাঁকে বিশেষায়িত হাসপাতালের সুবিধা ও ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকেও বঞ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। দল ও পরিবার থেকে বারবার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠনের দাবিকেও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সরকারীদলের সমর্থক এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসকদের দিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডও দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরে স্ববিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। একদিকে তারা বলেছেন-“বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গুরুতর নয়, আবার বলেছেন, তাঁর আর্থারাইটিসের ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাত নড়াচড়া করতে পারেন না। শরীর অনেক অসুস্থ, তিনি পা তুলে ঠিক মতো হাঁটতেও পারেন না। বিএসএমএমইউ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।”
সরকারী মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্য অনুযায়ী বেগম জিয়া গুরুতর রোগে অসুস্থ নন, তাহলে তারা কেন হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেন ? বোর্ড বিএসএমএমইউ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে যেন এক প্যারাডক্স তৈরী করা হচ্ছে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবদীন ফারুক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন প্রমুখ।