পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আগামীকাল শুক্রবার। দিবসকে কেন্দ্র করে একদিকে চলছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যবহার করে জাপান টোব্যাকো কোম্পানির অবৈধভাবে সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার। অন্যদিকে তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ তুলে ধরে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি। এদিকে ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্র জটিলতার সঙ্গে তামাক সেবনের সম্পর্ক বিষয়ে জনসাধারণ এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যাপক পরিসরে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে টোব্যাকো এন্ড লাঙ হেলথ’।
ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত অসুস্থতা বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এবং গোটা বিশ্বে মৃত্যুর ৫টি শীর্ষস্থানীয় কারণের মধ্যে ২টিই ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা। তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপান ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের প্রধানতম কারণ। এ সমস্ত রোগের মধ্যে রয়েছে ফুসফুস ক্যান্সার, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিস (সিওপিডি), যক্ষ্মা এবং অ্যাজমা। তামাক ব্যবহারের ফলে প্রতি বছর বিশ্বে ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মৃত্যুবরণ করে আরো প্রায় ১০ লাখ মানুষ, যার বড় একটি অংশ শিশু। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায় তামাক ব্যবহারের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, যা একই সাথে তামাক ব্যবহারজনিত মোট মৃত্যুর ২৮ শতাংশের জন্য দায়ী।
উদ্বেগজনক বিষয় হলো-বাংলাদেশে শিশু যক্ষ্মা রোগী পাওয়ার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে এই হার বেড়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৩ সালে ছিল মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শতাংশ শিশুর দেহে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনও ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৮১ লাখ মানুষ। এমনকি বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে অনেক বেশি।
এই ভয়াবহতার পরও জাপান টোব্যাকো কোম্পানি আইন ভঙ্গের পাাশাপাশি তরুণদের তামাক ব্যবহারে আকৃষ্ট করতে দেশব্যাপি অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই অগ্রাসী কার্যক্রম সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রতি চ্যালেঞ্জ। আর তাই আইনভঙ্গ করে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদানের দায়ে জাপান টোব্যাকো কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারের আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানিয়েছেন তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো। বৃহষ্পতিবার (৩০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত ২১টি সংগঠনের আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে, একই দাবীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কাছে স্মারকলিপি প্রদন করা হয়। এর পাশাপাশি সারা দেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে স্থানীয় তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো বলছেÑ ‘জাপানিজ কোয়ালিটি’ স্লোগান, বিক্রয় কর্মীদের পোশাক এবং ভ্যানগাড়ীতে কোম্পানির ব্রান্ড কালার ও লোগো ব্যবহার করছে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি। এছাড়াও জাপান এক্সাটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের-র পরিবেশনায় নির্মিত অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রচার এবং সংশ্লিষ্ট ভিডিও বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। যা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘণ এবং শাস্তিযোগ্য আপরাধ। উক্ত আইনের ধারা-৫ ভঙ্গের প্রেক্ষিতে এক (১) লাখ টাকা অর্থদন্ড এবং তিন (৩) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
তারা বলেন, এ সময়ের জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা ও সঙ্গীত শিল্পী তাহসান তামাক কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত এসকল কার্যক্রমে যুক্ত আছেন। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, রাষ্ট্রের আইন লংঘন করে জনপ্রিয় একজন শিল্পীর এ ধরনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা তরুণ প্রজন্মকে তামাকজাত পণ্য সেবনে উদ্বুদ্ধ করবে। তাই তাহসান খানকে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে এই কর্মকান্ড হতে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার আহবান জানানো হয়। এছাড়া এই ধরনের আগ্রাসী প্রচারণা জাপান টোব্যাকোর মৃত্যুবিপণন কার্যক্রমের একটি অন্যতম কূটকৌশল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে জাপান টোব্যাকোসহ সকল তামাক কোম্পানির প্রচারণা কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংগঠনগুলো, অনতিবিলম্বে জাপান টোব্যাকোর প্রচার-প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন বন্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী রুবেল আহমেদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাঙ্গালির চিন্তা ধারার একটি বড় জগৎ জুড়ে রয়েছে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ এবং তার প্রতি মানুষের দূর্বলতাকে পুঁজি করে সিগারেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। এটা যেমন বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে অপমান করা, তেমনি মানুষকে ঠকিয়ে তামাকের প্রচারনা করা। এই ধরনের বিজ্ঞাপনে তারকা শিল্পী তাহসানের সংযুক্ত হওয়ার নিন্দাও করেন তিনি।
এদিকে তামাক নিয়ন্ত্রনে কাজ করা বেসরকারি সংস্থ্যা প্রজ্ঞার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাপান টোব্যাকো বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের পর থেকেই আইন ভঙ্গ করে বিভিন্ন উপায়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তামাক কোম্পানির অর্থায়নে তৈরি এ ধরনের অনুষ্ঠানে তাহসানের অংশগ্রহণ কোনোভাবেই কাম্য নয়, যা তরুণ সমাজকে তামাকপণ্যে আকৃষ্ট করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।