Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে নদীর পানিতে নির্ধারিত সীমার ৩০০ গুণ বেশি এন্টিবায়োটিক দূষণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৯, ১:০৭ পিএম

বিশ্বজুড়ে নদীর পানিতে এন্টিবায়োটিক দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিপদসীমার অনেক উপরে এ দূষণ। যেসব দেশে এই দূষণ সর্বোচ্চ তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে একটি স্থানের নদীর পানিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক মেট্রোনিডাজল দূষণ নির্ধারিত সীমার ৩০০ গুন বেশি। এ ছাড়া একই রকম দূষণ বিরাজ করছে কেনিয়া, ঘানা, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার নদীগুলোর পানিতে। হেলসিংকিতে গবেষকদের একটি গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সোমবার। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি, অনলাইন ভ্যানগার্ড।

ওই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে নদীর পানিতে বিপদজনকভাবে এন্টিবায়োটিক দূষণ ঘটেছে। নির্ধারিত সীমার ৩০০ গুন উপরে রয়েছে এই দূষণ। পরিবেশগত বিষক্রিয়া বিষয়ক ওই সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা বলেন, তারা ৭২টি দেশের নদনদী থেকে ৭১১টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশে অভিন্ন এন্টিবায়োটিক দূষণ পাওয়া গেছে। কমপক্ষে ১০০ বায়োটেক এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সমন্বয়ে গড়ে উঠা একটি গ্রুপ হলো এএমআর ইন্ড্রাস্ট্রি এলায়েন্স। তারাই নিরাপত্তার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু ডজন ডজন স্থান থেকে সংগ্রহীত নমুনায় দেখা গেছে সেই সীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে এসব পানিতে মানুষ ও পশুপাখির ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে সীমার অনেক উপরে।

যেসব স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে তার মধ্যে ৫১টিতে দেখা গেছে এএমআর ইন্ডাস্ট্রি এলায়েন্সের বেঁধে দেয়া সীমার অনেক উপরে রয়েছে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন। এটি ইনটেস্টিনাল এবং ইউরিনারি ট্যাকের সংক্রমণে ব্যবহার করা হয়। ইয়র্কে সাসটেইন্যাবিলিটি ইস্টটিটিউট-এর বিজ্ঞানী অ্যালিস্টার বক্সল বলেছেন, এই গবেষণার ফল চোখ খুলে দিয়েছে এবং বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে ফুটে উঠেছে বিশ্বজুড়ে নদীর পানিতে কি ভয়াবহভাবে এন্টিবায়োটিক উপাদান ছটিয়ে পড়ছে। এতে শুধু জীবনের ক্ষতি করছে এমন না। একই সঙ্গে এন্টিমাইক্রোবাইয়াল প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়ায় ভূমিকা রাখছে।

ওদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারা বলেছে, এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই ওষুধ শিল্প ও সরকারগুলোর প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে জরুরিভিত্তিতে ওষুধের একটি নতুন ধরণ ডেভেলপ করতে। ১৯২০ এর দশকে এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর তা নিউমোনিয়া, যক্ষা, মেনিনজাইটিস ও ভয়াবহ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের হাত থেকে কোটি কোটি প্রাণ বাঁচিয়েছে। কিন্তু এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ও অপব্যবহারই হলো শরীরে এন্টিবায়োটিক বিরোধী অবস্থা সৃষ্টির মূল কারণ।

নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান হারে পরিবেশে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতিও এর অন্যতম মূল কারণ। বক্সল ও তার টিমের সদস্যরা ১৪টি অভিন্ন এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন ৬টি মহাদেশে। এর মধ্যে নিরাপত্তার সীমা অনেক বেশি অতিক্রম করে গেছে এশিয়া ও আফ্রিকায়। তবে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে এ সমস্যা বৈশ্বিক। ইউরোপের অস্ট্রিয়াতে একটি স্থানে দেখা গেছে এই মহাদেশে অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে বেশি এন্টিবায়োটিক সংক্রমিত।

বরফ জমাট পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল দানিউব, মেকং, সেইনি, টেমস, টাইগ্রিম, চাও ফ্রায়া ও কয়েক ডজন নদী থেকে। এরপর ওইসব নমুনা পরীক্ষা করা হয় ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কে। এরপর এ নিয়ে যে রিপোর্ট তার সহ-লেখক ওই ইউনিভার্সিটির জন উইলকিনসন। তিনি বলেছেন, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও চীনের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক বিষয়ক নজরদারির বেশি রাখা হয়েছে এখন পর্যন্ত। এর আগে যেসব স্থানে মনিটরিং বা নজরদারি করা হয়েছিল তার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ডাটার যে ফারাক তা বুঝতে সহায়তা করবে আমাদের গবেষণা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দূষণ

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
৪ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ