বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
‘বাবারে ক্ষিদা যে সইজ্য অয় না, জানডা বারইয়া যাইতাছে। এক মুইট ভাত দে জানডা বাঁচাই। কত দিন ভাত চোখে দেহি না’। ক্ষুধার্ত ৮০ বছরের বৃদ্ধা হাজেরা বেগমের এই বুক ফাটা কাকুতি-মিনতিও পাষণ্ড ছেলে সাইফুলের মন গলাতে পারেনি। উল্টো সকালে চলৎশক্তিহীন মাকে মারধর করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। এ অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে তিনদিন পড়ে থেকে হাজেরা বেগম আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন।
গত শনিবার রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের উদ্যোগে হাজেরা বেগমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার উথুরী গ্রামে। এ ঘটনায় হাজেরা বেগম শনিবার রাতে ছেলেদের বিরুদ্ধে গফরগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ গত রোববার সন্ধ্যায় বৃদ্ধা হাজেরা খাতুনের বড় ছেলে আব্দুস সাত্তার ও নাতি তাফাজ্জল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, কৌশলে বৃদ্ধা মায়ের কাছ থেকে ১২ কাঠা জমি লিখে নিয়েছে ছোট ছেলে। এ কারণে বড় দুই ছেলে মায়ের প্রতি অসন্তুষ্ট। খোঁজ-খবর নেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। এ নিয়ে সালিশ বৈঠকও হয়েছে। অনিচ্ছা সত্তে¡ও ছোট ছেলে কৌশলে জমি লিখে নেয়ার কারণে মায়ের ভরণপোষণের ভারও তার ওপর বর্তায়। তবে ছোট ছেলেও তাকে আর জায়গা দেননি। গত বৃহস্পতিবার তাকে মারধর করে বাড়ির সামনের সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখে আসে সাইফুল। পরে গত শনিবার রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সোবহান ও কালা মিয়া প্রতিবেশীদের সহায়তায় বৃদ্ধা হাজেরা বেগমকে উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ব্যাপারে ওই ইউপি সদস্য বৃদ্ধার ছেলে ও নাতিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ, পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উথুরী গ্রামের মৃত রেসমত আলীর স্ত্রী হাজেরা বেগমের তিন ছেলে-সাইফুল ইসলাম (৪০), সোহরাব উদ্দিন (৪৫) ও আব্দুস সাত্তার (৫০)। প্রায় ১৬ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার সময় হাজেরা বেগমের নামে ১২ কাঠা জমি লিখে দেন। স্বামী মৃত্যুর পর ছেলেরা হাজেরা বেগমকে কিছুদিন ভরণপোষণ দেন। এক পর্যায়ে ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম গোপনে বৃদ্ধ মায়ের কাছ থেকে ১২ কাঠা জমি নিজের নামে লিখে নেন। এ খবর পাওয়ার পর অন্য ছেলেরা মায়ের ভরণপোষণ ও খোঁজখবর নেয়া বন্ধ করে দেন।
এই পরিস্থিতিতে ছোট ছেলে সাইফুলের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন হাজেরা বেগম। তবে কিছুদিন পর সাইফুলও তার মাকে ভাত কাপড়ের কষ্ট দিতে থাকেন। তিনবেলার মধ্যে কখনো একবেলা, আবার কোনো কোনোদিন খাবারই দেয়া হতো না। খাবার চাইলে উল্টো মাকে মারধর করতো সাইফুল।
এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বিচার সালিশও হয়েছে। কিন্তু মায়ের জমি লিখে নেয়ায় বিচার সালিশে সাইফুলকেই তার মা হাজেরা বেগমের ভরণপোষণের দায়িত্ব দেন সালিশকারীরা। তবে সাইফুল বিচার সালিশ না মেনে গত বৃহস্পতিবার সকালে মাকে মারধর করে বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ফেলে আসেন।
গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) আবদুল আহাদ খান বলেন, ছেলেদের হাতে বৃদ্ধা মা এমন নির্যাতিত হবেন বিষয়টি ভাবতেও কষ্ট হয়। হাসপাতালে গিয়ে ওই বৃদ্ধার খোঁজ নিয়েছি। পাশাপাশি বৃদ্ধার এক ছেলেসহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে। আইনী ব্যাপারে পুলিশ যা যা করার দরকার তাই করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।