বেগম খালেদা জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে সরকার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার বলে অভিযোগ করেছেন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকার যে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে তা তথ্যমন্ত্রী ও সেতু মন্ত্রীর বক্তব্যে বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। তথ্যমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন, তামাশা করছেন। তথ্যমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা বেপরোয়া, বেআইনী, মধ্যযুগীয়, জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোবাতাসহীন কান্ডজ্ঞানহীন হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর মতো। সাবেক ৪ বারের একজন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। মিডনাইট ভোটের সরকারের গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের কাছ থেকে এরকম বক্তব্য আসবে এটাই স্বাভাবিক। তথ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে প্রচ্ছন্নভাবে তারা বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বিনা চিকিৎসায় হত্যার উদ্দেশ্যে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন।
সোমবার (২৭ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সরকার খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে আসছে, আর বিএনপি এ নিয়ে অপরাজনীতি করে চলছে। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক যে সব সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো পুরাতন সমস্যা। এই সমস্যাগুলো মাঝে মধ্যে বাড়ে-কমে। সুতরাং এগুলো নতুন কোনো সমস্যা না। এছাড়া ক’দিন আগে তার জিহ্বা কামড় লেগে একটু ঘা হয়েছিল, তিনি স্বাভাবিকভাবে খেতে পারছিলেন না। এমন মাঝে মধ্যে আমাদেরও হয়। তার সেই সমস্যাও কেটে গেছে।’ তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য বিবেকবর্জিত, বেআইনী, মধ্যযুগীয়, জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোবাতাসহীন কান্ডজ্ঞানহীন।
বিএসএমইউ-তে তো চিকিৎসার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিই নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে সর্বোচ্চ চিকিৎসা হলে আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের চিকিৎসা দিতে কেন সিঙ্গাপুর নেয়া হয়? তারা কারাবন্দি থাকাবস্থায় স্কয়ার ও ল্যাব এইডে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল কেন? আমি তথ্যমন্ত্রীকে বলবো-আপনি রোজা-রমজানের দিনেও স্বভাবগত মিথ্যাচার পরিত্যাগ করতে পারেননি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ কেন, ন্যুনতম চিকিৎসা সেবাটুকুও পাচ্ছেন না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েই দেশনেত্রীকে আজীবন জেলে রাখার কথা বলেছেন তাই বেগম জিয়া তাদের কাছ থেকে সুচিকিৎসা কখনোই পাবেন না। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন-”খালেদা জিয়া কারাগারে যে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন এশিয়া মহাদেশের কেউ এমন সুযোগ পেয়েছে বলে আমার জানা নেই।”
রিজভী বলেন, এশিয়া বা উপমহাদেশের কোন দেশে কোথায় এমন আইন আদালতের ওপর ঘোষনা দিয়ে কর্তৃত্ব স্থাপন করে চার বারের প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যা সাজানো মামলায় জেলে রাখা হয়েছে হত্যার উদ্দেশ্যে কিনা তা জনগণ জানতে চায়। তবে মনে রাখতে হবে আপনাদের ভাগ্যেও এমন সুযোগ-সুবিধা আসতে পারে, তখন হয়তো বুঝতে পারবেন-এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের কারাগারের অবস্থা কি রকম।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএসএমইউ হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার নামমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে। সেখানে ভর্তির পর এখনও তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না, কিছু খেতে পারছেন না, হাত পা নাড়াতে পারছেন না। তাঁকে কারাগারে নেয়ার তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না, সরকারের প্রধানের প্রতিহিংসার আগুনে কারাবন্দি থাকার কারণেই তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন।
শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা তুষের আগুনের মতো সবসময় ধিকিধিকি করে জ্বলছে।
বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূলের নীতি যতক্ষণ সার্থক না হচ্ছে ততক্ষণ তাঁর এই আগুন নিভবে না।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন,
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় কারবন্দি রেখে এবং তাঁর জামিনে বাধা সৃষ্টি করেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতের ভোটে নির্বাচিত সরকারের স্বস্তি মিলছে না। কারণ গণতন্ত্রকে সংকটাপন্ন রেখে স্বস্তি পাওয়া যায় না।
শেখ হাসিনা চান নির্বাক জনগোষ্ঠী। সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা মন্ত্রীত্ব করছেন ঠিকই কিন্তু জনগণকে ভোট থেকে বঞ্চিত করে শান্তি মেলা দায়। সুতরাং ক্ষমতাসীনরা সম্পূর্ণরুপে অবৈধ ও দস্যুবৃত্তির নীতিতে সরকার পরিচালনা করছে।
দেশে কোনো মানুষ নিরাপদে নেই দাবি করে
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এমন অনিরাপদ অবস্থা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও ছিল না। সরকারের দুঃশাসনের কবলে পড়ে দেশজুড়ে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণ, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ছে। দু:শাসনের কবলে নারী ও শিশুরা সারা দুনিয়ার মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হচ্ছে। বরং নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতারা। চারদিকে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। সমাজের সর্বত্র বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আইনের শাসন না থাকায় মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। দেশের কোটি কোটি কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় একটা বৃহৎ জনগোষ্টি হতাশায় নিমজ্জিত। লোকসানের কবলে পড়ে এখন তারা প্রায় সর্বশান্ত। এ পবিত্র রমজান মাসের মানুষের জীবনে সামন্যটুকু স্বস্তি নেই। রাষ্ট্র কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আওয়ামী লীগ তাদের পুরানো ঐতিহ্যের মাধ্যমে দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়ায় মানুষ তাদেও থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই বেগম জিয়া সরকারের প্রতিহিংসায় কারাবন্দি থাকলেও এখনও তিনি দেশের মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁর আপোষহীন মনোভাব সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তাইতো আওয়ামী নেতাদের এত জ্বালা।
রিজভী বলেন, ঈদেও আগেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, জামিনে বাধা প্রদান করবেন না। তাঁকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী বিশষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে।