বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইতিকাফ আরবি শব্দ, আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, বসা, বিশ্রাম করা, সাধনা করা, ধ্যান করা ইত্যাদি। শরিয়াতের পরিভাষায় ইতিকাফ হলো- ইবাদত ও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির নিমিত্তে পুরুষের জন্য মসজিদে ও নারীদের জন্য আপন ঘরে অবস্থান করা।
রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা-ই-কিফায়া। মহল্লার কোনো একজন ব্যক্তি ইতিকাফ পালন করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। কেউ যদি ইতিকাফ না করে তবে সবাই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ত্যাগের জন্য দায়ী থাকবে। ইতিকাফ বর্জনের জন্য সবাই গুনাহগার হবে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। (সহীহ বুখারি ১/২৭১ হাদীস নং ২০২১, সহীহ মুসলিম ১/৩৭১, হাদীস নং ১১৭১)। রাসূলুল্লাহ সা. অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই ইতিকাফ করতেন। তাঁর সাথে সাহাবায়ে কেরামও ইতিকাফ করতেন। তিনি পুরো মাদানী জীবনে শুধু একবার জিহাদে যাওয়ার কারণে ইতিকাফ করতে পারেননি। তাও পরবর্তী বছরে বিশ দিন ইতিকাফ করে তার কাজা করে নিয়েছেন। তিনি জীবনের শেষ রমজানে ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। হাদীস শরিফে এসেছে, ‘নবী করীম সা. প্রত্যেক রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন।
তবে ওফাতের বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন।’ (সহীহ বুখারি ১/২৭৪, হাদীস নং ২০৪৪)। সুতরাং ইতিকাফ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিসীম মাহাত্ম্যপূর্ণ ইবাদত। রমজানের বরকত, ফজিলত ও মাগফিরাত পাওয়ার জন্য ইতিকাফের বিকল্প নেই। হাদীস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশে একদিন ইতকাফ করবে আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। অর্থাৎ আসমান ও জমিনের মাঝে যত দূরত্ব আছে তারচেয়ে বেশি দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’ (শুয়াবুল ঈমান ৩/৪২৫, হাদীস নং ৩৯৬৫)।
ইতিকাফের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ করা। রমজানের শেষ দশকেই আসে ‘লাইলাতুল কদর’। ‘লাইলাতুল কদর’ বা সৌভাগ্য রজনী লাভ করা মুমিনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই সৌভাগ্য রজনীকে আল কুরআনের সূরা ক্বাদরে ‘লাইলাতুল কদর’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ রাতটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই সৌভাগ্য রজনীকে অন্বেষণের অন্যতম মাধ্যম হলো ইতিকাফ।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নবী কারীম সা. রমজানের মাঝের দশদিন ইতিকাফ করতেন।
একবছর এভাবে ইতিকাফ শেষ করার পর যখন রমাজানের ২১তম রাত এল (অর্থাৎ যে রাত শেষে সকালে তিনি ইতিকাফ থেকে বের হবেন) তিনি ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে। কারণ, আমাকে শবে কদর সম্পর্কে অবগত করানো হয়েছে (যে তা শেষ দশকের অমুক রাত) এরপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ... সুতরাং তোমরা শবে কদর শেষ দশকে খোঁজ কর।” (সহীহ বুখারি ১/২৭১, হাদীস নং ২০২৭)।
ইতিকাফ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের অপূর্ব সুযোগ। ইতিকাফের সওয়াব যেমন বেশি, তেমনি তার গুরুত্বও বেশি। ইতিকাফের মাধ্যমে দুুনিয়াবী ও সাংসারিক যাবতীয় ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে মহান রবের সান্নিধ্য লাভ করার সাধনা করা হয়। ইতিকাফের দ্বারা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। ইতিকাফের কয়েকদিন (পানাহার ও যৌন কর্ম বর্জন দ্বারা) ফেরেশতাদের সঙ্গে সাদৃস্য হয়। ফেরেশতাসূলভ আচরণে অবিচল থাকার কঠোর প্রশিক্ষণ লাভ হয়। রোযার যাবতীয় আদব ও হক যথাযথ আদায়ের মাধ্যমে রোযা রাখার সৌভাগ্য হাসিল হয়। মসজিদে অবস্থান করার কারণে ইতেকাফকারী যে সব আমল করতে অক্ষম যেমন জানাযায় শরিক হওয়া, অসুস্থদের সেবা করা ইত্যাদি, সে সব আমল না করেও তার সাওয়াব পাওয়া যায়। সর্বোপরি ‘লাইলাতুল কদরের’ ফজিলত ও হাজার মাসের সওয়াব তথা ৮৩ বছর ৪ মাসের পুণ্য লাভ করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।