বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
স্বর্ণের ক্ষেত্রে জাকাতের নিসাব হলো বিশ মিসকাল। - সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭০৭৭, ৭০৮২। আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি তথা ৮৫ গ্রাম। রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো দুই শ’ দিরহাম। - সহিহ বুখারি, হাদিস ১৪৪৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস ৯৭৯।
আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা তথা ৬১২.৩৬ গ্রাম রৌপ্যের সমপরিমাণ মূল্যের হয়ে যায় তাহলেও
এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে জাকাত দিতে হবে।
প্রয়োজনের উদ্বৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্যদ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয়, তাহলে জাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর জাকাত দিতে হবে। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৬৭৯৭, ৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস ৯৯৩৭।
যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে সব সম্পদ হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। - মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭০৬৬, ৭০৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩।
কিছু দৃষ্টান্ত :
ক) কারো কাছে নিসাবের কম সোনা এবং নিসাবের কম রুপা আছে, কিন্তু যে পরিমাণ সোনা আছে তার মূল্য মজুদ রুপার সাথে যোগ করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় বা তার চেয়ে বেশি হয়। তাহলে সোনা-রুপার মূল্য হিসাব করে জাকাত আদায় করতে হবে। - মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস ৯৯৭৯, ১০৬৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩।
খ) কারো কাছে কিছু স্বর্ণালঙ্কার আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য আছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এর জাকাত দিতে হবে। - রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩।
গ) কারো কাছে নিসাবের কম রুপা আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা বা বাণিজ্যদ্রব্য আছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এরও জাকাত দিতে হবে। - আদ্দুররূল মুখতার ২/৩০৩।
নিসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের জাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে। - মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭০৩২, ৭০৭৪, ৭০৭৫, ৭০৭৯, ৭০৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯০; আদ্দুররূল মুখতার ২/২৯৯।
কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এজাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল এ ক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরনো সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরনো সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না। - মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৬৮৭২, ৭০৪০, ৭০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস ১০৩২৫, ১০৩২৭।
বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তবে ওই সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর জাকাত আদায় করতে হবে। - মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭০৪২, ৭০৪৪; আদ্দুররূল মুখতার ২/৩০২।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।