পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
যেসব ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে একক অংকে না আনবে তাদের সরকারি কোনো আমানত দেওয়া হবে না। সরকারের এই কঠোর অবস্থান গত বৃহস্পতিবার এক সার্কুলারের মাধ্যমে সব ব্যাংকের প্রধানদের জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২০ মে ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রাপ্ত অর্থ এবং সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব তহবিলের অর্থ আমানত রাখা প্রসঙ্গে’ যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ ব্যাংকগুলো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর আমানত পাবে না। যেসব ব্যাংক এরই মধ্যে ৯ শতাংশে ঋণ দিচ্ছে, তারাই পাবে এ আমানত। তবে আমানতের সুদের হার হতে পারবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।
নানা আলোচনার পর গত বছরের ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা-মালিকরা অঙ্গীকার করেছিলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ব্যাংকই সেই অঙ্গীকার পূরণ করেনি। সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপের পরও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কেন কমছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য ব্যাংক মালিকদের সমালোচনা করেছেন।
৩১ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শিল্প মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি। একবার উদ্যোগ নিলাম সঙ্গে সঙ্গে কথাও বললাম। বেশ কিছু সুযোগ সুবিধাও করে দিলাম। যেমন- আগে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ অর্থ সরকারি ব্যাংকে আর ৩০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হত। ব্যাংকের মালিকরা বললেন এটা যদি ফিফটি ফিফটি করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা (সুদের হার) সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব। সেটাও কিন্তু করে দিলাম। কিন্ত তারা সুদ হার কমাল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংক খাতে আমানতের সর্বোচ্চ সুদ ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং ঋণের সুদ ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব তহবিলের অর্থ দেশের কোনো ব্যাংক বা সরকার-নির্ধারিত অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (লিজিং কোম্পানি) জমা রাখতে পারবে। স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় থাকা প্রকল্পের জন্য সরকার তাদের যে অর্থ দেয়, সে অর্থও তারা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে জমা রাখতে পারবে।
বিশেষ নোটিশ আমানত (এসএনডি), সঞ্চয়ী হিসাব এবং স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) রাখা এসব আমানতের বিপরীতে সুদ হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে ৯ মাস আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২ আগস্ট যেসব ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং এরইমধ্যে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা এ সুবিধা পাবে না।
কোনো ব্যাংক কত সুদে ঋণ দেয় ও আমানত নেয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে স¤প্রতি এ ব্যাপারে একটি তালিকা চেয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত ও ঋণের সুদকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে এ তালিকা তৈরি করে। প্রজ্ঞাপন তৈরির আগে এ তালিকা বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানিয়েছে, তিন মাস বা তার বেশি কিন্ত ছয় মাসের কম মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে ২৭টি ব্যাংক ৬ শতাংশ বা তার কমে আমানত নেয়। রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী, জনতার পাশাপাশি চারটি বিদেশি ও ১৭টি বেসরকারি ব্যাংক এ তালিকায় রয়েছে। বাকি ৩০টি ব্যাংক একই ধরনের আমানত নেয় ৬ দশমিক ৫ থেকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত।
ঋণের সুদকে পাঁচটি শ্রেণি করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে- ক্ষুদ্র শিল্পে মেয়াদি ঋণ, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণ, ক্ষুদ্র শিল্পে চলতি মূলধন, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে চলতি মূলধন এবং ট্রেড ফাইন্যান্সিং।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদের হার ক্ষুদ্র শিল্পে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে। ৯ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেওয়া হয় এ শিল্পে। ক্ষুদ্র শিল্পে চলতি মূলধনে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় ব্যাংকগুলো। বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে চলতি মূলধনেও ৯ দশমিক ৫০ থেকে ১৭ শতাংশ সুদ নেওয়া হয়। এছাড়া বাণিজ্য অর্থায়নেও সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ সুদ নেওয়া হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি ব্যাংক ৯ দশমিক ৫ থেকে ১৬ শতাংশ, ৮টি ব্যাংক ৯ থেকে ১৩ শতাংশ এবং ১৩টি ব্যাংক ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিয়ে থাকে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।