বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম-এর যে দোয়াসমূহ করেছিলেন, তন্মধ্যে আরেকটি দোয়া ছিল, যে ব্যক্তি তার মা-বাবাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল এবং তাদের খেদমত করে তাদের সন্তুষ্টি ও দোয়ার বরকতে জান্নাতের উপযোগী হতে পারল না, সে ধ্বংস হোক, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক। আল্লাহতায়ালা কোরআন শরীফে মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারা মা-বাবাকে কষ্ট দেয়, অসদাচরণ করে তারা দুনিয়ায় বহু কিছু অর্জন করতে পারে, অঢেল সম্পত্তির মালিক হতে পারে, কিন্তু সুখ-শান্তি লাভ করতে পারে না। খোঁজ নিলে সমাজে এমন বহু মানুষ পাওয়া যাবে।
মা-বাবার অবাধ্যতা: হাদীস শরীফে হযরত আবু বাকরাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহতাযালা চাইলে বান্দার সকল গোনাহ মাফ করে দিতে পারেন। তবে মা-বাবাকে কষ্ট দেয়ার গোনাহ তিনি মাফ করবেন না; বরং তার মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়াতেই এর শাস্তি ভোগ করাবেন। -শুআবুল ঈমান : ৭৮৯০
বনী ইসরাঈলের এক বুযুর্গের ঘটনা: এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে (হাদীস নং ১২০৬) হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। বনী ইসরাঈলে জুরাইয নামে এক বুযুর্গ ছিলেন। তিনি তাঁর ইবাদতখানায় নির্জনে সর্বক্ষণ ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন। একদিন তার মা (বিশেষ কোনো প্রয়োজনে) তাকে ডাকল, জুরাইয!
জুরাইয তখন নফল নামাযে ছিল। মায়ের ডাক শুনে জুরাইয ধন্দে পড়ে গেল, কী করবে? মনে মনে বলছে, হে আল্লাহ! আমার মা আর আমার নামায।
মা পর পর আরও দু’বার ডেকে কোনো সাড়া পেলেন না। জুরাইযও কী করবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বার বার ডেকেও ছেলের সাড়া না পেয়ে মনঃক্ষুণœ হলেন এবং একপর্যায়ে জুরাইযকে বদ-দোয়া দিলেন, হে আল্লাহ! কোনো ব্যভিচারিণীর মুখোমুখি না হয়ে যেন জুরাইযের মৃত্যু না হয়।
কিছুদিন পরের কথা। জুরাইযের ইবাদতখানার পাশে এক রাখাল মেয়ে বকরি চড়াত। সে অপর এক রাখালের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে।
লোকেরা তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, জুরাইয আমার সঙ্গে যিনা করেছেন। লোকেরা এ কথা শুনে জুরাইযের ইবাদতখানা গুঁড়িয়ে দেয়। তাকে গাল-মন্দ করতে থাকে। জুরাইয তাদের কথা শুনে বললেন, তোমরা ওই মেয়ে ও তার সন্তানকে নিয়ে আসো। মেয়েটি এলে জুরাইয তার সদ্যঃপ্রসূত শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলেন, এই বাচ্চা! বলোত তোমার পিতা কে?
বাচ্চাটি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, আমার পিতা অমুক রাখাল।
এখানে দেখা যায়, জুরাইয একজন বুযুর্গ হওয়া সত্তে¡ও মায়ের বদ-দোয়ার কারণে সমাজে অপমাণিত হলো। অথচ তিনি ছিলেন নির্দোষ। বোঝা গেল, মা-বাবাকে কষ্ট দিলে এর শাস্তি দুনিয়াতেই ভোগ করতে হয়। আল্লাহপাক আমাদের হেফাজত করুন।
মা-বাবার খেদমতের সওয়াব: আমরা সকলে মা-বাবার খেদমত করব, তাদের দোয়া নেব। কখনো তাদের সঙ্গে অসদাচারণ করব না। মা-বাবার খেদমতের অনেক ফায়দা ও সওয়াব রয়েছে। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো সদাচারী ছেলে-মেয়ে যদি তার মা-বাবার দিকে দয়া-মায়ার দৃষ্টিতে তাকায়, তা হলে আল্লাহতায়ালা তাকে প্রত্যেক বার তাকানোর বিনিময়ে একটি কবুল হজের সওয়াব দান করবেন।
সাহাবায়ে কেরাম আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেউ যদি দিনে একশ’ বার মা-বাবার দিকে তাকায়?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। আল্লাহতায়ালা অনেক বড় ও সর্বোত্তম সত্তা।-শুআবুল ঈমান : ৭৮৫৬
মা-বাবার চেহারার দিকে তাকালে যদি একটি কবুল হজের সওয়াব পাওয়া যায়, তা হলে তাদের খেদমত করলে কী পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে! মা-বাবা কাফের-বেদীন হলেও তাদের সঙ্গে সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মা-বাবার খেদমত করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।