Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদত্যাগের ঘোষণা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র

পথের শেষ ৭ জুন খেলার শেষ তাস হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেক্সিট ইস্যু সফল করতে ব্যর্থ হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার তিনি এই ঘোষণা দিলেন। 

সকালে লন্ডনে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে এক আবেগপূর্ণ বিবৃতিতে মিসেস মে তার বিদায়ের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আগামী ৭ জুন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পদত্যাগ করবেন। সংক্ষিপ্ত বিবৃতির শেষে কথা বলতে কষ্ঠ হচ্ছিল। তার গলা ভেঙে আসে এবং চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।
গতকাল দ্রুত আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় থেরেসা মে’র পদত্যাগের ঘোষণার খবর গুরুত্বসহকারে স্থান পায়। বিবিসি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, ব্রেক্সিট অর্থাৎ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের ব্যাপারে তার নতুন পরিকল্পনা তার মন্ত্রিসভায় ও পার্লামেন্টে অনুমোদিত হবে না এটা স্পষ্ট হবার পরই এ পদত্যাগের ঘোষণা এলো। তবে বলা হয়েছে যে কনজারভেটিভ পার্টি একজন নতুন নেতা নির্বাচিত না করা পর্যন্ত তিনি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
উল্লেখ্য, ব্রেক্সিট ভোটে ইতোমধ্যেই তিনবার হেরে গেছেন তিনি। ব্রেক্সিট কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে মে’র পরিকল্পনাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের অনুমোদন পেয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পর পর তিন বার তুলেও তা পাস করাতে ব্যর্থ হন মে। এর পরই মে’কে অবিলম্বে পদত্যাগের জন্য পার্টি চাপ দিতে থাকে।
এরপর তিনি বিরোধীদল লেবার পার্টির সাথে আলোচনা করে আরেকটি সংশোধিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। কিন্তু এর যে তীব্র বিরূপ সমালোচনা হয়। তাতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও পার্লামেন্ট- কোথাও এটা পাস করানো যাবে না। এক বিবৃতিতে মে বলেন, বেক্সিট সফল করতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু পর পর তিনবার ব্যর্থ হয়েছি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে তার উত্তরসূরী যিনি হবেন তিনি ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পক্ষে ২০১৬ সালের গণভোটে ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
এর আগে গত মে মাসে টোরি এমপিদের সঙ্গে এক বৈঠকের পরই পদত্যাগের বিষয়ে সম্মতি জানান তিনি। পরবর্তী নির্বাচনের সময়সীমাও জানিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মে। এদিকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, থেরেসা মে পদত্যাগ করার পর তিনি নির্বাচনে লড়বেন।
গত বছরের শেষের দিকে একটি আস্থা ভোটে নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের ভোটে কোন রকমে উতরে গিয়েছিলেন তিনি। সামান্য ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। তবে ডিসেম্বরের আগে নতুন করে আনুষ্ঠানিকভাবে আর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারবেন না মে।
এর আগে দ্য ইকনোমিস্ট বলে, একটি মাত্র কাজের জন্য থেরেসা মে তার ডাউনিং স্ট্রিটের সময়কে উৎসর্গ করেছেন। তা হচ্ছে ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে নিয়ে আসা। গত বছরের নভেম্বরে তার বিরোধীদের সঙ্গে ব্রাসেলসে একটি খসড়া চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে তিনি প্রথম বাধা দূর করেন।
দেশে তিনি যে সব অঙ্গীকার করেছিলেন এই শর্তগুলো সেগুলোর চেয়েও এত খারাপ ছিল যে পার্লামেন্টে তিনি সে চুক্তি অনুমোদন করতে ব্যর্থ হন। পার্লামেন্টের এমপিরা তিনবার তার সে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন। নিজের দলের চাপের মুখে মে অঙ্গীকার করেন যে চতুর্থবার ও শেষবারের মত তিনি এ চেষ্টায় ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করবেন। আগামী মাস পর্যন্ত সে ভোট হচ্ছে না।
তবে এ সপ্তাহে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে সংশয়বাদীদের সমর্থন লাভের তার শেষ চেষ্টা দৃশ্যত উল্টো ফল দেয়ায় এবং একজন সিনিয়র মন্ত্রীর পদত্যাগের কারণ হওয়ায় চুক্তি কার্যত আর অনুমোদিত হচ্ছে না। একই সময়ে নাইজেল ফারাজ ও তার নতুন ব্রেক্সিট পার্টির হাতে ইউরোপীয় নির্বাচনে পরাজিত হতে চলেছে কনজারভেটিভ দল। ফলে খুব শিগগিরই ব্রিটেন একজন নয়া প্রধানমন্ত্রী পাবে।
এ সময়ের ভাষ্যকারদের চেয়ে ঐতিহাসিকরা হয়ত মে’র প্রতি আংশিক সদয় হতে পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অযোগ্যতা বেক্সিট প্রকল্পকে অসম্ভব করে তুলেছে। ব্রেক্সিটের অনিবার্য ফল হিসেবে বহু বেদনাদায়ক বাণিজ্য হ্রাসের সম্মুখীন মে অন্যদের কঠোর অবস্থান ও সমঝোতার বিষয়টি পরাজয় হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার পর এ কথা মানতে অস্বীকার করেন যে খুব বেশি দেরী না হওয়া পর্যন্ত সমঝোতা জরুরি ছিল।
ব্রেক্সিটের বহু পক্ষ পরিত্যাগকারী মনে করেন যে ব্রেক্সিটের একটি সঠিক, ব্যয়হীন সংস্করণ আছে। শুধু অযোগ্যতা ও ষড়যন্ত্রের কারণে যা প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। একই সাথে সরকারকে অব্যাহত ভাবে পশ্চাদপসরণ করতে দেখা বহু ব্রেক্সিট সমর্থনকারীই মনে করেন যে ব্রেক্সিটকে এখন বাতিল করা যেতে পারে।
মে’র উত্তরাধিকার হচ্ছে মেরুকরণ এবং তা তার উত্তরসূরীকে বিপদে ফেলবে। প্রায় তিন বছর আগে গণভোটের পরবর্তী সময়ে বহু ব্রেক্সিট সমর্থকই একটি চুক্তি মেনে নিয়েছিল যাতে ব্রিটেন একক বাজার ত্যাগ করবে ও মুক্ত চলাচল বন্ধ করবে। একমাত্র সংযোগ হিসেবে কাস্টমস ইউনিয়নের অস্থায়ী সদস্যপদ থাকবে। অধিকাংশই এখন এ ধরনের পরিণতিকে অমার্জনীয় বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন (কিছু মনে করবেন না যে তাদের অনেকেই এখনো নিশ্চিত নন যে কাস্টমস ইউনিয়ন আসলে কি?)।
একই ভাবে অবশিষ্ট ব্রেক্সিটপন্থীরা একটি কাস্টমস ইউনিয়নের সম্ভাবনা সম্পর্কে একসময় সন্তুষ্ট ছিলেন। যতক্ষণ তা দ্বিতীয় দফা গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে পার্লামেন্টে ভোট গ্রহণের সাথে সম্পর্কিত ছিল। কিন্ত মে যখন অনেক দেরীতে চলতি সপ্তাহে এ ধরনের প্রস্তাব করলেন, তখন যথেষ্ট নয় বলে সকল পক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে।
তাই ২০১৬ সালে যেখানে ছিল সেখানকার চাইতে সমঝোতার সুযোগ ভীষণ ভাবে সঙ্কুচিত হয়ে আসে। বিরোধী দলের সাথে আলোচনা ও ব্রেক্সিট বিষয়ে এমপিদের ভোটদানের সম্ভাবনা এখন আর নেই, কারণ তা আনেক বিলম্বে শুরু হয়েছে। মে একটি বিভক্ত দেশ পেয়েছেন যা দ্রুত একীভ‚ত করা দরকার। তার পদক্ষেপ এর দুটি গোত্রকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।
তার হাতে খেলার আর তাস নেই। নেতৃত্বের পরিবর্তন ওয়েস্টমিনস্টারে আলোচনায় নতুন গতি সঞ্চার করতে পারে যা ব্রিটেনের প্রতি ইইউর আহ্বান সত্তে¡ও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থগিত হয়ে আছে। যারা পরবর্তী নেতা মনোনীত করবেন, কনজারভেটিভ দলের সেই সদস্যদের মধ্যে বরিস জনসন জনপ্রিয়। তিনি দেশের জন্য এক মারাত্মক জুয়াখেলায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। তবে তিনি রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত নমনীয়তায় মে’র চেয়ে অধিকতর যোগ্য হতে পারেন যা ব্রিটেনকে ফাঁদের বাইরে আনতে পারে যার মধ্যে সে এখন পড়ে আছে।
কারোরই এ ধারণা করা উচিত নয় যে মে’র প্রস্থান ব্রিটেনের ব্রেক্সিট সমস্যার সমাধান করবে। বরিস জনসন প্রত্যাহার চুক্তি পুনরালোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু ইইউ নিশ্চিত তা প্রত্যাখ্যান করবে। দেশের অধিকাংশ ব্রেক্সিট ত্যাগের পক্ষীয়- ভোটার বর্তমান চুক্তির এত প্রচন্ড বিরোধী যে তারা ব্রেক্সিট পরিত্যাগ করবেন। কিন্তু কোনো চুক্তি মানবেন না। ব্রেক্সিট ত্যাগ- ও ত্যাগ না করার পক্ষের ভুঁইফোঁড় দলগুলো লেবার ও টোরিদের চরম পন্থার দিকে টানছে। বিভিন্ন দল ভিত্তিক চুক্তির সম্ভাবনা এখন আগের চেয়েও সুদূরপরাহত মনে হচ্ছে। যতক্ষণ কোনো চুক্তির সম্ভাবনা দেখা না যাচ্ছে। পাউন্ডের মূল্য পতন ঘটছে। অফিসে মে’র সময়টা কঠিন কেটেছে। তবে তার উত্তরসূরি ভালো সময় দেখতে পাবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ