বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ঈমান এবং নৈতিক উত্তম গুণাবলি পরস্পর সম্পূরক। ঈমানে পূর্ণ বিকাশ উত্তম নৈতিক গুণাবলির মাধ্যমেই সাধিত হয়। এ জন্য মহান আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন, যারা তার প্রিয় বান্দা তাদের গুণাবলিকে এভাবে তুলে ধরেছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘বস্তুত তোমাদের যা কিছু দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী।
কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা উত্তম ও স্থায়ী তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে এবং তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কাজ হতে বেঁচে থাকে এবং রাগান্বিত হলে ক্ষমা করে দেয়। যারা তাদের প্রতিপালকের আহŸানে সাড়া দেয়, নামাজ কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে নিজ নিজ কাজ সম্পাদন করে এবং আমার দেয়া রিজিক থেকে তারা ব্যয় করে এবং যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দই এবং যে ক্ষমা করে দেয়, আপস নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে।
আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না, তবে অত্যাচারিত হবার পর যারা প্রতিবিধান করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা যাবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে বিরুদ্ধাচরণ করে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। অবশ্য যে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয় তা দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (আল কোরআন)।
এই আয়াতে মুমিনদের যেসব নৈতিক গুণাবলির কথা ব্যক্ত করা হয়েছে তা হলো এই যে, ধৈর্যধারণ করা, ক্ষমা করা, দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ না করা, মানুষের ওপর অত্যাচার না করা, অত্যাচারিত হবার পর প্রতিবিধান করা, আপস নিষ্পত্তি করা, প্রতিপালকের আহŸানে সাড়া দেয়া, নামাজ কায়েম করা, নিজেদের মাঝে পরামর্শের ভিত্তিতে কার্য সম্পাদন করা, আল্লাহর প্রদত্ত রিজিক থেকে ব্যয় করা, গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকা, রাগান্বিত হয়েও ক্ষমার দ্বারা অবারিত রাখা, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে তার ওপর নির্ভর করা।
এসব গুণ মুমিনের আলোকোজ্জ্বল জীবনকে আরো আলোকিত করে তোলে। অন্য এক আয়াতে মুমিনের নৈতিক গুণাবলিকে এভাবে বলা হয়েছে যে, ‘তোমরা স্বীয় প্রভুর ক্ষমার দিকে ধাববান হও ও সেই বেহেশতের দিকে, যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়। যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (আল কোরআন)।
এখানে বিশ্বাসীদের পরিচয় তুলে ধরে বলা হয়েছে যে, তারা সচ্ছল এবং অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে, নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে, মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে এবং তারা সৎকর্মশীল। তারপর আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন যে, যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে বা নিজেদের প্রতি জুলুম করে, আল্লাহকে স্মরণ করে ও নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কে পাপ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে জেনে-শুনে তার পুনরাবৃত্তি করে না।
এই আয়াতের মর্মের প্রতি লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, প্রকৃত মুমিন তারাই, যারা কোনো ভুল কাজ করে ফেললে তার পুনরাবৃত্তি করে না; এবং নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। কোনো অশ্লীল কাজ ও সীমালঙ্ঘন করে ফেললে আল্লাহর জিকির করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।