Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘রাষ্ট্রের মেরামত জরুরি’

সংবিধান সংশোধনসহ সুজনের ১৮ সংস্কার প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনে স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ ঘোষণা দিয়েছিল। অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আইনের শাসনের দাবিতে তারা অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রæতি দিয়ে রাজপথ থেকে ক্লাসে নেয়া হয়। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রæতিই বাস্তবায়ন হয়নি। এবার রাষ্ট্র মেরামতের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। তারা সংবিধানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার দাবিসহ ১৮ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে। গতকাল ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এই প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। 

রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্বাচন পদ্ধতি, সংবিধান সংশোধন, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ ১৮টি প্রস্তাব তুলে ধরে সুজন বলেছে, এসব সংস্কার প্রস্তাবের আলোকে জাতীয় সনদ তৈরি করতে হবে। সংগঠনটি মনে করে দেশের চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য এসব সংস্কার জরুরি।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, অধ্যাপক সি আর আবরার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, সংরক্ষিত আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য জাহেদ উর রহমান, সিপিবির সভাপতিমÐলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল কাফি রতন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংস্কার’ শিরোনামে প্রস্তাব পাঠ করেন সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা স্বাক্ষর সফল হলেও ব্যর্থ হয়েছে তার বাস্তবায়ন। তিন জোটের রূপরেখার আদলেই নতুন জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করতে উদ্যোগ নিতে হবে। গোলটেবিলে অংশ নেয়া বক্তারা সংস্কারের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, রাষ্ট্রের মেরামত জরুরি হয়ে পড়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। তাই তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মতো কিছু একটা বের করতে হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি আরো বলেন, দেশে জনগণের ভোটের অধিকারের পাশাপাশি উদার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সংক্রামক ব্যাধির মতো উগ্রপন্থীদের উত্থান ঘটছে বিশ্বজুড়ে। তাই এখানেও এমন শঙ্কা আছে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে কোনো কিছুই ঠিকভাবে চলছে না। শাসনব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাই আলোচনার মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব সংশোধন করে সারা দেশে জনমত তৈরি করা হবে।
মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন বলেন, আইয়ুব খানের সময়েও গণমাধ্যমে অনেকটা স্বাধীনভাবে লেখালেখি হয়েছে। এরশাদের সময়ে প্রকাশ্যে রাজপথে প্রতিবাদ হয়েছে। অথচ এখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও স্পষ্ট করে বলা যায় না। নানা ধরনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়। বিপদগ্রস্তরাও এখন কাঁদতে ভয় পায়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করা যাচ্ছে না। দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জনগণের মূল্যায়ন কমে গেছে। কিন্তু জনগণের মধ্যে অসন্তোষ থাকলে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না। গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, সবার রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করতেই সংস্কার করতে হবে।
সুজনের সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়, মূল সংবিধানে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সংবিধানের সেই অসা¤প্রদায়িক চরিত্র ধরে রাখা যায়নি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ছিল একতরফা ও বিতর্কিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপি ও মানুষের ভোটাধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে। আইন সংশোধন ও নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। সংখ্যাগত দিক থেকে বিরোধীদের শক্তি যত সীমিতই হোক, তাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া আবশ্যক। বিচার বিভাগের সত্যিকারের পৃথকীকরণ ও আইনের শাসন কায়েম করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার জন্য প্রয়োজন কমিশন গঠন, আইন প্রণয়ন ও তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার দাবিও তোলা হয়েছে প্রস্তাবে। এতে আরো বলা হয়, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিলুপ্ত করা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণের প্রভাবমুক্ত করা, ন্যায়পাল নিয়োগ করা, গণমাধ্যমের ওপর সব নিবর্তনমূলক বাধা-নিষেধের অবসান ঘটানো, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক সব ধারা সংশোধন করা এবং গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অবসানের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতির অবসান করা। লুটপাটকারীদের পৃষ্ঠপোষকতার পরিবর্তে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে সংস্কার প্রস্তাবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংবিধান

৪ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ