Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অপার সম্ভাবনার গোচরা ও পোমরা

প্রাকৃতিক চিংড়ি প্রজনন ক্ষেত্র

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে নুরুল আবছার চৌধুরী : | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চিংড়ি প্রাকৃতিক প্রজননে অপার সম্ভাবনাময় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার গোচরা ও পোমরা খাল। কর্ণফুলী নদীর প্রশাখা গোচরা ও পোমরার কাউখালী খালে জোয়ার ভাটার প্রবাহের বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক চিংড়ি প্রজনন ক্ষেত্র।
কর্নফুলী নদীর জোয়ার ভাটায় মা চিংড়ি আনাগোনা করে খালে। প্রকৃতির নিয়মে মা চিংড়ি এ খালকে ব্যবহার করছে প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে। প্রতিবছর এখানে উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি পোনা। মৎস্য খাতে সৃষ্টি হয় অপার সম্ভাবনা। দু’টি খাল থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার চিংড়ি পোনা আহরণ করেন।
জেলেরা জানান, প্রতিবছর চিংড়ি প্রজনন মৌসুমী জেলেরা গোচরা ও কাউখালী খাল থেকে পোনা সংগ্রহ করে থাকে। এসব চিংড়ি মাছের পোনা উন্নত জাতের। পোনা সংগ্রহ বাজারজাত করায় জেলেরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।
হালদা বিশেষজ্ঞ ও নদনদী বিশ্লেষক সাংবাদিক মো. ইদ্রিছ তার গননদী সমর্থক গবেষনা প্রতিষ্ঠানে চিংড়ি প্রজননের বিষয়ে গবেষনা করেন। ২০০৪ সালে একটি প্রতিনিধি দল রাঙ্গুনিয়ার পোমরার কাউখালী ও গোচরা খাল পরিদর্শন করে। গবেষনা প্রতিবেদনে মা চিংড়ি মাছের পোনা ছাড়ার ইতিবৃত্ত বর্ণনা করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিদিষ্ট প্রজনন মাসে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কর্ণফুলী নদী হয়ে মা চিংড়ি পোনা ছাড়তে আসে মিঠা পানির খাল রাঙ্গুনিয়ার গোচরা ও কাউখালীতে। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি মা চিংড়ি লাখ লাখ পোনা ছাড়ার বিষয়ে উলে¬খ করে গোচরা ও কাউখালী খালকে চিংড়ি ভান্ডার বলে অবিহিত করেন এবং প্রসিদ্ধ হালদা নদীর ন্যায় রাঙ্গুনিয়ার গোচরা ও কাউখালী খালকেও বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণার দাবি তোলেন। প্রয়োজনীয় রক্ষনা-বেক্ষনের অভাবে প্রজনন খালের এ স্থান মা চিংড়িদের অভয়ারন্য হয়ে উঠেনি দীর্ঘ সময়েও।
প্রজনন মৌসুমে খালদ্বয়ে অবাধে ওৎ পেতে থাকা জেলেদের শিকার হচ্ছে মা চিংড়ি। ফলে রাঙ্গুনিয়ায় সম্ভাবনাময় মৎস্য ভান্ডারের সুফল আসছে না। মিঠা পানির চিংড়ি চাষাবাদ এবং সাফল্য লাভে বঞ্চিত হচ্ছে বহত্তর জনগোষ্ঠি। গণ নদী সমর্থকের গবেষনায় রাঙ্গুনিয়া চিংড়ি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কর্ণফুলী থেকে কাউখালী খালের প্রবেশদ্বারে বিদ্যমান সুইস গেট ভেঙে জোয়ারে চিংড়ি প্রবেশ পথকে অবাধ ও নির্বিঘ্ন করতে বলা হয়। খালদ্বয়ের এক বর্গকিলোমিটার জুড়ে মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশও করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে মা চিংড়ি পোনা ছাড়তে কাউখালী ও গোচরা খালে আসার রহস্য সম্পর্কে এক মৎস্য বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রজনন নির্বিঘ্ন এবং সুখকর করতে প্রাণীরা সব সময় উপযুক্ত স্থানের সন্ধান খোঁজে। প্রকৃতির গড়া নির্জন এবং মিঠা পানির গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে চিংড়িরা এ খালদ্বয়কে আবিষ্কার করে নিয়েছে দীর্ঘকাল থেকে, যা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অগোচরেই ছিল।
রাঙ্গুনিয়ায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে গোচরা ও কাউখালী খাল থেকে প্রতি বছর হাজার কোটি চিংড়ি পোনা সংগ্রহ সম্ভব। দেশে বিদেশে চিংড়ি পোনার চাহিদা সরবরাহ করে আর্থিক খাতে লাভবান হওয়া যাবে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। এ সম্ভাবনা রাঙ্গুনিয়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গোচরা ও পোমরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ