মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এ ছিল এক দুঃসাহসী জুয়া। ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেতা জুয়ান গুয়াইদো। তিনি কয়েক ডজন উর্দি পরিহিত সামরিক অফিসার ও রাজনৈতিক মিত্রদের সাথে একটি সামরিক ঘাঁটির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের আহŸান জানাচ্ছিলেন। তিন সপ্তাহ পর গ্রেফতার এড়াতে মাদুরো আধা ডজনের মত নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটোছুটি করছেন। সেদিন সামরিক ঘাঁটির পাশে যেসব মানুষ তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই ও তাকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের অনেকেই এখন জেলে বা আশ্রয় নিয়েছেন বিদেশী দূতাবাসগুলোতে। গুয়াইদো নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন যে সংসদের, সৈন্যরা তা বন্ধ করে দিয়েছে।
গুয়াইদো সমর্থকদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যেসব রাস্তা ভরে উঠত সেগুলো ক্রমেই জনশূন্য হয়ে পড়ছে। ভেঙে পড়া অর্থনীতির কারণে বিপর্যয় কবলিত, খাদ্যাভাব, গ্যাসোলিন ও ওষুধ সঙ্কটে দিশেহারা ভেনিজুয়েলানরা বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ফিরছে।
দুর্বল হয়ে পড়া ও ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক সঙ্কট দ্রæত নিরসনে অক্ষম হয়ে গুয়াইদো এখন মাদুরোর সাথে আলোচনায় বসার কথা বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছেন। উভয়পক্ষই নরওয়েতে আলোচনায় বসার জন্য প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেছে। এর আগে এ ছাড় গুয়াইদো প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এ পরিবর্তন বিরোধীদলের জন্য এক সন্ধিক্ষণ। গত জানুয়ারিতে তাদের আন্দোলন ব্যাপক গতি লাভ করে। বিপুল সমর্থন ও বিশাল জনতার উপস্থিতিতে তা আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করে। এখন সে গতি অবলুপ্ত হয়েছে। যা ক্ষমতার উপর মাদুরোর নিয়ন্ত্রণের সাক্ষ্য বহন করছে তা দেশ যতই রসাতলে যাক না কেন।
প্রকাশ্যে গুয়াইদো এখনো আশাবাদী ও অনড়। রাজধানীর চারপাশে আকস্মিক সমাবেশে সমর্থকদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাবার জন্য আহŸান জানিয়েছেন। তবে এক সাক্ষাতকারে তিনি স্বীকার করেন যে বিরোধীদের কর্মকান্ড পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ভয়াবহ নির্যাতন চলছে।
গত জানুারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ সদস্যদেশ মাদুরোর দ্বিতীয় বার নির্বাচনকে ভুয়া আখ্যায়িত করে ও গুয়াইদোকে দেশের বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকে গুয়াইদোকে সমর্থনকারী কয়েকটি দেশ খোলাখুলি ভাবে ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সমর্থন জানায়। যা চার মাস আগে মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জরুরি আন্তর্জাতিক আহŸান থেকে বড় রকম সরে আসা।
ভেনিজুয়েলা বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত এলিয়ট আব্রামস এপ্রিলে এক সাক্ষাতকারে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক পরিবর্তন বাস্তবায়ন করতে মাদুরোর প্রতি অনুগতরাসহ সকল ভেনিজুয়েলানকে অংশীদার করতে হবে। তারপর থেকে ট্রাম্প তার মনোযোগ ইরানের দিকে নিবদ্ধ করেছেন। তার ফলে বিরোধী দলের সদস্যদের মার্কিন সামরিক সমর্থন পাবার আশা আপাতত নেই।
দ্রæত সঙ্কট নিরসনের ব্যাপারে হতাশ গুয়াইদোর ইউরোপীয় মিত্ররা সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে একটি আলোচনা নিশ্চিত করতে তাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করেছেন। কারাকাস ভিত্তিক পোলস্টার ডেলফসের পরিচালক ফেলিক্স সেজাস বলেন, তারা ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রধান ফ্রন্টকে ক‚টনৈতিক আঙিনায় নিয়ে এসেছেন। উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা জানান যে গত সপ্তাহে দুই দিকের প্রতিনিধিরা সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে প্রাথমিক আলোচনার জন্য নরওয়ে সফর করেন।
গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার সরকারি খাতের শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় গুয়াইদো বলেন, ‘আলোচনায় রাজি হয়েছি। তবে আমরা ভুয়া আলোচনায় নিজেদের লিপ্ত করব না। অলোচনার উদ্দেশ্য হল মাদুরোর অপসারণ, একটি অস্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন।’
গুয়াইদো গত সপ্তাহে ভেনিজুয়েলা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কন্ট্যাক্ট গ্রæপের প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় ক‚টনীতিকদের সাথে সাক্ষাত করেন। যারা দেশটিতে নতুন নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছেন। এদিকে ভেনিজুয়েলার ব্যাপারে একটি অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছতে মাদুরোর প্রধান সমর্থকদের সাথে আলোচনার জন্য কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউবা সফর করেন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো যান।
গুয়াইদোর গণঅভ্যুত্থান চেষ্টায় মাদুরো নিজেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তার গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান সপক্ষ ত্যাগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ভেনিজুয়েলার গুরুত্বপূর্ণ তেলখাতকে ধ্বংস করছে। মাদুরো সরকারের জন্য আমদানি করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। জ¦ালানির অভাবে গত সপ্তাহে দেশ অচল হয়ে পড়ে।
বিরোধী নেতারা বলছেন, তারা মাদুরোর অপসারণের জন্য কাজ করে যাবেন। যে সব নিরাপদ স্থান ও দূতাবাসে তারা আশ্রয় নিয়েছেন সেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কাজ করে যাবেন। গুয়াইদোর পপুলার উইল পার্টির আইন প্রণেতা জুয়ান আন্ড্রেস মেজিয়া বলেন, গ্রেফতার হয়ে রাজনৈতিক শহীদ হওয়া লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য হেেচ্ছ একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা। আমরা যে কাজ শুরু করেছি তা যাতে থেমে না যায় তা নিশ্চিত করাই আমার কাজ। সরকার গত সপ্তাহে তার সংসদীয় সুরক্ষা তুলে নেয়ার প্রেক্ষিতে তিনি গোপন জীবন কাটাচ্ছেন।
গুয়াইদোর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ রাফায়েল দেল রোজারিও বলেন, লুকিয়ে থাকা বিরোধী নেতাদের জন্য তৃণমূলের সমর্থন সংগ্রহ করা কঠিন। তাই বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর মাদুরোকে অপসারণে তাদের লক্ষ্য অর্জন আরো দূরের ব্যাপার হয়ে উঠেছে। গ্রেফতারের ভয়ে দেল রোজারিও দেশ ছেড়ে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় চলে গেছেন। সঙ্গে তিনি কিছুই আনতে পারেননি। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমাকে লড়াই চালাতে হবে। আমি জানি মাদুরোর পতন হবে। কিন্তু আমাকে এখানে অনেক দিন থাকতে হবে।
তিনি বোগোটায় আসার পরদিন তার স্ত্রী অ্যাসট্রিড জুলেটা দুটি শিশু সন্তান নিয়ে সহানুভ‚তিশীল সৈন্যদের সাহায্যে একটি নদী পেরিয়ে তার কাছে হাজির হন। তারপর থেকে অন্যদের দানের উপর পরিবারটি বেঁচে আছে।
জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থার মতে, সঙ্কট ঘনীভ‚ত হওয়ার পর থেকে ৩৭ লাখ ভেনিজুয়েলান দেশ ছেড়েছে। তার মধ্যে ১৩ লাখ কলম্বিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। দেল রোজারিও বলেন, এখানে আমি তাদের মতই একজন ভেনিজুয়েলান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।